ভ্রমণ

ঈদে ঘুরতে পারেন সিলেটের শতাধিক পর্যটন কেন্দ্রে

অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর দুটি পাতা একটি কুঁড়ির দেশ খ্যাত সিলেট। বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বে অবস্থিত এই প্রাচীন জনপদ পাহাড়-টিলা, চা-বাগান, দেশের একমাত্র সোয়াম ফরেস্ট, হাওর, বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মণ্ডিত। ঈদের এই ছুটিতে ঘুরে আসতে পারেন সিলেটের শতাধিক পর্যটনস্পট। কিছু সময় এসব পর্যটন এলাকায় কাটালে আপনার মন নিমিষেই ভালো হয়ে যাবে। সিলেটকে এজন্যই বলা হয় প্রকৃতিকন্যা।

Advertisement

প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও সিলেটের রয়েছে প্রসিদ্ধ ইতিহাস। সিলেটে বসবাসকারি বিভিন্ন আদিবাসীদের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতি। চা-বাগান, পাহাড়, ঝর্ণা সব মিলিয়ে নানা বৈচিত্রের সম্ভার এই সিলেট দেশের অন্যতম পর্যটন নগর। পবিত্র ঈদুল ফিতরকে কেন্দ্র করে সিলেট বিভাগের ৪ জেলার প্রায় শতাধিক পর্যটন স্পট পর্যটক বরণে এখন প্রস্তুত। প্রতি বছরের মতো আসছে ঈদেও এসব স্পটে পর্যটক-দর্শনার্থীদের ঢল নামবে বলে আশা করা হচ্ছে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের ছুটিতে মনকে সতেজ করে তুলতে ভ্রমণ-পিপাসুদের জন্য সিলেটের পর্যটন স্পটগুলোকে সাজানো হয়েছে নানা সাজে। তবে আবাসিক হোটেল, মোটেল, রেস্ট হাউস, গেস্ট হাউস এবং বিভিন্ন বাংলোর ব্যবসায়ীরা মনে করছেন এবারের ঈদে বৃষ্টির আশঙ্কা বেশি রয়েছে।

অতিবৃষ্টি হলে পর্যটকরা সিলেটে কম আসবেন এবং ব্যবসায় ভাটার আশঙ্কা রয়েছে। তবুও পর্যটন স্পটগুলোর সবকটি আবাসিক হোটেল, রিসোর্ট সেজেছে বর্ণিল সাজে। এদিকে পর্যটকদের সুরক্ষা ও পর্যটকদের ভ্রমণ আনন্দঘন করতে কোম্পানীগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর উপজেলা প্রশাসন, থানা ও ট্যুরিস্ট পুলিশের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে বিশেষ উদ্যোগ। এ ছাড়া প্রতিটি পর্যটন স্পটসমূহে পুলিশি টহল বাড়িয়ে নিরাপত্তাও জোরদার করা হয়েছে বলে প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

Advertisement

সিলেট জেলা : বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের একটি প্রশাসনিক অঞ্চল সিলেট। এটি সিলেট বিভাগীয় শহরের জেলা। সিলেট বাংলাদেশের উওর-পূর্বে অবস্থিত একটি প্রাচীন জনপদ। বনজ, খনিজ ও মৎস্য সম্পদে ভরপুর এবং প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ জেলা দেশের আধ্যাত্মিক রাজধানী হিসেবে খ্যাত। এখানে শায়িত আছেন ওলিকুল শিরোমনি হজরত শাহজালাল ও হজরত শাহপরান (রহ.)-সহ ৩৬০ জন আউলিয়া।

জৈন্তিয়া পাহাড়ের অপরূপ দৃশ্য, প্রকৃতিকন্যা জাফলং, বিছানাকান্দির মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ভোলাগঞ্জের সারি সারি সাদা পাথরের স্তুপ আর দেশের একমাত্র রূপওয়ে স্টেশন পর্যটকদের টেনে আনে বারবার। ঘুরে দেখতে পারেন এই অপরূপ শহর।

সিলেট জেলার পর্যটন ও দর্শনীয় স্থানসমূহের মধ্যে রয়েছে- মালনীছড়া চা-বাগান, হজরত শাহজালাল (র.) মাজার, হজরত শাহপারান (র.) মাজার, শ্রী চৈতন্য দেব মন্দির, জাফলং, সারিনদী, লালাখাল, তামাবিল, ভোলাগঞ্জ, লোভাছড়া চা-বাগান, লোভাছড়া পাথর কোয়ারি, ফেঞ্চুগঞ্জ সার কারখানা, রায়েরগাঁও হাওর, বিছনাকন্দি, পান্থুমাই জলপ্রপাত, লক্ষণছড়া, মিঠাপানির জলারবন রাতারগুল, জৈন্তা হিল রিসোর্ট, নাজিমগড় রিসোর্ট, নগরের সুরমা নদীর উপর লোহার নির্মিত সেতুর নাম কিন ব্রিজ, আলী আমজদের ঘড়ি, ঐতিহাসিক জিতু মিয়ার বাড়ি, মনিপুরি রাজবাড়ি, এমএজি ওসমানী জাদুঘর, হাসন রাজার মিউজিয়াম।

বিনোদন পার্কগুলোর মধ্যে রয়েছে- অ্যাডভেন্সার ওয়ার্ল্ড, এক্সলিয়রস পার্ক, ওসমানী শিশু পার্ক, ড্রিমল্যান্ড, খাদিম জাতীয় উদ্যান, টিলাগড় ইকুপার্ক ও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ কেন্দ্র ইত্যাদি।

