আল্লাহ তাআলা বান্দাকে নেয়ামত দান করার জন্য উপলক্ষ খোঁজেন। যেন সে উপলক্ষকে কেন্দ্র করেই বান্দাকে দান করতে পারেন রহমত বরকত মাগফেরাত ও নাজাত।
Advertisement
পবিত্র রমজান ও রোজা যেমন একটি উপলক্ষ ঠিক তেমনি চরম দুশ্চিন্তা, সংকট ও আর্থিক অভাব-অনটন থেকে মুক্ত থাকতে রয়েছে একটি উপলক্ষ। দুনিয়া ও পরকালের কল্যাণ লাভে কুরআন-হাদিসে ঘোষিত সে উপলক্ষ হলো বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করা।
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইসতেগফার (তওবা) করবে, আল্লাহ ওই বান্দাকে তার সব সংকট থেকে উত্তরণের (মুক্তির) পথ বের করে দেবেন, সব দুশ্চিন্তা (পেরেশানি) মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিক-এর ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (আবু দাউদ, ইবনে মাজাহ)
আরও পড়ুন > তাহাজ্জুদ নামাজে যে সুফল লাভ করে মুমিন
Advertisement
কুরআনুল কারিমে আল্লাহ তাআলা ইসতেগফারের ফজিলত ঘোষণা করেছেন এভাবে-‘তোমরা তোমাদের পালনকর্তার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। তিনি অত্যন্ত ক্ষমাশীল। তিনি তোমাদের ওপর অজস্র বৃষ্টিধারা নাজিল করবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের জন্য (সবুজ শ্যামল) উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্য নদী-নালা প্রবাহিত করবেন।’ (সুরা নুহ : আয়াত ১০-১২)
আল্লাহ কাছে তাওবা-ইসতেগফার করলেই আল্লাহ তাআলা উল্লেখিত নেয়ামতে মানুষের জীবনকে ভরপুর করে দেবেন।
মানুষ সাধারণত গোনাহ বা অন্যায় করলেই আল্লাহর কাছে তাওবা-ইসতেগফার করে। কুরআন এবং হাদিসের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, শুধু গোনাহ থেকে মুক্তির জন্যই তাওবা-ইসতেগফার নয়। এটা এমন এক বড় আমল। যাতে রয়েছে দুনিয়া ও পরকালের সফলতা ও স্বচ্ছলতার মূলমন্ত্র।
যে ব্যক্তি তাওবা করবে-> আল্লাহ তাকে ক্ষমা দেবেন।> ফল-ফসল উৎপাদনে কল্যাণকর বৃষ্টি দান করবেন।> নিঃস্ব ব্যক্তিকে সম্পদ দান করবেন।> নিঃসন্তান ব্যক্তিকে সন্তান দান করবেন।> পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় বন-উদ্যানকে সবুজ শ্যামল করে দেবেন।> নদী-নালায় অধিক পরিমাণ পানি প্রবাহিত করবেন।> জীবনের সব সংকট থেকে মুক্তির পথ বের করে দেবেন।> দুঃশ্চিন্তা ও পেরেশানি দূর করে দেবেন।> সর্বোপরি এমন উৎস থেকে রিজিক দান করবেন, যে উৎস সম্পর্কে রিজিক লাভকারীর কোনো ধারণাই ছিল না।
Advertisement
মনে রাখতে হবেতাওবা ইসতেগফারে শুধু গোনাহ মাফ আর পরকালের চিন্তায় নয় বরং দুনিয়া কল্যাণ ও সুন্দর জীবন-যাপনে তাওবা-ইসতেগফারের বিকল্প নেই।
আসুন! কুরআন-হাদিসে ঘোষিত নেয়ামত লাভে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফার করি-১.اللَّهُمَّ إِنَّكَ عُفُوٌّ تُحِبُّ الْعَفْوَ فَاعْفُ عَنِّيউচ্চারণ : আল্লাহুম্মা ইন্নাকা আফুওয়ুন; তুহিব্বুল আফওয়া; ফাফু আন্নি।অর্থ : হে আল্লাহ! আপনি ক্ষমাশীল; ক্ষমা করতে ভালো বাসেন; অতএব আমাকে ক্ষমা করে দিন। (মুসনাদে আহমাদ, ইবনে মাজাহ, তিরমিজি, মিশকাত)
