জাতীয়

ট্রেনের ছাদ থেকে পিটিয়ে নামানো হলো তাদের

ঢাকা থেকে রংপুরগামী রংপুর এক্সপ্রেসের ছাদ থেকে ঈদযাত্রীদের পিটিয়ে নামিয়েছে রেলওয়ে পুলিশ। সোমবার (৩ জুন) রাজধানীর বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে এ দৃশ্য দেখা যায়।

Advertisement

বিমানবন্দর রেলওয়ে স্টেশনে সোমবার সকাল ৯টা ২৭ মিনিটে আসার কথা থাকলেও ট্রেনটি আসে বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে। কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকেই যাত্রীতে পূর্ণ হয়ে আসে ট্রেনটি। বিমানবন্দর স্টেশনে থামার সঙ্গে সঙ্গেই যাত্রীরা লাফিয়ে ট্রেনের ছাদে উঠতে থাকেন।

এমন অবস্থায় সেখানে দায়িত্বরত রেলওয়ে পুলিশ ও অন্যান্য সংস্থার নিরাপত্তাকর্মীরা যাত্রীদের পেটাতে শুরু করেন। তারপরও যাত্রীদের বড় একটা অংশ ট্রেনের ছাদের ওপর উঠে গেলে মই নিয়ে আসে রেলওয়ে পুলিশ। মই দিয়ে ছাদে উঠে যাত্রীদের পিটিয়ে নামিয়ে দেন নিরাপত্তাকর্মীরা। এ সময় অনেক যাত্রী আহত হন।

বেলা ১১টা ২৫ মিনিট থেকে দুপুর ১২টা ২ মিনিটে ছেড়ে যাওয়ার সময় পর্যন্ত বিক্ষিপ্তভাবে যাত্রীদের পিটাতে দেখা যায় সেখানে নিরাপত্তায় দায়িত্বরতদের।

Advertisement

ছাদে ওঠা যাত্রীদের একটা বড় অংশকে নামিয়ে ট্রেনে তুলে দেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। তারপরও অনেকে জায়গার অভাবে ট্রেনে উঠতে পারেননি।

ট্রেনের ছাদ থেকে রেলওয়ে পুলিশের পিটুনি খেয়ে পড়ে যান গাইবান্ধার বোনাপাড়ার যাত্রী জামাল। চল্লিশোর্ধ্ব এই ব্যক্তি জানান, রেলওয়ে পুলিশ তাকে পিটুনি দিয়েছে। পা ও কোমড়ের বিভিন্ন জায়গায় ব্যথা পেয়েছেন তিনি।

এতে স্টেশনে বসেই কাতরাচ্ছিলেন জামাল। হাটার মতো অবস্থা ছিল না তার। দুজনের কাঁধে ভর দিয়ে ও যাত্রীদের সহায়তায় একপর্যায়ে ট্রেনে ওঠেন তিনি। কিন্তু ভেতরে যেয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে না পেরে, ট্রেন থেকে নেমে পড়েন তিনি। এরপর আবার অন্য যাত্রীর সহায়তায় জানালা দিয়ে তিনি ট্রেনের ভেতরে ঢুকেন।

গাইবান্ধা যেতে রংপুর এক্সপ্রেসের ছাদে উঠেছিলেন মো. সুমন। রেলওয়ে পুলিশের পিটুনিতে নিচে নামতে বাধ্য হন তিনি। হাতের কনুইয়ের নিচে লাঠির বাড়িতে দাগ হয়ে যাওয়া অংশ দেখিয়ে সুমন বলেন, ‘ট্রেনে তো যাইবার পারলাম না। ছাদে উঠবার দিব না, ভালো কথা, মারলু ক্যা।'

Advertisement

ট্রেন ছাড়ার পর অল্প সময়ের জন্য আবার স্টেশনেই থেমেছিল। তখন আবার ছুটে যান তিনি, যদি ট্রেনে কোনোভাবে উঠা যায়। তবে তখনও উঠতে ব্যর্থ হন সুমন। তখন যাওয়ার সময় সুমন বলেন, ‘আমারে মারলু ক্যা, হেইডা তাগোরে জিগাইয়েন।’

