ক্যাম্পাস

যবিপ্রবি ছাত্রলীগ সভাপতি-সম্পাদকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) ছাত্র নাইমুল ইসলাম রিয়াদ হত্যা মামলায় ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদকসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া হয়েছে। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন বিপুলসহ তিনজনকে অব্যাহতির সুপারিশ করা হয়েছে। সোমবার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক মোমতাজুল হক আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা যশোর সিআইডির পরিদর্শক মোমতাজুল হক জানান, মামলার চার্জশিটে ১১ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। অভিযুক্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শামীম হাসান, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি সুব্রত বিশ্বাস, যবিপ্রবির ছাত্র ফয়সাল তানভীর ও আজিজুল ইসলাম, যশোর শহরের পুরাতন কসবা এলাকার আজিজুল হক খোকনের ছেলে সজিবুর রহমান, কাজীপাড়া তেতুলতলা এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে রওশন ইকবাল শাহী, শহরের মিশনপাড়ার হাফিজ আহমেদের ছেলে সালসাবিল আহমেদ জিসান, পুরাতন কসবা কাজীপাড়া এলাকার মৃত আবদুল খালেকের ছেলে ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজল, ঝুমঝুমপুর চান্দের মোড়ের এসএম নাসির উদ্দিন ওরফে চান কসাইয়ের ছেলে এসএম জাবেদ উদ্দিন, শহরের খড়কি কামার দিঘিরপাড় এলাকার মতিয়ার রহমানের ছেলে কামরুজ্জামান ওরফে ডিকু ও কারবালা এলাকার মফিজুল ইসলামের ছেলে ভুট্টো।মামলার অভিযোগে জানা যায়, নাইমুল ইসলাম রিয়াদ যবিপ্রবির পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। সে সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের কমিটি গঠনকে কেন্দ্র করে দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে যায় ছাত্ররা। ওই ঘটনার জের ধরে ২০১৪ সালের ১৪ জুলাই দুপুর ২টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে রিয়াদ সন্ত্রাসী হামলার শিকার হন। পরে তাকে উদ্ধার করে যশোর ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে তার মৃত্যু হয়।এ ঘটনার পর ১৫ জুলাই রিয়াদের মামা রফিকুল ইসলাম রাজু বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত ২/৩ জনকে আসামি করে কোতোয়ালি মডেল থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। প্রথমে পুলিশ পরে সিআইডি পুলিশ মামলাটির তদন্ত করেন। মামলার চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্যাম্পাসে রাজনীতি নিষিদ্ধ ছিল। ২০১৪ সালের ১৬ মে কেন্দ্রীয় কমিটি সুব্রত বিশ্বাসকে সভাপতি ও শামীম হাসানকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণা করে। বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের কমিটিতে পদবঞ্চিতরা বিরোধিতা করতে থাকে। ফলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ দুটি গ্রুপে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নাইমুল ইসলাম রিয়াদ পদ বঞ্চিত গ্রুপের কর্মী ছিলেন। ১৩ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয় কমিটি ক্যাফেটরিয়ায় ইফতার মাহফিলের আয়োজন করে। ইফতার পার্টিতে ছাত্রলীগের পদবঞ্চিতরা অনুপস্থিত ছিল। এ নিয়ে কমিটির নেতাদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয়। এ ঘটনার জের ধরে বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে পদবঞ্চিত কয়েকজনকে মারপিট করা হয়। আর এ নিয়ে ক্যাম্পাসে ব্যাপক উত্তেজনা চলতে থাকে। ১৪ জুলাই দুপুরে নাইমুল ইসলাম রিয়াদ বিশ্ববিদ্যালয় ফটকে বন্ধুদের সঙ্গে দাঁড়িয়ে ছিল। এ সময় ডিকু, ভুট্ট, শাহী, জাবের, জিসান, সজীব শহরের দিক থেকে কয়েকটি মোটরসাইকেলে এসে তাদের ঘিরে ফেলে। এরপর সুব্রত ও শামীমের নির্দেশে শাহী ফাঁকাগুলি করলে শিক্ষার্থীরা ছুটাছুটি শুরু করে। এর মধ্যে সজীব তার হাতে থাকা ছুরি দিয়ে প্রথমে আঘাত করে। এরপর অন্যরা তাকে কুপিয়ে জখম করে ফেলে পালিয়ে যায়। হাসপাতালে নেয়ার পর রিয়াদের মৃত্যু হয়। মামলার তদন্ত শেষে আসামিদের দেয়া তথ্য ও সাক্ষীদের বক্তব্যে হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকায় ওই ১১ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তা। হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ও শহরের পুরাতন কসবা ঘোষপাড়া এলাকার জবেদ আলীর ছেলে আনোয়ার হোসেন বিপুল ও খুলনার বাবুখান রোড়ের হাফিজুর রহমানের দুই ছেলে মফিজুর রহমান ও মোস্তাক হোসনকে অব্যহতির সুপারিশ করা হয়েছে। চার্জশিটভুক্ত আজিজুল ইসলাম, সজীবুর রহমান ওরফে সজীব, রওশন ইকবাল শাহী, সালসাবিল আহমেদ জিসান, ইয়াসিন মোহাম্মদ কাজল, এসএম জাবেদ উদ্দিনকে পলাতক দেখানো হয়েছে।মিলন রহমান/এআরএ/আরআইপি

Advertisement