ভৈরবে কিশোর ফারদিন আলম রূপক (১৬) হত্যা মামলার এজাহারভুক্ত আরও দুই আসামিকে গ্রেফতার করেছে র্যাবের সদস্যরা। শনিবার সকালে ভৈরবপুর দক্ষিণপাড়া এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতারের পর পুলিশে সোপর্দ করা হয়।
Advertisement
তারা হলেন দক্ষিণপাড়া এলাকার আবুবকর সিদ্দিকের ছেলে শাহ সুফিয়ান (৩১) ও শাহজাহান পাটোয়ারীর ছেলে ইয়ারফাত পাটোয়ারী (৩২)।
গত বৃহস্পতিবার রাতে হত্যার ঘটনার পর রেজুয়ান কবির খান মাহিন, রবিউল আওয়াল রাব্বি ও আরাফাত পাটোয়ারী পিয়ালকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশ। এদের তিনজনকে শনিবার সকালে কিশোরগঞ্জ আদালতে চালান দেয়া হয়। বিকেলে আদালতে হত্যার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন তারা। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশের এসআই আমজাদ হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে কিশোর রূপক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে শনিবার বিকেল ৪টায় ভৈরবের ব্যবসায়ীরা বাজারের টিনপট্টিতে এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ মিছিল করেছেন। এতে প্রায় দুশ ব্যবসায়ী অংশগ্রহণ করেন। তারা নিষ্ঠুর এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন।
Advertisement
নিহত রূপকের বাবার নাম নূরে আলম বিপ্লব। ভৈরব বাজার টিনপট্টিতে থাকেন তিনি। পেশায় রড ও সিমেন্ট ব্যবসায়ী নূরে আলম বিপ্লব। কিশোর রূপক ভৈরব কেবি হাইস্কুল থেকে এবার এসএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে পাস করেছিল। রূপকসহ তিন বন্ধু এক সঙ্গে লেখাপড়া করত এবং এক সঙ্গে এসএসসি পাস করেছিল।
নিহত রূপকের মরদেহ শনিবার কিশোরগঞ্জে ময়নাতদন্তের পর ভৈরবে আনা হয়। পরে জানাজা শেষে গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর রায়পুরা থানার গৌরীপুর গ্রামে তাকে দাফন করা হয়।
এর আগে শনিবার রাতে পাঁচজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত তিনজনকে আসামি করে আটজনের বিরুদ্ধে বাদী হয়ে ভৈরব থানায় হত্যা মামলা করেন রূপকের বাবা।
এ ঘটনার খবর পেয়ে শুক্রবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
Advertisement
এরই মধ্যে গ্রেফতারকৃত রূপকের তিন বন্ধুকে আদালতে হাজির করা হয়। কিশোরগঞ্জের জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশিকুর রহমানের আদালতে শনিবার বিকেলে তিন বন্ধুর জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়।
রূপক হত্যার দায় স্বীকার করে মামলার প্রধান আসামি রেজুয়ান কবির জানায়, রূপক আমাদের বন্ধু ছিল। তার বাবার অনেক টাকা আছে ভেবে আমরা তাকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের পরিকল্পনা করি।
পরিকল্পনা অনুযায়ী গত বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৮টায় আমি তাকে মোবাইলে ফোন করে রবিউলের বাসায় আসতে বলি। ফোন পেয়ে রূপক আসলে তাকে আমরা ছাদে নিয়ে যাই।
এ সময় রূপকের সন্দেহ হলে তার গলায় রশি পেঁচিয়ে দেই আমরা। এতে সে অজ্ঞান হয়ে যায়। তখন আমরা তিন বন্ধু ভয় পেয়ে যাই। তার বাবা ঘটনা জানলে আমাদেরকে কঠোর শাস্তি দেবে ভেবে ছুরি দিয়ে তার গলা কেটে ফেলি। এ সময় রাব্বি ও পিয়াল তাকে ধরে রাখে। মৃত্যু নিশ্চিত করে তিনজন মিলে তার মরদেহ বস্তায় ভরে ছাদে রাখি। এরপর আমরা তিনজন যার যার বাসায় চলে যাই।
শুক্রবার সকালে রূপকের বাবা আমাকে জিজ্ঞাসা করলে বলি তার খবর জানি না। এরপর রাব্বিকে তার চাচা ধরে পিটুনি দিলে হত্যার ঘটনা বলে দেয়। তখন আমি জানতাম না রাব্বি সব ঘটনা বলে দিয়েছে। তারপর সকালে রাব্বি আমাকে ফোন দিলে তার বাসায় যাওয়ার পর পুলিশ আমাদের গ্রেফতার করে থানায় নিয়ে যায়।
এদিকে, রবিউল আওয়াল রাব্বি ও আরাফাত পাটোয়ারী পিয়াল হত্যার ঘটনা স্বীকার করে একই জবানবন্দি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা। জবানবন্দিতে রেজুয়ান মাহিনের কথার সঙ্গে দুইজনের কথা মিল রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ বলেন, ঘটনাটি খুবই নিষ্ঠুর ও মর্মান্তিক। তিন বন্ধু মুক্তিপণ আদায়ে ব্যর্থ হয়ে রূপককে হত্যা করেছে। আমি তাদের তিনজনকে জিজ্ঞাসা করেছি। তারা হত্যার কথা আমার কাছে স্বীকার করেছে। তিনজনের কথায় মিল রয়েছে। ঘটনা তদন্তের পর অপরাধীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে।
আসাদুজ্জামান ফারুক/এএম/এমএস