জাতীয়

১০-১৫ লাখ টন চাল রফতানির সিদ্ধান্ত : কৃষিমন্ত্রী

ধানের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করতে সরকার ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী মো. আব্দুর রাজ্জাক।

Advertisement

বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে ধানের কম বাজারমূল্যের বিষয়ে সরকারের গৃহীত কার্যক্রম নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান মন্ত্রী একথা জানান।

তিনি বলেন, ‘খাদ্য নিরাপত্তা ঝুঁকিমুক্ত রেখে সরকার ১০ থেকে ১৫ লাখ টন চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রফতানির বাজারে যাওয়া কঠিন। তারপরও ভারত, ভিয়েতনাম ও থাইল্যান্ডের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে হবে। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি আমরা যেতে পারব।

‘বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, কেউ যদি চাল রফতানির আবেদন করে, এক-দুদিনের মধ্যে অনুমতি দেয়া হবে। সব ধরনের চালই রফতানি করতে পারবে।’

Advertisement

চাল রফতানির ক্ষেত্রে প্রণোদনার পরিমাণ বাড়ানো হবে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘অর্থমন্ত্রী আমাদের বলেছেন দরকার হলে তিনি আরও বাড়িয়ে দেবেন। অর্থমন্ত্রী এখন বিদেশে আছেন। প্রণোদনা ২০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ বা ৩০ শতাংশ দেয়া যেতে পারে।’

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘কৃষককে ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ হিসেবে আমরা চাল রফতানির সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ধান কেনা হচ্ছে। আমরা আমদানির ওপর শুল্ক বাড়িয়েছি, চালের আমদানি শুল্ক ২৮ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৫৫ শতাংশ করা হয়েছে। আমদানি আর হবে না।’

গত ২০১৭ সালের চাল আমদানির শুল্ক রেয়াতের পর চাহিদার অতিরিক্ত চাল আমদানি, উৎপাদন বৃদ্ধি ও শ্রমিকের অভাবে এবার ধানের মূল্য কমে গেছে বলে জানান মন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘এবার বোরো উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা এক কোটি ৯৬ লাখ টন। লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। আমরা আশাও করিনি এতটা উৎপাদন হবে।’

Advertisement

তিনি বলেন, ‘রফতানি করব এটাও তো একটা বিরাট ম্যাসেজ। রফতানি করতে পারলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটবে। যারা তাৎক্ষণিক প্রয়োজন মেটাতে ধান বিক্রি করেছে তারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যারা বড় চাষী তারা ধান ঘরে রেখে দেয়।’

‘চাষীদের সারের উপর আরও কিছু প্রণোদনা দেয়া যায় কি-না তা দেখছি। আর কৃষি যান্ত্রিকীকরণের প্রক্রিয়াকে দ্রুত করতে হবে। ইতোমধ্যে সরকার ৩ হাজার কোটি টাকা ইমিডিয়েট যান্ত্রিকীকরণে ব্যয় করবে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘কৃষিটা সবসময়ই অনিশ্চিত। শুধু আমাদের দেশে নয়, ফ্রান্স ও ইউরোপীয় দেশে দেখবেন টমেটো হাইওয়েতে ঢেলে দিচ্ছে, দুধ হাইওয়ে ঢেলে দিচ্ছে। পচনশীল পণ্য, উৎপাদন বাড়লে দাম কমে যায়, এটার সমাধান করা যায় না। আমি সেটা বলছি না, আমরা গুদাম করলাম না কেন? বাংলাদেশে সম্পদ সীমিত। বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হবে। রাস্তাঘাট করতে হবে।’

‘আমাদের খাদ্যশস্য সংরক্ষণে গুদামের ধারণ ক্ষমতা ২১ লাখ টন। আরও ৮ লাখ টন ধারণ ক্ষমতার গুদাম নির্মাণাধীন।’

মন্ত্রী জানান, ধানসহ কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে চাষিদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে ফসলের ক্রয়মূল্য অগ্রিম নির্ধারণ করে মৌসুমের শুরুতেই সরাসরি কৃষক পর্যায় থেকে ধান সংগ্রহসহ এমন বেশকিছু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার।

ধানের ন্যায্যমূল্য দিতে দ্রুত পদক্ষেপ হিসাবে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে বলে জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, পর্যাপ্ত গোডাউন না থাকায় সরকার কৃষকদের কাছে থেকে বেশি পরিমাণ ধান-চাল সংগ্রহ করতে পারছে না।

কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিতের লক্ষ্যে সরকার কিছু দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিয়েছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, ‘এর মধ্যে রয়েছে ধানের ক্রয়মূল্য অগ্রিম নির্ধারণ করে মৌসুমের শুরুতেই সরাসরি কৃষক পর্যায় থেকে এ ফসল সংগ্রহ শুরু, চাষিদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে সে মোতাবেক ক্রয় কার্যক্রম সম্পন্ন করা, সরকারি গুদামের ধারণ ক্ষমতা পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি, সরকারের ধান সংগ্রহের পরিমাণ পর্যায়ক্রমে বৃদ্ধি করে ৫০ লাখ মেট্রিক টনে উন্নীত এবং চাল আমদানি নিরুৎসাহিত করে রফতানিকে উৎসাহিত করা।’

এছাড়া কৃষক পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় কমানোর মাধ্যমে কৃষিকে লাভজনক করতে কৃষি মন্ত্রণালয় বেশ কিছু পদক্ষেপ নেবে বলেও জানান কৃষিমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে নন-ইউরিয়া সারসহ অন্যান্য উপকরণে প্রণোদনা বৃদ্ধি, সেচের কার্যক্ষমতা বৃদ্ধিসহ ব্যয় কমানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং এক্ষেত্রে প্রয়োজনে প্রণোদনা আরও বৃদ্ধি করা হবে।’

আরএমএম/এমএসএইচ/জেএইচ/জেআইএম/এমকেএইচ