ঈদের লম্বা ছুটিতে বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্ট দিয়ে যাত্রী পারাপার বেড়েছে কয়েকগুণ। ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিতে গ্রামের বাড়িতে যাওয়ার পাশাপাশি অনেকেই পরিবার-পরিজন নিয়ে যাচ্ছেন ভারতে।
Advertisement
স্বজনদের সঙ্গে সাক্ষাৎ, চিকিৎসা, ব্যবসা, কেনাকাটা ও বেড়ানোর উদ্দেশে ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীদের যাতায়াত অন্য সময়ের চেয়ে এবার কয়েকগুণ বেড়েছে। ভিসা সহজলভ্যতা এবং খরচ কম পড়ায় এ সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
গত শুক্রবার সকাল থেকে বেনাপোল চেকপোস্টে ভারতগামী পাসপোর্টযাত্রীদের ভিড় লক্ষ্য করা যায়। চেকপোস্ট ইমিগ্রেশনে প্রবেশের আগে পুলিশের সহযোগিতায় লাইনে দাঁড়িয়ে সারিবদ্ধভাবে ভ্রমণকর কাটতে দেখা যায় তাদের। এরপর কাস্টমসের স্ক্যানিং শেষে পাসপোর্টযাত্রীরা লাইনে দাঁড়িয়ে সুশৃঙ্খলভাবে তাদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করেন।
সার্বিক নিরাপত্তা এবং কোনো রকম বিশৃঙ্খলা যাতে না হয় সেজন্য লাইনের মাঝে মাঝে পুলিশকে নজরদারিও করতে দেখা যায়।
Advertisement
রোববার সকালে চেকপোস্টে গিয়ে দেখা যায়, বেনাপোল আন্তর্জাতিক চেকপোস্টের আন্তর্জাতিক টার্মিনালের সামনে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়। যাত্রীদের পাসপোর্টের আনুষ্ঠানিকতা সারতে পুলিশ, আনসার ও বন্দরের নিরাপত্তাকর্মীদের রীতিমতো হিমশিম খেতে দেখা যায়। বেনাপোল চেকপোস্টে দ্রুততম সময়ের মধ্যে পাসপোর্টের কাজ সম্পন্ন করে ভারতীয় চেকপোস্টে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দীর্ঘ লাইনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকতে হয় তাদের।
ওপারের ইমিগ্রেশনের কাজ ধীরগতির কারণে যাত্রীদের এ দীর্ঘলাইন- এমন অভিযোগ অনেকের। ভারতীয় ইমিগ্রেশন থেকে ভারতীয় কাস্টমস, মেইন গেট, নোম্যান্সল্যান্ডে কয়েকটি গোলাকার লাইন পেরিয়ে আশপাশের মাঠে যেন তা ছাপিয়ে পড়ে। দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা, মা ও শিশুদের কস্টের যেন সীমা নেই। অনেক রোগীকে রাস্তার ওপরেই বসে থাকতে দেখা যায়। প্রচণ্ড রোদে এবং খোলা আকাশের নিচে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে দুর্ভোগে পড়েন কয়েক হাজার শিশু, নারী ও পুরুষ।
বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোল থেকে কলকাতার দূরত্ব মাত্র ৮৪ কিলোমিটার। অল্প সময়ে কম খরচে বেনাপোল পেট্রাপোল চেকপোস্ট দিয়ে যাওয়া যায় কলকাতা হয়ে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে। এ কারণে মানুষ এ পথে বেশি যাতায়াত করেন।
