আধুনিক নেশা দ্রব্য ইয়াবা বিস্তারের ডন বলে খ্যাত কক্সবাজারের টেকনাফের সাইফুল ইসলাম ওরফে হাজী সাইফুল করিম (এসকে) পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন শুক্রবার ভোরে। দেশব্যাপী ইয়াবা সাম্রাজ্য সৃষ্টির পর দীর্ঘ একযুগেরও বেশি সময় ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকা আলোচিত ইয়াবা ডন সাইফুল করিম হঠাৎ কুপোকাত হওয়ায় তাকে নিয়ে মানুষের কৌতূহলের শেষ নেই।
Advertisement
কীভাবে ইয়াবার সঙ্গে তার সম্পর্ক, অতিঅল্প সময়ে বিশাল বিত্তবৈভবের ভান্ডার এসব জানতে বিভিন্ন জন গণমাধ্যমে চোখ বোলাচ্ছেন। জানার চেষ্টা করছেন তার অজানা সব তথ্য। এসবের পাশাপাশি ইয়াবার উপর ভর করে নামে-বেনামে গড়া হাজার কোটি টাকার সম্পদ তার কী কাজে এসেছে এসব নিয়েও চুলচেরা বিশ্লেষণ চালাচ্ছেন কৌতূহলী লোকজন। নানাজন নানা মন্তব্য লিখে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করছেন নিজের অনুভূতিও।
তার বিষয়টি আলোচনায় বেরিয়ে আসছে তার সাম্রাজ্য নির্বিঘ্ন করতে আইনশৃংখলা বাহিনীর বড় বড় কর্মকর্তা, রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক থেকে শুরু করে নানা পেশার ব্যক্তিদের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কথাও। অপকর্মের জন্য নিজে শাস্তি পেলেও সুবিধার বিনিময়ে তাকে সহযোগিতা করা ‘সেফ গার্ডরা’ কী শাস্তি পাচ্ছেন সেদিকে নজর রাখছে কৌতূহলী চোখ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কক্সবাজারের টেকনাফ উপজেলার সদর ইউনিয়নের শিলবুনিয়া পাড়ার মোহাম্মদ হানিফ ওরফে হানিফ ডাক্তারের ছেলে সাইফুল করিম। পল্লী চিকিৎসক বাবার সংসারে ৬ ভাই ২ বোনের মাঝে সাইফুল করিম মেজ ছেলে। ১৯৯৪ সালের দিকে স্থানীয় উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়ার সময় টেকনাফ হাই স্কুলের সামনে বাবার ফার্মেসিতে বসে সহায়তা করতেন সাইফুল।
Advertisement
১৯৯৬ সালের দিকে এসএসসি পাসের পর উচ্চ শিক্ষার আশায় চলে যান চট্টগ্রাম। চট্টগ্রাম মহসিন কলেজে পড়াকালীন ১৯৯৮ সালের দিকে চট্টগ্রাম নগরীর খাতুনগঞ্জ এলাকায় টেকনাফের বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের পণ্য বেচা-কেনায় সহায়তা করে খরচ যোগাতেন তিনি। খাতুনগঞ্জের বাণিজ্যিক প্রসারতা তার ভেতর বাসা গেড়ে যাওয়ায় অভাব-অনটনে তাকে বেশি দিন থাকতে হয়নি। ক্ষুদ্র ব্যবসার পাশাপাশি ধীরে ধীরে ইয়াবা কারবারে জড়িয়ে দেড় যুগে হয়ে ওঠেন দেশের শীর্ষ ইয়াবা কারবারি।
উত্থান কাহিনি
মিয়ানমারের আকিয়াব জেলার মংডু থানায় রয়েছে তার দাদার বাড়ি। সে সুবাদে মংডু এলাকার ইয়াবা ডন খ্যাত মিয়ানমারের মোস্ট ওয়ান্টেড ‘মগা সুইবিন’ নামক এক আন্তর্জাতিক ইয়াবা কারবারির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে ওঠে সাইফুল করিমের। তার পৃষ্ঠপোষকতায় ২০০০ সালের কাছাকাছি সময়ে টেকনাফ স্থলবন্দরে ‘এসকে ইন্টারন্যাশনাল’ নামে আমদানিকারক ও সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসা শুরু করে সাইফুল। সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীরা মিয়ানমার থেকে বেশিরভাগ কাঠ আমদানি করতেন। কাঠের বিশাল চালানের আড়ালে ইয়াবার প্রথম চালান বাংলাদেশে নিয়ে আসেন সাইফুল। ওই সময় ইয়াবা সম্পর্কে আইনশৃংখলা বাহিনীরও তেমন ধারণা ছিল না। ফলে বিনা বাধায় দেশময় ছড়িয়ে যায় ইয়াবার কারবার। খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন মাফিয়া সাইফুল।
