দেশজুড়ে

রশিতে বাঁধা মিতুর ভবিষ্যৎ

হতদরিদ্র পরিবারের সদস্য মিতু (৮)। জন্মের ছয় মাস পরই অসুস্থ হয়ে মা মারা যান। মা হারানোর পর বাবা স্বপন মিয়াও অন্যত্র বিয়ে করে আলাদা হয়ে যান। জন্মের পর থেকে শিশুটি এতই অভাগা ছিল যে দাদা-দাদিও তাকে ভরণপোষণ করতে অস্বীকৃতি জানান। তবে মানবিকতায় এগিয়ে এসেছিল শিশুটির এক স্বজন সম্পর্কে বড় মা (বাবার দাদি) জয়গন নেছা।

Advertisement

দীর্ঘদিন ধরে চরম দারিদ্র্যতার সঙ্গে লড়াই করে কোনো মতে শিশুটির ভরণপোষণের দায়িত্ব নিয়েছেন তিনি। তবে শিশুটি আলো বাতাসের সংস্পর্শে বেঁচে থাকলেও সে পায়নি কোনো মৌলিক চাহিদার ছোঁয়া। জন্মের পর থেকে শিশু মিতুর জীবন কাটছে কখনও অনাহারে কখনও অর্ধাহারে। সে যাতে অন্যত্র চলে যেতে না পারে এজন্য তার পায়ে রশি বেঁধে রাখা হয়েছে। মিতুর ভবিষ্যৎ যেন রশিতে বাঁধা।

গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার নিজ মাওনা গ্রামের জয়গন নেছার এক জীর্ণ কুটিরের সামনের খোলা আঙিনায় এখন অনেকটা অবহেলায় দিন কাটছে শিশুটির। শরীরে ভর করেছে নানা ধরনের অসুখ। প্রতিনিয়ত যেন শিশুটি মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।

শিশুটির বড়মা জয়গন নেছা বলেন, ‘আমি নিজেই চলতে পারি না। নিয়মিত খাবারও জোটে না। তারপরও সবাই যখন ছয় মাসের এ শিশুটিকে নিতে চাচ্ছিল না তখনই আমি তাকে নিয়ে আসি। কিন্তু তার যে চাহিদা তা তাকে দারিদ্র্যতার জন্য দিতে পারিনি, ঠিকমতো চিকিৎসা করাতে পারি না তার। আমি বৃদ্ধ মানুষ শিশুটির দেখাশোনা করতে পারি না, উন্মুক্ত অবস্থায় থাকলে যদি অন্যখানে চলে যায় তাই তাকে রশি দিয়ে বেঁধে রেখেছি।

Advertisement

তিনি জানান, শিশুটি জন্মের সময় থেকে দুই বছর পর্যন্ত সুস্থ ছিল। পরে ধীরে ধীরে তার মানসিক সমস্যা তৈরি হয়। এখন অনেকটা মানসিক ভারসাম্যহীনদের মতো আচরণ করে। অর্থের অভাবে তাকে ঠিকমতো চিকিৎসা দেয়া যায়নি। বিভিন্ন জায়গায় ঘুরেও নিজের অথবা এ শিশুটির জন্য কোনো সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করা যায়নি।

শিশুটি ধীরে ধীরে মানসিক ভারসাম্য হারানোর বিষয়ে ঢাকার শিশু হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ শাহজাহান জানান, শিশু জন্মের পর থেকে তার শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে নজর দিতে হয়। এ শিশুটিকে বেড়ে ওঠার সময় পায়ে রশিতে বেঁধে রাখায় মানসিক স্বাস্থ্য বৃদ্ধিতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা হয়েছে। বাস্তবে শিশুটির শারীরিক বৃদ্ধি ঘটলেও মানসিকভাবে বিকারগ্রস্ত হয়ে পড়ছে। এখনই এ শিশুটির পায়ের বাঁধনমুক্ত করে চিকিৎসা না দিলে সে পুরোপুরি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলবে। এ ছাড়া শিশুটি মারাও যেতে পারে।

এ বিষয়ে শ্রীপুরের বৃদ্ধা বন্ধু ফাউন্ডেশন নামের একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানের সদস্য মহিদুল আলম জানান, সামাজিকভাবে অনেকটা অবহেলার শিকার হতদরিদ্ররা। যারা তাদের খোঁজ নেয়ার কথা ছিল তারা তাদের খোঁজ নেয়নি। তবে রাষ্ট্রকে এসব সামাজিকভাবে অবহেলিত পরিবারের লোকজনের দায়িত্ব নিতে হবে। আমাদের আশা সরকার তাদের পাশে থাকবে।

শ্রীপুর উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মঞ্জুরুল ইসলাম বলেন, আমরা এ বিষয়ে অবগত নই। তবে শিশুটির জন্য কেউ যদি আমাদের কাছে আবেদন করে তাহলে আমরা তার জন্য চিকিৎসা বা সরকারি সহায়তার ব্যবস্থা করবো।

Advertisement

শিহাব খান/এমএএস/পিআর