গত ১৭ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত যেসব যাত্রী আসা-যাওয়া করেছেন তার তুলনায় পরের সপ্তাহ অর্থাৎ ২৪ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত যাত্রীর আগমন ও বহির্গমন বেড়েছে। ১৭ মে থেকে ২৩ মে পর্যন্ত ভারত থেকে আগমন ছিল ১৫ হাজার ৪২০ যাত্রীর এবং বাংলাদেশ থেকে ভারতগামী ছিলেন ১৯ হাজার ২২৫ জন। ২৪ মে থেকে ২ জুন পর্যন্ত ভারত থেকে এসেছেন ২২ হাজার ৬২০ জন এবং বহির্গমন ৩০ হাজারের ওপরে।
Advertisement
রোববার সকালে বেনাপোল চেকপোস্ট ইমিগ্রেশন দিয়ে ভারতগামী যশোরের সাংবাদিক সাহাবুদ্দিন আলম বলেন, এবার ঈদের লম্বা ছুটিতে পরিবার-পরিজন নিয়ে ভারত যাচ্ছি। দেশে তো সবসময় ঈদ করা হয়। মেয়ে-নাতি-জামাইকে নিয়ে এবার দেশের বাইরে ঈদ করাসহ দর্শনীয় জায়গা ভ্রমণের জন্য ভারত যাচ্ছি।
ঢাকা থেকে আসা খালেদা পারভীন ও তার স্বামী আব্দুল জলিল বলেন, ঈদের আনন্দটা একটু অন্য রকম। এবার ঈদে একটু আগে থেকে ছুটি পাওয়ায় ভারতে যাচ্ছি ঈদ করতে। সেখানে আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করব।
একাধিক যাত্রী তাদের মতামত ব্যক্ত করে জাগো নিউজকে বলেন, এ বছর ঈদের লম্বা ছুটি পাওয়ায় ভারতের বিভিন্ন দর্শনীয় স্থান ঘোরার পাশাপাশি ঈদের আনন্দও উপভোগ করবেন।
ফরিদপুরের ইউসুফ আলম বন্ধুদের সঙ্গে ভারতে যাওয়ার উদ্দেশে ইমিগ্রেশন ভবনের সামনে অবস্থান করছিলেন। তিনি বলেন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি, ঘুরে বেড়ানোর তেমন সময় হয় না। এবারের ঈদে লম্বা ছুটি পাওয়ায় বন্ধুদের সঙ্গে ভারতে বেড়াতে যাচ্ছি। এছাড়া ভারতে কয়েকজন আত্মীয়ও রয়েছেন। এ সুযোগে তাদের সঙ্গে দেখা করা হবে, বেড়ানোও হবে।
রাজধানীর বাড্ডা এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলাম। শারীরিক অসুস্থতায় ভুগছেন। ভারতে গিয়ে ভালো ডাক্তার দেখাবেন। তিনি বলেন, কাজের ব্যস্ততার কারণে এতদিন সময় করে উঠতে পারেনি। লম্বা ছুটিতে ব্যস্ততা কম থাকায় পরিবার নিয়ে ভারতে চিকিৎসার জন্য যাচ্ছি। চিকিৎসা শেষে কয়েকটি দর্শনীয় স্থানও ঘুরব।
ইমিগ্রেশনে যাত্রীদের প্রচুর ভিড় থাকায় পাসপোর্টের কার্যাদি সম্পন্ন করতে আধাঘণ্টা অপেক্ষা করতে হয়েছে বলেও জানান তিনি।
বেনাপোল চেকপোস্টের ইমিগ্রেশন ওসি আবুল বাশার বলেন, ঈদের ছুটিতে যাত্রীর সংখ্যা বৃহস্পতিবার (৩০ মে) বিকেল থেকে বেশি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। শুক্র, শনি ও রোববার যাত্রীর চাপ অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যাত্রীদের সেবায় ইমিগ্রেশনে আমাদের লোকজন একটানা কাজ করে যাচ্ছেন। কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হবে না, আশা করি।
পাসপোর্টযাত্রীদের যাতে কোনো অসুবিধা না হয় সেজন্য ইমিগ্রেশনে নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, সেই সঙ্গে ইমগ্রেশন চত্বরে পুলিশের জনবলও বৃদ্ধি করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
মো. জামাল হোসেন/এমএআর/এসআর