Advertisement

সুনামগঞ্জ জেলা: বিপুল সম্ভাবনা ও প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের অপরূপ সাজে সেজে আছে দেশের উওর পূর্ব দিকে অবস্থিত এই সুনামগঞ্জ জেলা। নান্দনিক সৌন্দর্য আর শৈল্পের কারুকার্যে ভরপুর করে দিয়েছেন বিধাতা নিজেই। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের পাদদেশে অবস্থিত বিশাল জলরাশির ইউনেস্কো স্বীকৃত টাঙ্গুয়ার হাওর, বারেক টিলা, যাদুকাটা নদী, লাউড় রাজ্যের ধংসাবাশেষ, পনাতীর্থ।

নারায়নতলা, ডলুরা শহিদের কবর, শহীদ মিনার, সীমান্ত হাট, খ্রীস্টানদের মিশন, সীমান্ত ঘেষা, পাহাড়, নদী, ছাতকের টেংরা টিলা গ্যাস ফিল্ড, ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, বাঁশতলা, সুনামগঞ্জের মরমী কবি হাছন রাজার মিউজিয়াম, দিরাইয়ে বাউল সাধক পুরুষ শাহ আব্দুল করিম মিউজিয়াম, জগন্নাথপুরে রাধারমণ-এর কিছু নির্দশন। ঐতিহ্যবাহী জুবিলী স্কুল, জেলা সদরের মোহাম্মদ পুরে ফিসারিজ সৌন্দর্যে অপরিসীম।

মনমাতানো সৌন্দর্যে তাহিরপুরের টাঙ্গুয়ার হাওর, আর সীমান্ত ঘেঁষা পাহাড়ী মেঘ, বৃষ্টির প্রাকৃতিক মনোরম পরিবেশ বিরাজ করছে বারেক টিলায়, যা আপনাকে দিতে পারে নয়ানাবিরাম নৈসর্গিক, প্রাকৃতিক সৌন্দযের্র আত্মতৃপ্তি। জেলা সদরের প্রবেশ পথেই রয়েছে মরমী কবি হাছন রাজার তোরণ। যা আপনার ক্লান্ত মনটাকে একটু হলেও দোলা দেবে।

মৌলভীবাজার জেলা : বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক পরিবেশের কারণে প্রতিদিন বিভিন্ন পর্যটন স্পটে বিপুল সংখ্যক দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন ঘটে দুটি পাতা একটি কুঁড়ির সবুজে ভরা মায়াবী স্বপ্নপুরী জেলা মৌলভীবাজারে।

এ জেলার সবুজ চা-বাগানঘেরা উঁচু-নিচু টিলার সৌন্দর্য না গেলে বোঝা যাবে না। এ অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি সম্পূর্ণ আলাদা বৈশিষ্ট্যের। ছোট-বড় টিলার ফাঁকে ফাঁকে এখানে রয়েছে পাহাড়ি ছড়া। পাহাড়ি ভূমির ঘন সবুজ অরণ্যের বুক চিরে বয়ে যাওয়া এসব ছড়ার সৌন্দর্যই আলাদা। মাইলের পর মাইলজুড়ে বিস্তৃত বনাঞ্চলে নানা পশুপাখির বাস। এত পাহাড়, বনবনানী, পাখপাখালির কলকাকলি, ঝরনা, হ্রদ, জলপ্রপাত, চা-বাগান মৌলভীবাজার জেলাকে করেছে আকর্ষণীয়।

রাবার, লেবু, আনারসের আর চা-বাগানের সমারোহ ভুলিয়ে দেবে ক্লান্তি। মৌলভীবাজারের লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যান আর সিতেশবাবুর মিনি চিড়িয়াখানা এখন পর্যটকদের অন্যতম আকর্ষণ। কমলগঞ্জের মাধবপুর লেক, হামহাম জলপ্রপাত, বড়লেখার মাধবকুন্ড জলপ্রপাত প্রকৃতির আরেক বিস্ময়।

শ্রীমঙ্গলের বাংলাদেশ চা-গবেষণা ইনস্টিটিউট, বড়লেখার আতর ও আগর শিল্প, সাতগাঁও এর চা-কন্যা মনুম্যান্ট, শ্রীমঙ্গলের সুবিশাল হাইল-হাওরের নীল জলরাশি, পদ্ম আর বিভিন্ন প্রজাতির মাছের খেলা দেখার মতো। বাইক্কা বিল মৎস্য অভয়াশ্রম ও পাখির অভয়ারণ্যের টানে ছুটে আসছেন পাখি-প্রেমীরা। রাজনগর এর পাখিবাড়ি, পৃথিমপাশা এর নবাব বাড়ি, জুড়ী উপজেলায় কমলা বাগান, বর্ষিজোড়া ইকোপার্ক, রাজনগর উপজেলার কমলারাণীর দীঘি ইত্যাদি। এ ছাড়া দেশে মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানের জুড়ি মেলা ভার।

হবিগঞ্জ জেলা : বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সিলেট বিভাগের প্রাকৃতিক গ্যাস সমৃদ্ধ একটি জেলা হবিগঞ্জ। হবিগঞ্জ জেলার দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে রয়েছে- বিশ্বের সবচেয়ে বড়গ্রাম বানিয়াচং, বানিয়াচংয়ের কমলারানীর সাগর দীঘি, মহারত্ন জমিদার বাড়ি, দাড়া-গুটি ও বিতঙ্গল আখড়া, সাতছড়ি জাতীয় উদ্যান, শ্রীবাড়ি, চা-বাগান, চুনারুঘাটের রেমুকালেঙ্গা বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য পর্যটকদের জনপ্রিয় স্থান।

ছামির মাহমুদ/এমআরএম/জেআইএম