২.- اَسْتَغْفِرُوا اللهَ العَظِيْم اِنَّ اللهَ غَفُوْرُ الرَّحِيْمউচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম ইন্নাল্লাহা গাফুরুর রাহিম।অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, দয়ালু।
৩.- اَسْتَغْفِرُوا اللهَ العَظِيْم اّللَّذِى لَا اِلَهَ اِلَّا هُوَ الْحَىُّ الْقَيُّوْمُ وَ اَتُوْبُ اِلَيْهِউচ্চারণ : আসতাগফিরুল্লাহাল আজিম আল্লাজি লা ইলাহা ইল্লাহুয়াল হাইয়্যুল কাইয়্যুমু ওয়া আতুবু ইলাইহি।অর্থ : মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, যিনি এক ব্যতিত কোনো ইলাহ নেই। তিনি চিরঞ্জীব ও চিরস্থায়ী এবং তার দিকেই আমরা ফিরে যাবো।’
৪.- رَبِّ اغْفِرْ لِي وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيمُউচ্চারণ : রাব্বিগফিরলি ওয়া তুব্ আলাইয়্যা ইন্নাকা আংতাত তাওয়াবুর রাহিম।'অর্থ : হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা করে দিন, আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি অতিশয় তাওবাকবুলকারী, দয়াবান।'
৫. সায়্যিদুল ইসতেগফার- اللَّهُمَّ أَنْتَ رَبِّي لَا إِلَهَ إِلَّا أَنْتَ خَلَقْتَنِي وَأَنَا عَبْدُكَ وَأَنَا عَلَى عَهْدِكَ وَوَعْدِكَ مَا اسْتَطَعْتُ أَعُوذُ بِكَ مِنْ شَرِّ مَا صَنَعْتُ أَبُوءُ لَكَ بِنِعْمَتِكَ عَلَيَّ وَأَبُوءُ بِذَنْبِي فَاغْفِرْ لِي فَإِنَّهُ لَا يَغْفِرُ الذُّنُوبَ إِلَّا أَنْتَউচ্চারণ : ‘আল্লাহুম্মা আনতা রাব্বি লা ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্বতানি; ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আ’হদিকা ওয়া ওয়া’দিকা মাসতাত্বা’তু, আউজুবিকা মিন শাররি মা সানা’তু আবুউলাকা বিনি’মাতিকা আলাইয়া; ওয়া আবুউ বিজামবি ফাগফিরলি ফা ইন্নাহু লা ইয়াগফিরুজ জুনুবা ইল্লা আনতা।’
আরও পড়ুন > পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের রাকাআত সংখ্যা
অর্থ : ‘হে আল্লাহ! তুমি আমার প্রতিপালক, তুমি ছাড়া ইবাদতের যোগ্য কোনো উপাস্য নেই। তুমি আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তোমার বান্দা। আমি আমার সাধ্যমত তোমার প্রতিশ্রুতিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ রয়েছি। আমি আমার কৃতকর্মের অনিষ্টতা থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাই। আমার ওপর তোমার অনুগ্রহকে স্বীকার করছি এবং আমার পাপও স্বীকার করছি। অতএব তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও। নিশ্চয়ই তুমি ব্যতিত কোনো ক্ষমাকারী নেই।’
তাওবা-ইসতেগফার এমন এক ইবাদত ও আমল, যা মানুষ সব সময় পালন করবে। জীবনের এমন কোনো দিক বা সময় নেই, যে সময় তাওবা-ইসতেগফার করা যাবে না। বরং তাওবা-ইসতেগফারই হতে পারে সব সময় মানুষের জীবনের সার্বিক কল্যাণ ও উন্নতি লাভের একমাত্র উপায়।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে বেশি বেশি তাওবা-ইসতেগফারের মাধ্যমে দুনিয়া ও পরকালের যাবতীয় কল্যাণ ও নেয়ামত লাভের তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/জেআইএম