দেশজুড়ে

তাদের ঘরে নেই ঈদের আনন্দ

দু-একদিন পরই মুসলমানদের অন্যতম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর উদযাপিত হবে। তবে ঈদকে ঘিরে উপকূলীয় জেলেদের পরিবারে নেই কোনো আমেজ। ঈদের দিনটিতেও ভালো-মন্দ খাওয়ার সুযোগ হবে না তাদের। ছেলেমেয়েদের গায়েও উঠবে না নতুন জামা-কাপড়।

Advertisement

বাগেরহাট জেলার ২৭ হাজার জেলেসহ আড়তদার, পাইকার ও মাঠপর্যায়ে মাছ বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত ৫০ হাজারের বেশি জেলের পরিবারের প্রায়ই একই অবস্থা। এ অবস্থায় বাগেরহাটের জেলেরা দ্রুত নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়ে মাছ ধরার অনুমতি দেয়ার দাবি জানিয়েছেন।

বাগেরহাট জেলার ৯টি উপজেলার গরিব মানুষের একটি বড় অংশই মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করে। বাগেরহাটের নদীগুলোতে মাছ না থাকায় সাগরের মাছের ওপর নির্ভর করে চলে তাদের জীবন-জীবিকা। তাদের মাছ ধরার প্রধান ক্ষেত্র বঙ্গোপসাগর। ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরের অর্থনৈতিক অঞ্চলে মৎস্য বিভাগ থেকে সব ধরনের মাছ আহরণে নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছেন জেলেরা।

মোংলা উপজেলার জয়মনি এলাকার জেলে আব্দুল মালেক ফরাজী বলেন, এমনিতেই সংসারে অভাব, তার ওপর ঈদ। মাছ না ধরতে পারায় হাতে টাকা নেই। ঈদে ছেলে-মেয়ের মুখে কীভাবে এক মুঠো খাবার তুলে দেব সে চিন্তায় আছি।

Advertisement

শরণখোলা উপজেলার জেলে রফিকুল বলেন, মা-ইলিশের ডিম ছাড়ার মৌসুমে ২১ দিন সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধের নির্দেশ মেনে নিয়েছি। ঝাটকা ইলিশ সংরক্ষণের জন্য ছয় মাস ধরে ছোট জাল দিয়ে মাছ ধরা বন্ধ করা হয়েছে, তাও মেনে নিয়েছি। এরপর ইলিশের ভরা মৌসুমে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা থাকলে আমাদের অস্তিত্ব রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ছে। আমাদের জেলে পরিবারগুলোতে ঈদের আনন্দ নেই।

নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সাধারণ জেলেরা বেকার থাকায় এবং উপার্জনের অন্য কোনো পথ না পেয়ে বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন এসব জেলে।

কচুয়া উপজেলার ট্রলার মালিক আক্কাস আলী বলেন, বিভিন্ন ভাবে ধারদেনা করে চড়া সুদে লোন নিয়ে জেলেদের দাদন (অগ্রিম টাকা) দিয়েছি ট্রলার মালিক ও মৎস্য আড়তদাররা। ইলিশের ভরা মৌসুমে জেলেরা মাছ ধরতে না পারায় এখন আমরা পথে বসেছি। সুদের টাকা পরিশোধ করতে ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করতে হচ্ছে আমাদের।

উপকূলীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি শেখ ইদ্রিস আলী জানান, সাগরে মাছ ধরতে না পারায় বাগেরহাট জেলার ২৭ হাজার জেলেসহ আড়তদার, পাইকার ও মাঠপর্যায়ে মাছ বেচাকেনার সঙ্গে জড়িত ৫০ হাজারের বেশি পরিবারে এবার ঈদ আনন্দ বেদনায় পরিণত হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের বাংলাদেশ অংশে যখন মাছ ধরার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকে, তখন ভারতের জেলেরা নির্বিঘ্নে মাছ ধরছে। তাই ভারতের অংশে যখন নিষেধাজ্ঞা থাকে, একই সময় বাংলাদেশ অংশের নিষেধাজ্ঞার দাবি জানান তিনি। শওকত আলী বাবু/এএম/এমএস

Advertisement