জাতীয়

‘৭০০ পাঠাইছি, জামা-কাপড় হবে না, খাওন-দাওন চলব’

সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশ আজ ঈদ উদযাপন করছে। নানা জল্পনা-কল্পনা শেষে রাতে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির শেষ বৈঠকে ধর্মপ্রতিমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, বুধবারই ঈদ অনুষ্ঠিত হবে।

Advertisement

ঈদকে কেন্দ্র করে ইতোমধ্যে রাজধানী ছেড়েছেন লাখো মানুষ। রাজধানীর রাস্তা এখন অনেকটাই ফাঁকা। তবে মোড়ে মোড়ে দেখা মিলছে কিছু কিছু রিকশাচালকদের। রাজধানীর পান্থপথ মোড়েও মঙ্গলবার রাত পৌনে ৯টার দিকে বেশ কয়েকজন রিকশাচালকের দেখা মেলে। তাদের মধ্যে দু’জনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও অর্থের অভাবে তারা গ্রামে ঈদ করতে যাবেন না।

তাদের একজন আজাদুল ইসলাম। পঞ্চাশোর্ধ্ব আজাদুলের গ্রামের বাড়ি জয়পুরহাট সদরে। বলেন, ‘বাড়িতে যাইতে তো মুন চাইতাছেই। চাইলেও তো যাওয়া সম্ভব না। ৭০০-৮০০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়া যামু ক্যামনে?’

তিনি জানান, তার পাঁচ ছেলে-মেয়ে। এর মধ্যে দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এক ছেলে বিয়ে করে শ্বশুরবাড়ি থাকেন। বাকি ছোট এক ছেলে ও এক মেয়ে গ্রামের বাড়িতেই তাদের সঙ্গে থাকে।

Advertisement

রিকশা চালাতে ১৫ রোজায় ঢাকায় আসেন আজাদুল ইসলাম। বাড়িতে থাকা দুই ছেলে-মেয়ে ও তার স্ত্রীর সঙ্গে ঈদ করতে না পারলেও ঈদে তাদের খরচের জন্য গত সোমবার (৩ জুন) সাতশ টাকা পাঠিয়েছেন তিনি। তার বক্তব্য, ‘তাদের জামা-কাপড় হবে না। ঈদে খাওন-দাওন চলব।’

‘আমার শরীরে কুলায় না। জমা দেয়ার পর প্রতিদিন দুই থেকে তিনশ টাকা থাকে। ১৫ রোজায় ঢাকায় আসার পর প্রায় ঊনত্রিশ শ টাকা বাড়িতে পাঠাইছি’, যোগ করেন বৃদ্ধ আজাদুল।

সাভারের নামাবাজার এলাকা থেকে রিকশা চালাতে চালাতে রাজধানীর পান্থপথ এলাকায় চলে আসেন শাহেব আলী। রাত ১০টা পর্যন্ত রিকশা চালিয়ে বাসার উদ্দেশে রওনা দেয়ার চিন্তা তার।

শাহেব আলী জানান, স্ত্রী, ছেলে ও ছেলের স্ত্রীকে নিয়ে থাকেন সাভারে। ছেলে বিশেষ কিছু না করায় বুড়ো বয়সেও পরিবারের পুরো দায়িত্বই তার ওপর। এবার দিনাজপুরের বিরামপুরের গ্রামের বাড়িতে ঈদ করতে যাওয়ার মতো কোনো আর্থিক অবস্থা না থাকায় ঈদ সাভারেই করবেন তিনি।

Advertisement

তিনি বলেন, ‘বাবা, দুইজনের (তিনি ও তার স্ত্রী) যেতেই কমপক্ষে পনের শ টাকা করে লাগব। আসতে আবার লাগব পনের শ টাকা। দুইজনের তো কিছু হইলেও তো খরচ করা লাগবে। তাও তো দুইজনের চার হাজার টাকার নিচে হবে না। এত টাকা পামু কই?’

‘বয়স বেশি হয়ে গেছে। গাড়ি চালানো কষ্ট। গ্রামেও যেতে পারি না। না খেয়ে তো কিছু করা যাবে না। গরিব মানুষের খালি কষ্টই বাবা। ইচ্ছার কোনো দাম নাই’, যোগ করেন শাহেব আলী।

পিডি/এমআরএম