মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদকে কেন্দ্র করে মানুষের প্রত্যাশা আর প্রস্তুতির কমতি থাকে না। একের পর এক ঈদ আসে যায়, প্রবাসীদের ঈদ রয়ে যায় নিঃসঙ্গতায় ভরা।
Advertisement
ফজরের আজানের পর দল বেঁধে ছোটাছুটি করে গোসল সেরে মিষ্টি মুখে নতুন জামা-কাপড় পরে ঈদগাহ মাঠে যাওয়া প্রবাসীদের জন্য যেন শুধুই স্মৃতি। নামাজ পড়তে যাওয়ার সময় পাশের বাড়ির কেউ ডাক দিয়ে বলে না- সেমাই খেয়ে যাও। শত কর্মব্যস্ততার মাঝে ঈদের ছুটিতে লম্বা ঘুম অধিকাংশ প্রবাসীর ঈদের দিনে মূল কর্মসূচি।
‘ঈদের ঠিক আগের দিন থেকে মন খারাপ হতে শুরু করে। রাত পেরিয়ে সকালবেলা ঘুম ভাঙার পর আশপাশে যখন কাউকে খুঁজে পাওয়া যায় না, তখন নিজের অজান্তেই চোখে পানি চলে আসে। মনে পড়ে যায় চিরচেনা গ্রামে ঈদ উদযাপনের স্মৃতিগুলো।’
ঈদ মানেই আনন্দ ঈদ মানেই খুশি। এই কথাটি দেশে থাকতে খুব শুনতে পেতাম। ঈদের আগে কেনাকাটা, বন্ধুদের ইফতার করানো, কোনো শপিং সেন্টারে গিয়ে ঘুরে আসা। আর ঈদের দিন সকালে নামাজ পড়ে মা-বাবাকে সালাম করা। আত্মীয় স্বজনের বাসায় বেড়াতে যাওয়া। দেশে থাকতে এভাবেই কাটতো আমার ঈদ।
Advertisement
আবেগাপ্লুত হয়ে কথাগুলো বলছিলেন অস্ট্রিয়া প্রবাসী হাসান তামিম। বলেন, ‘যখন দেশে ছিলাম আমার ঈদ ছিল অন্যরকম। টিভি চ্যানেলে চাকরির সুবাদে অধিকাংশ ঈদে ছুটি থাকতো না। সকালে ঈদের নামাজ পড়ে মা-বাবা ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় দিয়ে বিকেলে অফিসে যেতাম। ঈদ উপলক্ষে অফিস ভিন্নরকম সাজে সজ্জিত হতো। সবার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করা বড় ভাইয়া আপুদের কাছ থেকে সালামি নেয়া এইভাবে ঈদের দিন পার করে দিতাম।’
‘বলতে গেলে আমার ঈদে একটি বিশেষ মাত্রা যোগ হতো সেটি হচ্ছে ঈদের দিন অফিস করা। খুব উপভোগ করতাম ঈদের দিনগুলো কারণ ওইদিন মা- বাবাকেও সময় দেয়া হতো এবং অফিসের সবার সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় হতো। বিগত দুই বছর ধরে ঈদ কি সেটাই ভুলে গিয়েছি। ঈদের দিন নামাজ পড়ার পর হয়তোবা বাসায় থাকি না হলে কাজে চলে যাই।’
‘পরিবার-পরিজন বন্ধুদের ছেড়ে প্রবাসে ঈদ আমার কাছে মূল্যহীন। কারণ ঈদের নামাজের পর প্রথম বাবা-মার সঙ্গে দেখা করে সালাম করতাম। কিন্তু প্রবাসে তা সম্ভব হয়ে উঠে না। প্রবাসে ঈদ মানে নামাজ পড়ে কাজে চলে যাওয়া। আসলে বলতে গেলে প্রবাসে আমরা সবাই রোবট হয়ে যাই। আবেগ অনুভূতি কিছুই কাজ করে না।’
তবে মনের মধ্যে একটি চাপা কষ্ট থেকে যায়। কেউ তা প্রকাশ করে না। সবার কষ্ট বিসর্জন দিয়ে ভাগ্য পরিবর্তনের আশায় সবার সঙ্গে হাসিমুখে ঈদ উদযাপন করে। কিন্তু পরিবার ছাড়া ঈদ করার যে চাপা কষ্ট সেটি আমরা প্রবাসীরা কখনো তা প্রকাশ করতে পারি না।
Advertisement
তামিম বলেন, ‘আমরা প্রবাসীরা শুধু দিতে জানি, নিতে জানি না। বছরের পর বছর এই কাজটি আমরা হাসিমুখে করে যাচ্ছি। দেশ থেকে স্বজনেরা একটু হাসিমুখে কথা বললেই আমরা ভুলে যাই প্রবাসের সব কষ্ট।’
বলেন, ‘অস্ট্রিয়ায় খুব বেশি বাংলাদেশি নেয়। ঈদের দিন কারো দেখা পাওয়া যায় না বললেই চলে। দূর-দূরান্ত থেকে কিছু প্রবাসী বন্ধু-বান্ধব আসে। তাদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেয়ার চেষ্টা করি। তখন বাড়ির কথা খুব মনে পড়ে।’
প্রথিবীতে প্রবাসের কষ্টটা একটু অন্য ধরনের। সব আছে, তবু যেন কিছুই নেই। প্রবাসী না হওয়া পর্যন্ত কেউ তাদের কষ্ট অনুভব করতে পারবে না। প্রবাসীদের কষ্টে বাড়তি মাত্রা যোগ করে ঈদ এবং বিশেষ উৎসবের দিনগুলো।
এমআরএম