২০০১ সালে সরকারের পালাবদল হয়। চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এলে ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে রাখতে টেকনাফের বিএনপি নেতা আব্দুল্লাহর সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তার বোনকে বিয়ে করেন সাইফুল। ফলে আগের মতোই টেকনাফ স্থলবন্দর তার নিয়ন্ত্রণে চলে। প্রভাবশালী বিএনপি নেতা আবদুল্লাহর ভগ্নিপতি হিসেবে আধিপত্য কাজে লাগিয়ে মিয়ানমার থেকে পণ্য অমদানির আড়ালে বিনাবাধায় ইয়াবার চালান আনেন তিনি।
Advertisement
সরকারের সঙ্গে চলা
চারদলীয় জোটের মেয়াদান্তে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ও পরবর্তীতে ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে নিজেকে সরকারের সঙ্গে চালানোর পদ্ধতি আবিষ্কার করেন সাইফুল। দেশের আলোচিত-সমালোচিত উখিয়া-টেকনাফের সাবেক সাংসদ আব্দুর রহমান বদির সঙ্গে সখ্যতা গড়ে তোলেন তিনি। সরকারি দলের প্রভাবশালী এমপি বদির পৃষ্ঠপোষকতায় আগের নিয়মে ইয়াবার চালান আনা অব্যহত থাকলেও কেউ টু শব্দ করেনি।
সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায় দিন দিন লাভের মুখ দেখে সাইফুল বিত্তবৈভবের মালিক হচ্ছে বলে প্রচার পায়। সেসময় বদির নির্দেশে সাইফুল টেকনাফ উখিয়ার বিভিন্ন এলাকায় টন টন চালসহ নানা প্রয়োজনীয় পণ্য সাহায্য হিসেবে দিয়েছেন। সুবিধার আশায় এ সময়ে আইনশৃংখলা বাহিনীর কিছু অসাধু কর্মকর্তা ও রাজনীতিবিদরাও সাইফুল করিমকে কাছে টেনে নিয়ে সহযোহিগতা দেন। অভিযোগ রয়েছে এসব কারণে স্থল ও নৌপথে পাচার হওয়া সাইফুলের ইয়াবার চালান আইনশৃংখলা বাহিনীর কোনো সংস্থা আটকের সাহস পেত না।
এভাবেই সেসময় থেকে প্রতিবছর সেরা করদাতা হিসেবে বাণিজ্যিক ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির (সিআইপি) মর্যাদা পান সাইফুল করিম। এরপর থেকে দেশে-বিদেশে তার অবাধ যাতায়াত শুরু হয়। বাড়ে বাণিজ্যিক প্রসারতা।
ইয়াবা চালান আসত যেভাবে
টেকনাফ স্থলবন্দর দিয়ে মিয়ানমার থেকে কাঠ আমদানির আড়ালে ইয়াবার চালান আসার বিষয়টি ধীরে ধীরে প্রকাশ হতে শুরু করে। তখন রুট পরিবর্তন করে সাগরপথে মাছ ধরার ট্রলারে ইয়াবার চালান আনার প্রচলন চালু করে হাজী সাইফুল সিন্ডিকেট। ওইসব ইয়াবার চালান খালাস করা হতো চট্টগ্রামের ফিশারিঘাটে। শুরু থেকে ইয়াবা তার নিয়ন্ত্রণে আসলেও ২০১০ থেকে ২০১৫ সাল সময়ে বেশি পরিমাণ ইয়াবার চালান আনেন সাইফুল করিম।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কিছু কর্মকর্তা নিরাপত্তা দিয়ে হাজী সাইফুলের ইয়াবার চালান গন্তব্যে পৌঁছাতে সহযোগিতা দিয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। একের পর এক চালান সফলভাবে পৌঁছাতে সক্ষম হওয়ায় মিয়ানমারের ইয়াবা উৎপাদনকারিদের কাছে বিশ্বস্ত হয়ে ওঠে এসকে। এই এসকে নামেই সাইফুল করিম মিয়ানমারসহ সারা দেশে মাদক পার্টনারদের কাছে পরিচিত। আর এসব কারণে মিয়ানমারে স্থাপিত ৩৮টি ইয়াবা কারখানায় উৎপাদিত ইয়াবা বিক্রির বাংলাদেশের একমাত্র এজেন্টে পরিণত হন এসকে।