সুমনের সঙ্গে থাকা মো. ইমরান হোসেন বলেন, ‘ট্রেনে তো যাইতে পারলাম না। দেহি এহন বাসে যাওন যায় কি না।’

গাইবান্ধার মোনাতলা যাওয়ার জন্য এই ট্রেনের ছাদে উঠেছিলেন মো. রশিদ। তিনিও রংপুর এক্সপ্রেসে করে যেতে পারেননি।

রশিদ বলেন, ‘মুরব্বিও মানল না। সবাইরে পিটাইয়া নামাইল।’

সাইফুল ইসলাম মিয়াজান বসেছিলেন বিমানবন্দর স্টেশনেই। বসে বসে দেখছিলেন যাত্রীদের ছাদ থেকে পিটিয়ে নামানোর দৃশ্য। তিনি বলেন, ‘উত্তরবঙ্গের গার্মেন্টে কাজ করা মানুষগুলা ট্রেনে যাওয়ার জন্য এখানে আসছে। তাদের তো যাওয়া লাগবো। ট্রেন না বাড়াইলে তো এইরহম পেডাপিডি চলতেই থাকব।’

আগের মতো সোমবারও উত্তরবঙ্গগামী ট্রেনগুলোতে শিডিউল বিপর্যয় দেখা যায়।

সোমবার বেলা ১১টা ২৫ মিনিটে বিমানবন্দর রেলওয়ের স্টেশনের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ৮টা ৩৫ মিনিটে নীলসাগর এক্সপ্রেস আসার কথা থাকলেও তখন পর্যন্ত ট্রেনটি ঢাকায়ই আসেনি। লালমনি স্পেশাল সকাল ৯টা ৪২ মিনিটে বিমানবন্দর স্টেশনে থাকার কথা থাকলেও তখনও ঢাকায় আসেনি ট্রেনটি।

এর আগের পঞ্চগড়গামী একতা এক্সপ্রেস ট্রেনটিও দেরিতে ছেড়ে যায়। একতা এক্সপ্রেস ট্রেনের ছাদে করে মানুষ গেলেও তাদের ছাদে উঠতে বাধা দেয়া হয়। তবে রংপুর এক্সপ্রেসের যাত্রীদের মতো একতা এক্সপ্রেসের যাত্রীদের বেধড়ক পেটায়নি বিমানবন্দর রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।

এ বিষয়ে স্টেশনের নিরাপত্তা পরিদর্শক মো. মজিবুর বলেন, ‘রংপুর এক্সপ্রেসটি ঢাকা থেকে সম্পূর্ণ সুন্দর অবস্থায় আসছে। রেলওয়ের মন্ত্রী মহোদয়ের নির্দেশনা আছে যে, ট্রেনের ছাদে কোনো যাত্রী যাবে না। ইঞ্জিনে কোনো যাত্রী যাবে না। রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা আছে, আমরা বাস্তবায়নের চেষ্টা করছি। আমরা সাধ্যমতো চেষ্টা করছি, যাতে ট্রেনের ছাদ, ইঞ্জিনে কোনো যাত্রী যেতে না পারে।'

তিনি আরও বলেন, ‘ছাদ থেকে পড়ে যাতে কোনো যাত্রী দুর্ঘটনার শিকার না হয়, কোনো প্রাণহানি না ঘটে, এ জন্যই ট্রেনের ছাদ থেকে লোকগুলোকে নামিয়ে দেয়া হয়।’

স্টেশন ম্যানেজার মরণচন্দ্র দাস জাগো নিউজকে বলেন, যারা ছাদে উঠেছিল তাদের নামিয়ে দেয়া হয়েছে। তবে পেটানোর বিষয়টি আমি জানি না।

পিডি/জেডএ/এমকেএইচ