বিশেষ প্রতিবেদন

বিজেপির এমন বিজয় বামপন্থীদেরই বড় ক্ষতি

সম্প্রতি পাশের দেশ ভারতের নির্বাচনের ফলাফল নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেছেন, ‘বিজেপির এমন বিজয়ে বামপন্থীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ভারতের এ নির্বাচন দক্ষিণ এশিয়ায় বামপন্থীদের নতুন করে চ্যালেঞ্জে ফেলেছে।’

Advertisement

আরও পড়ুন > ভারতের নির্বাচনে বাংলাদেশ সম্পর্কের হেরফের হবে না

কৈশোর থেকেই বামপন্থী রাজনীতিতে সক্রিয় মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি পূর্ব পাকিস্তান ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় তিনি ভারতে প্রশিক্ষণ নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে গেরিলা বাহিনীতে অংশ নেন। স্বাধীনতার পর ডাকসু’র ভিপি নির্বাচিত হন।

বাংলাদেশ ক্ষেত-মজুর সমিতির সভাপতির দায়িত্বও পালন করেন দীর্ঘদিন। সিপিবি’র সাধারণ সম্পাদক ছিলেন প্রায় দুই দশক। আন্দোলন করছেন মেহনতি মানুষের পক্ষে।

Advertisement

ভারতের নির্বাচন প্রসঙ্গ নিয়ে সম্প্রতি জাগো নিউজ’র সঙ্গে কথা বলেন এ রাজনীতিক। মন্তব্যে দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে বামপন্থীদের অবস্থানের বিষয়টিও গুরুত্ব পায়।

‘ভারতের নির্বাচন নিয়ে নানা আলোচনা। ফলাফল নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা’- এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারতের নির্বাচন ও ফলাফল প্রথমত, দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে পাশের দেশ ভারতে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন যেভাবে বিজয়ী হয়েছে, তাতে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার যথেষ্ট কারণ রয়েছে। কারণ এ নির্বাচনের ফলাফল দেশটিতে উগ্রতার পরিসর আরও বিস্তৃত ঘটাবে।’

‘ভারতে নরেন্দ্র মোদির সরকার কর্তৃত্ববাদের প্রশ্নে যে খবরদারি দেখাবে, তাতে বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার সার্বিক নিরাপত্তা বজায় রাখা যাবে কি-না, তা দেখার বিষয়।’

কেন এমন উদ্বেগ- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের এ কথা মনে রাখা উচিত যে, বিজেপি উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তি আরএসএস (রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ) দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। আরএসএস ভারতের জাতির জনক মহাত্মা গান্ধীর হত্যার মধ্য দিয়ে শক্তি প্রকাশ করে আসছে। বঙ্গবন্ধুর হত্যার ঘাতক-শক্তি যদি ক্ষমতায় আসত, তাহলে দেশের অবস্থা কী হতো? এ থেকেই অনুমান করা যায়, নরেন্দ্র মোদির ফের ক্ষমতায় আসা দেশের জন্য কতটুকু বিপজ্জনক ঘটনা!’

Advertisement

আরও পড়ুন > ভারত-আইএস প্রসঙ্গও আমার কাছে ধাঁধার মতো

‘পশ্চিমবঙ্গসহ কয়েকটি রাজ্যে বামপন্থীদের বেশ প্রভাব ছিল। এবারে শোচনীয় হার। আপনি বামপন্থী রাজনীতিক।’ এ বিষয়ে আপনার বিশ্লেষণ কী হবে- জানতে চাইলে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ভারত একটি সংসদীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থার দেশ। এ নির্বাচনে মোটেও তার প্রতিফলন ঘটেনি। অনেকটা রাষ্ট্রপতি শাসিত ব্যবস্থার মতো নির্বাচন হয়েছে। রাষ্ট্রপতি শাসিত দেশের মতো ষোলআনা সুযোগ গ্রহণ করে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় এসেছেন।’

‘শুধু বামপন্থীরা নয়, বিজেপির সাম্প্রদায়িক কৌশলে অন্য দলগুলোরও বিচ্ছুতি ঘটেছে। সাম্প্রদায়িক শক্তি এমন এক বিষবাষ্প, যা সাময়িকভাবে মানুষকে চরমভাবে বিভ্রান্ত করে। ১৯৪৭ সালেও আমরা এমন বিষবাষ্পের বিভ্রান্তি ছড়াতে দেখেছি মুসলিম লীগকে। যখন পূর্ব বাংলায় দ্বি-জাতিতত্ত্বের পক্ষে আমরা ৯৮ ভাগ সমর্থন দেখেছি। সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্পের পক্ষে এমন উদাহরণ ইতিহাসে বহু দেখেছি।’

গণতান্ত্রিক দেশ ভারতে উগ্র সাম্প্রদায়িকতার থাবা সেখানকার সবার জন্যই অশনি সংকেত। এমন একটি শক্তির নিরঙ্কুশ বিজয় মানে অন্য দলগুলোর বড় ক্ষতি হওয়া। বিশেষ করে বিজেপির এমন বিজয় বামপন্থীদেরই সবচেয়ে ক্ষতি এনেছে।’

‘তার মানে বামপন্থীরা একপ্রকার চ্যালেঞ্জেও পড়লো’- এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘বিজেপির এ বিজয় বামপন্থীদের নতুন চ্যালেঞ্জে ফেলেছে, তাতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে আমি মনে করি, বামপন্থীদের প্রগতি ও গণতন্ত্রের পথে হাঁটা কখনই সহজ ছিল না। আঘাত আসবেই। চরম সংকটের মধ্য দিয়ে সময় পার করছে পৃথিবী। তবে ভারতে আজ যে আঁধার নেমেছে, তা অচিরেই কেটে যাবে বলে বিশ্বাস করি।’

‘নরেন্দ্র মোদির ফের ক্ষমতায় আসা বাংলাদেশের জন্য কী বার্তা- এ প্রশ্নের জবাবে সিপিবি সভাপতি বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য বিপদ আরও বাড়ল এবং তা দুটি ক্ষেত্রে। প্রথমত, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক শক্তির বিস্তার ঘটছে বহু আগেই এবং তা রাজনৈতিকভাবে। ভারতে সাম্প্রদায়িক শক্তির প্রভাব বাড়লে বাংলাদেশ আরও সাম্প্রদায়িক হয়ে উঠবে। এখানেও কোনো না কোনো উগ্রবাদী সংগঠন পরিস্থিতি ঘোলাটে করার চেষ্টা করবে। এ কারণে আমাদের এখন অধিক সতর্ক থাকতে হবে।’

আরও পড়ুন > মোদির ফের ক্ষমতায় আসা হবে কলঙ্কজনক অধ্যায়

‘দ্বিতীয়ত, ভারত তার সাম্রাজ্যবাদের বিস্তার ঘটাতে আরও মরিয়া হবে। এ কারণেও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে। সতর্কতা শুধু রাষ্ট্রের ওপর নির্ভর করে হবে না, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে গণতান্ত্রিক বামবলয় আরও দৃঢ় করতে পারলে আসন্ন বিপদ থেকে আমরা রক্ষা পাব।’

এএসএস/এমএআর/জেআইএম