রমজান রোজা ও ঈদ একই সুতোয় গাঁথা। রমজানের রোজা যতই কমতে থাকে ঈদের প্রস্তুতি ও কেনাকাটা বেড়ে যায়। ধনী-গরিব সবাই কম-বেশি নতুন জামা-কাপড় কেনাকাটা করেন।
Advertisement
ঈদের কেনা-কাটা শুধু এই যুগের মানুষই করেন এমন নয়, বরং ইসলামের স্বর্ণ যুগেও মানুষ ঈদের কেনা-কাটায় অংশ নিতো। এ চাহিদা ছিল খোলাফায়ে রাশেদার যুগের দায়িত্বশীলদের পরিবারেও ছিল ঈদের কেনাকাটার চাহিদা।
এমনই একটি ঘটনায় ওঠে এসেছে ইসলামি শাসনামলের যোগ্য অর্থমন্ত্রী হজরত আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহুর প্রসঙ্গ। যিনি ছিলেন ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা অর্ধ জাহানের শাসক হজরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু আনহুর সময়ের ইসলামি খেলাফতের নির্ভরযোগ্য অর্থমন্ত্রী।
ইসলামি খেলাফতের রাষ্ট্রপতি ও অর্থমন্ত্রীর এ ঘটনায় রয়েছে বিশ্ব মানবতার জন্য সুমহান শিক্ষা। যা তুলে ধরা হলো-
Advertisement
আমিরুল মুমিনীন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু ২৩ শে আগস্ট ৬৩৪ সাল থেকে ৩ নভেম্বর ৬৪৪ সাল পর্যন্ত সমগ্র আরব জাহানের খেলাফতের দায়িত্ব পালন করেছেন। সে সময়কালের রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বে ছিলেন হজরত আবু উবায়দা রাদিয়াল্লাহু আনহু।
এক ঈদের আগের দিন হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু-এর স্ত্রী তার সন্তানের জন্য ঈদের নতুন জামা কেনার আবদার জানালেন। তখনও তাদের নিজেদের ঈদের জন্য কোনো নতুন জামা কাপড় ছিল না।
অর্ধজাহানের শাসক হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু জানালেন , নতুন কাপড় কেনা সামর্থ্য আমার নেই।’
পরে তিনি রাষ্ট্রীয় কোষাগারের দায়িত্বশীল হজরত আবু উবাইদাকে এক মাসের অগ্রিম বেতন চেয়ে চিঠি লিখেন।
Advertisement
হজরত আবু উবাইদা রাদিয়াল্লাহু আনহু ইসলামি খেলাফতের আমিরের চিঠি পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারলেন না। তিনি কাঁদলেন। তিনি দুটি কারণে কাঁদলেন-
>> অর্ধ জাহানের বাদশাহ; অথচ তিনি কি-না এক মাসের অগ্রিম বেতন চাইছেন। যার নিজের কোনো সম্পদ ছিল না।>> ইসলামি রাষ্ট্রের কোষাগারের আমানতদারের দায়িত্ব পালনের কারণে আমিরুল মুমিনিনকেও অগ্রিম বেতন দিতে পারছেন না।
তিনি পত্রবাহকতে অগ্রিম বেতন না দিয়ে দুটি শর্তসহ আরেকটি চিঠি লেখেন। যে শর্তগুলো দুনিয়ার সব মানুষের শিক্ষার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। আর তাহলো-
হে আমিরুল মুমিনিন! আগামী মাসের অগ্রিম বেতন বরাদ্দের জন্য আপনাকে দুটি বিষয়ে ফয়সালা দিতে হবে-
>> আগামী মাস পর্যন্ত আপনি বেঁচে থাকবেন কি-না?>> আর বেঁচে থাকলেও দেশের জনসাধরণ আপনাকে আগামী এক মাস খেলাফতের দায়িত্বে বহাল রাখবেন কি-না?
হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু অর্থমন্ত্রী আবু উবাইদার চিঠি পড়ে কোনো শব্দই করলেন না বরং অঝোরধারায় কান্না করলেন। দাড়ি বেয়ে বেয়ে তার চোখের পানি ঝরছিল।
অশ্রুসিক্ত নয়নে দু’হাত তুলে হজরত আবু উবাইদার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করলেন। একজন যোগ্য অর্থমন্ত্রী পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করলেন ।
এ ছিল ইসলামি খেলাফতের আমিরের সম্পদ ও অবস্থানের বিবরণ আর অর্থমন্ত্রীর দায়িত্বশীল ভূমিকা। যা সর্বকালের সর্বযুগের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বশীলদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ ও সুমহান শিক্ষা।
আল্লাহ তাআলা বিশ্বব্যাপী সবদেশ ও জনপদের রাষ্ট্রীয় দায়িত্বলদের এমন গুরুদায়িত্ব পালন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/পিআর