অন্যকেউ ইয়াবার চালান আনলেও টাকা উসুলের জিম্মাদার হতেন এস কে। এ জন্য মিয়ানমারের ওসব ফ্যাক্টরি থেকে চালান আসত হাজি সাইফুলের নামে। কোটি কোটি টাকার সম্পদ ও অঢেল টাকা জমানো ছাড়াও ইয়াবা ব্যবসার সুবিধার্থে হাজি সাইফুল মিয়ানমার-বাংলাদেশ চলাচলের জন্য একাধিক জাহাজ কিনেছেন বলেও প্রচার আছে।
চট্টগ্রামে ইয়াবা সাম্রাজ্য বিস্তারে সাইফুল নিউমার্কেট ও রিয়াজউদ্দিন বাজার এলাকার বেশকিছু ব্যবসায়ী, শিক্ষার্থী, এলাকার মাস্তান, বেকার যুবক, ছাত্রী সংস্থার নেতাকর্মীসহ একটি বিশাল চক্র তৈরি করেন। বন্দরনগরীর বিভিন্ন এলাকায় নিরাপদে ইয়াবার চালান পৌঁছাতে ছাত্রী সংস্থার চিহ্নিত নেত্রীকর্মীদের ব্যবহার করতেন।
যেভাবে পতন
সারাদেশে ইয়াবার আগ্রাসন অপ্রতিরোধ্য হয়ে ওঠে। স্বল্প সময়ে কাড়ি কাড়ি টাকা আয়ের সহজতম পণ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠা পায় ইয়াবা কারবার। তাই এর বাহক ও গ্রাহক বেড়েছে কল্পনাতীতভাবে। আসক্তের সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঘরে ঘরে অশান্তির দাবানল বাড়তে থাকে। প্রজন্ম ধ্বংস হচ্ছে দেখে রাষ্ট্রযন্ত্র ইয়াবা প্রতিরোধে কঠোর হয়ে ওঠে।
এরই ধারাবাহিকতায় গত বছরের মে মাসে ‘চল যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ নামে অভিযান শুরু করে শৃংখলা বাহিনী। এরপরও ইয়াবার বড় বড় চালান আসা বন্ধ হয়নি। তাই গোয়েন্দা সংস্থার নানা বিভাগের করা তালিকায় সাইফুল করিম, সাবেক সাংসদ আবদুর রহমান বদিসহ বেশ কয়েকজনকে গডফাদার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। কিন্তু ব্যবসা থামাতে ক্ষুদ্র কারবারি নিধনে নামে প্রশাসন। এরপরও থামানো যায়নি ইয়াবা আসা।
প্রশাসনের নানা স্তরের কর্মকর্তাদের সঙ্গে সখ্যতা থাকায় আইনশৃংখলা বাহিনীর ওসি এবং এসপি সমমানের কোনো অফিসার সাইফুল করিম, সাবেক এমপি বদিসহ অন্য গডফাদারকে গ্রেফতার করার সাহসও করেননি। এসব কারণে তাদের বিরুদ্ধে ইয়াবা-সংক্রান্ত কোনো মামলা তো দূরের কথা, কোনো ধরনের প্রমাণও ছিল না।
তবে বিপত্তি দেখা যায় ২০১৭ সালের দিকে। হঠাৎ করে কয়েকটি মাদক মামলায় আসামি হয়ে পড়েন সাইফুল করিম। ২০১৮ সালে কয়েকটি সংস্থার সমন্বয়ে করা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের তালিকায় ১ হাজার ১৫১ জনের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে সাইফুল করিমের নাম। সেই তালিকা ধরেই সারাদেশে জোরালো অভিযান শুরু করে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি থেকে শুরু করে আইনশৃংখলা বাহিনী। এরপর কোনো উপায় না দেখে সাইফুল করিম গা ঢাকা দেন। কৌশলে পালিয়ে যান সংযুক্ত আরব আমিরাতে।
