দেশজুড়ে

নিজের জন্য রাখা চেয়ারে বাবাকে বসালেন ভিপি নুর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের (ডাকসু) সহ-সভাপতি (ভিপি) নুরুল হক নুরকে একনজর দেখতে পটুয়াখালীতে হাজারো মানুষের ঢল নেমেছে। নুরকে দেখতে কেউ কেউ বাড়িঘরের ছাদে উঠেছেন।

Advertisement

ডাকসুর ভিপি হওয়ার পর প্রথমবারের মতো নিজের এলাকায় নুরুল হককে জমকালো আয়োজনে সংবর্ধনা দেয় এলাকাবাসী। রোববার সকাল থেকে অনুষ্ঠানস্থলের আশপাশে জড়ো হতে থাকে মানুষ। ধীরে ধীরে জনসমাগমে কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয় অনুষ্ঠানস্থল। একপর্যায়ে বাড়ির ছাদে এবং গাছে ওঠে মানুষ।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ডাকসুর ভিপি নুর। অনুষ্ঠানস্থলে এসেই নিজের জন্য রাখা সংরক্ষিত চেয়ারে বাবাকে বসিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তিনি। বাবাকে নিজের চেয়ারে বসিয়ে বাবার ডান পাশের চেয়ারে বসেন ভিপি নুর। বাবার প্রতি ছেলের এমন শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখে অভিভূত সবাই।

এরই মধ্যে নিজের চেয়ারে বাবাকে বসানোর একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। এর কিছুক্ষণ পরই ওই ভিডিও ভাইরাল হয়। বাবার প্রতি নুরের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা দেখে প্রশংসা করেছেন অনেকেই।

Advertisement

জানা যায়, পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলার কৃষক মো. ইদ্রিস হাওলাদারের ছেলে নুরুল হক নুর। তিন ভাই ও পাঁচ বোনের মধ্যে নুর দ্বিতীয়। এত বড় সংসারের ঘানি টানতে নুরের বাবা ইদ্রিস হাওলাদার কৃষিকাজের পাশাপাশি উপজেলার চরবিশ্বাস ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডে একটি বাজারে চায়ের দোকান দিয়েছেন। এ দোকান দিয়েই সংসার চালান নুরের বাবা।

পটুয়াখালীর চরবিশ্বাস ইউনিয়নে শৈশব কেটেছে নুরের। সেখানের চরবিশ্বাস জনতা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সপ্তম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন নুর। এরপর ভর্তি হন গাজীপুরের কালিয়াকৈরের একটি স্কুলে। সেখান থেকে এসএসসি এবং উত্তরা মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্য বিভাগে ভর্তি হন।

রোববার প্রথমবারের মতো নিজের এলাকায় জমকালো আয়োজনে নুরকে সংবর্ধনা দেয়া হয়। নুরকে দেখতে সকাল থেকে মানুষ আসতে থাকে অনুষ্ঠান স্থলে। একপর্যায়ে সংবর্ধনা অনুষ্ঠান হয় বিশাল সমাবেশ।

সকাল ১০টায় এলাকাবাসীর আয়োজনে গণসংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নুর। তিনি বলেন, আজ কৃষকের পাশে আওয়ামী লীগ কিংবা বিএনপি কেউ দাঁড়াচ্ছে না। কৃষক ধানের ন্যায্যমূল্য পাচ্ছেন না। ফলে এখন কৃষিকাজ ছেড়ে দিতে চাচ্ছেন কৃষক।

Advertisement

তিনি বলেন, মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালা জীবনের মায়া ত্যাগ করে মুক্তিযুদ্ধ করেছিল। কিন্তু আমাদের দেশ কি এখনো স্বাধীন হয়েছে? ব্ঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, আমি স্বাধীনতার পর যে চোর বাটপার পেয়েছি, এরা সাধারণ মানুষের ধন সম্পদ লুটে খেতে চায়। ১৯৭২ সালে ব্ঙ্গবন্ধু এই কথা বলেছিলেন। কিন্তু আজ বঙ্গবন্ধুর সেই কথা বাস্তব। সাধারণ মানুষের ধন সম্পদ লুটেপুটে খাওয়ার গতি বেড়েছে দ্বিগুণ।

নুর বলেন, সরকার থেকে কৃষকদের জন্য সার, বীজ, টাকা, সহজ শর্তে কৃষিঋণ আসে। এগুলো কী আপনারা সবাই ঠিকমতো পান? থানায় মামলা করতে টাকা লাগে, অন্যায়ের বিচার চাইতে নেতাদের কাছে গেলে টাকা ছাড়া সমাধান হয় না। আজকে আমাদের সমাজ দুর্নীতি আর অনিয়মের চরম শিখরে পৌঁছে গেছে।

নুরুল হক নুর বলেন, এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে জাগতে হবে, সমাজ ও রাষ্ট্রের বৈষম্য নিয়ে কথা বলতে হবে। কারণ সাধারণ মানুষ ঐক্যবদ্ধ হলে আওয়ামী লীগ আর বিএনপির এমন ভাব থাকবে না।

এর আগে সকালে ঢাকা থেকে লঞ্চযোগে পটুয়াখালীর গলাচিপার চরকাজল লঞ্চ টার্মিনালে পৌঁছলে এলাকাবাসী নুরকে ফুলেল শুভেচ্ছা দিয়ে বরণ করে নেয়। সেখান থেকে মোটরসাইকেল শোডাউনের মাধ্যমে নিজ এলাকা চরবিশ্বাসে পৌঁছান তিনি। পরে চরবিশ্বাস বাজারে এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে তাকে গণসংবর্ধনা দেয়া হয়।

সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান মো. রাজা মিয়ার সভাপতিত্বে সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন নুরের বাবা মো. ইদ্রিস হাওলাদার, তার সফরসঙ্গী ঢাকা কলেজের ছাত্র মো. রাকিবুল ইসলাম, মো. জাহিদ হোসেন ও বাঙলা কলেজের ছাত্র মো. রিয়াদ হোসেন।

মুহিবুল্লাহ চৌধুরী/এএম/পিআর