বৃষ্টিতে ভিজে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে একসঙ্গে ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায় করলেন লাখো মুসল্লি। কড়া নিরাপত্তায় অনুষ্ঠিত বিশাল এই ঈদের জামাতে দেশ ও জাতির মঙ্গল কামনায় মোনাজাত করেন তারা।
Advertisement
অবিরাম বৃষ্টিতে ঈদের নামাজ আদায়ের প্রতিজ্ঞায় অবিচল ছিলেন লাখো মুসল্লি। কেউ ছাতা, কেউ পলিথিন আবার কেউবা শূন্য হাতে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় করেন। বৈরি আবহাওয়ার পরও সকাল থেকেই মুসল্লিরা আসতে থাকেন ঐতিহাসিক এই শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে।
সকাল থেকে বৃষ্টির সঙ্গে পাল্লা দিয়েই যেন বাড়তে থাকে মুসল্লির সংখ্যা। মাঠের সবুজ ঘাসে এক সময় পানি জমে যায়। কিন্তু এতেও থামাতে পরেনি মুল্লির ঢল। ঈদ ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ভোর থেকে বৃষ্টি থাকলেও মুসল্লিরা দলে দলে আসতে থাকেন শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে বৃষ্টি ও মুসল্লির সংখ্যা। শোলাকিয়ায় ছিল ১৯২তম ঈদুল ফিতরের বড় জামাত। সকাল ১০টা ২৫মিনিটে জামাত শুরু হয়। শোলাকিয়া ঈদগাহের রীতি অনুযায়ী জামাত শুরুর ১৫ মিনিট, ৫ মিনিট ও সবশেষ এক মিনিট আগে বন্দুকের গুলি ছুড়ে চূড়ান্ত প্রস্তুতি জানান দেয়া হয়।
Advertisement
দূরের মুসল্লিদের জন্য ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে ছেড়ে আসে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন। নানা কষ্ট আর বিড়ম্বনা স্বীকার করেও দেশের সবচেয়ে বড় ঈদ জামাতে শরিক হতে পারায় মুসল্লিদের চোখে-মুখে ছিল আনন্দের ঝিলিক।
জামাতে ঈমামতি করেন মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ। নামাজ শেষে বাংলাদেশসহ মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করে দোয়া করা হয়। কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী, পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ, পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজসহ বিশিষ্টজনেরা এ মাঠে নামাজ আদায় করেন।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, ঈদ জামাতকে ঘিরে প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় নজিরবিহীন নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ২০১৬ সালে ঈদুল ফিতরের নামাজ শুরুর কিছুক্ষণ আগে ঈদগাহের কাছে পুলিশের একটি নিরাপত্তা চৌকিতে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটে। সে বিষয়টি মাথায় রেখে এবার নিরাপত্তা ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো হয়।
চার স্তরের নিরাপত্তায় এক হাজারেরও বেশি র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করে ৫ প্লাটুন বিজিবি। প্রতিটি প্রবেশ পথসহ মাঠের চারপাশে বসানো হয় ৫০টি ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। মাঠে প্রবেশের সময় মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের দেহ তল্লাশি করা হয়। মাঠ ও আশপাশের এলাকায় ছিলো ড্রোন ক্যামেরার নজরদারি।
Advertisement
১৮২৮ সালে ঈদের জামাতে এখানে সোয়া লাখ মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত। ঈশাখার ১৬তম বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ খাঁন ১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ঈদগাহটি ওয়াকফ করেন। এরও প্রায় দু’শ বছর আগে থেকে শোলাকিয়া মাঠে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
নূর মোহাম্মদ/এফএ/পিআর