অবশ্য তখন পরিবারের পক্ষ থেকে গুজব ছড়িয়ে দেয় মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে অবস্থানের বিষয়টি। যাতে করে আইনশৃংখলা বাহিনীর দৃষ্টি ইয়াঙ্গুনে থাকে। পরে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে প্রথম দফায় ১০২ জন ইয়াবা কারবারী আত্মসমর্পণ করার সময় সাইফুল করিমের আত্মসমর্পণের বিষয়টি জোরালো হয়ে ওঠে। কিন্তু সব জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে আত্মসমর্পণ করেননি আলোচিত হাজি সাইফুল করিম।
প্রথম দফা আত্মসমর্পণের পর ইয়াবা কারবারিদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে দ্বিতীয় দফা আত্মসমর্পণের সুযোগের ঘোষণা দেয় আইনশৃংখলা বাহিনী। এই ঘোষণায় সর্বশেষ (২৬ মে) শনিবার রাত ১১টার দিকে দুবাই থেকে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে পুলিশ সদর দফতরের একটি বিশেষ বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে চলে যান সাইফুল। অবশ্য পুলিশের পক্ষ থেকে বার বার বিষয়টি অস্বীকার করা হয়।
টেকনাফ থানা পুলিশের ওসি প্রদীপ কুমার দাশ বলেন, ইয়াবা ডন সাইফুল করিমকে পুলিশ গ্রেফতারের পর ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। পুলিশের কাছে তিনি স্বীকার করেন গত কয়েকদিন আগে ইয়াবার একটি বড় চালান ইঞ্জিনচালিত বোটে মিয়ানমার থেকে এনে টেকনাফের সদর স্থলবন্দরের সীমানা প্রাচীরের শেষ প্রান্তে নাফ নদীর পাড়ে মজুত করেছেন। ওই তথ্যের ভিত্তিতে ইয়াবা উদ্ধারে বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে পুলিশের একটি দল তাকে নিয়ে ওই স্থানে পৌঁছালে পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে তার অস্ত্রধারী সহযোগীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে। পুলিশও আত্মরক্ষার্থে পাল্টা গুলি ছোড়ে। এতে আটক সাইফুল করিম (৪৫) গুলিবিদ্ধ হন। পরে হাসপাতালে মারা যান।
এ সময় ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় ব্যাপক তল্লাশি করে ৯টি এলজি, ৪২ রাউন্ড শর্টগানের তাজা কার্তুজ, ৩৩ রাউন্ড কার্তুজের খোসা এবং ১ লাখ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়।
এদিকে পুলিশের সদর দফতরের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ইয়াবা ডন সাইফুলকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। সে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে যা পরবর্তীতে আইনশৃংখলা বাহিনীর কাজে আসবে। ইয়াবা ডন সাইফুল করিমকে কারা পৃষ্ঠপোষকতা করেছে, কারা আর্থিক সুবিধা নিয়েছে প্রত্যেকের নাম বলেছে। এরমধ্যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অসাধু কর্মকর্তা, জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক নেতা এবং গণমাধ্যমকর্মীও রয়েছেন। আমরা এসব ব্যক্তিদের ধীরে ধীরে আইনের আওতায় নিয়ে আসব।
কক্সবাজারের পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, আইন আইনের পথে হাঁটছে। যাদের কারণে ইয়াবা দেশময় ছড়িয়েছে তাদের সবাইকে ক্রমান্বয়ে আইনের আওতায় আনা হবে। ইয়াবায় সম্পৃক্তদের রেহায় নেই।
এফএ/জেআইএম