অর্থনীতি

সিএসইতে তালিকাভুক্তির অনুমোদন পেল সেই ‘কপারটেক’

আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতি থাকায় প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ উত্তোলন করা কপারটেক ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেডের তালিকাভুক্তি ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) আটকে দিলেও অপর শেয়ারবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছে।

Advertisement

গত ২৩ মে অনুষ্ঠিত পরিচালনা পর্ষদ সভায় কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়া হয় বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন সিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুর রহমান মজুমদার।

এ বিষয়ে তিনি বলেন, কপারটেক ইন্ডাষ্ট্রিজকে সিএসইতে তালিকাভুক্ত হওয়ার অনুমোদন দেয়া হয়েছে। তবে কবে থেকে কোম্পানির শেয়ার লেনদেন হবে তা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি।

আর্থিক প্রতিবেদনে অসঙ্গতির অভিযোগে ডিএসই যে কোম্পানিকে তালিকাভুক্ত করেনি, সেই কোম্পানিকে আপনারা কেন তালিকাভুক্ত করলেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোম্পানির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা আমরা ক্ষতিয়ে দেখব। তালিকাভুক্তির অনুমোদন দেয়া মনেই লেনদেন করার অনুমোদন দেয়া নয়।

Advertisement

এদিকে ভিন্ন সিদ্ধান্ত না নেয়ার লক্ষে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ডিবিএ), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ এবং বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) মধ্যে গত ২২ মে একটি সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়।

এ কমিটির বিষয়ে সাংবাদিকদের জানানো হয়, আগামীতে একসঙ্গে কাজ করবে এমন অঙ্গীকার নিয়ে সমন্বয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। যার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে সবার মধ্যে সমন্বয় করা। যেখানে সবার দাবি ও উদ্দেশ্য হবে এক, সবাই একই সুরে কথা বলবে। এ লক্ষ্যে ডিএসইর পক্ষে মিনহাজ মান্নান ইমন, ডিবিএর পক্ষে শাকিল রিজভী, সিএসইর পক্ষে ছায়েদুর রহমান ও বিএমবিএর পক্ষে নাসির চৌধুরীর নেতৃত্বে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠান থেকে ৩ জন করে প্রতিনিধি নেয়া হয়।

এমন সমন্বয় কমিটি কারার পরের দিনেই ডিএসইর অবস্থান উপেক্ষা করে সিএসই থেকে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে অনুমোদন দেয়ায় দুই স্টক এক্সচেঞ্জের মধ্যে মত বিরোধ সৃষ্টি হবে কি না- এমন প্রশ্ন করলে সিএসইর এমডি বলেন, মতবিরোধ হওয়ার কোনো কারণ নেই। আমরা আইন মেনেই অনুমোদন দিয়েছি।  

এদিকে আর্থিক হিসাবে অসঙ্গতির অভিযোগে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে তালিকাভুক্তির সিদ্ধান্ত নেয়নি ডিএসইর পরিচালনা পর্ষদ। এ বিষয়ে করণীয় ঠিক করতে শেয়ারবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) চিঠি দিয়েছে ডিএসই কর্তৃপক্ষ।

Advertisement

ডিএসইর পক্ষ থেকে সাংবাদিকদের জানানো হয়েছে, কপারটেকের আর্থিক প্রতিবেদনে অস্বচ্ছতার অভিযোগ ওঠায় পরিচালনা পর্ষদ সভার মাধ্যমে কোম্পানিটির ব্যালান্স শিট অধিকতর নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এ জন্য ডিএসইর প্রধান নিয়ন্ত্রক কর্মকর্তাকে (সিআরও) তদন্ত করার দায়িত্ব দেয়া হয়।

তদন্তে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজের আর্থিক হিসাবে অসঙ্গতি পাওয়া গেছে। এছাড়া প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক হিসাবে অসঙ্গতি নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যেরও সত্যতা মিলেছে। যে কারণে কোম্পানিটিকে তালিকাভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি ডিএসই পর্ষদ।

এ বিষয়ে ডিএসইর ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এ কে এম মাজেদুর রহমান সাংবাদিকদের জানান, কোম্পানির আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গতির অভিযোগ থাকার বিষয়টি ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) তদন্ত করছে।

ডিএসই থেকে জানানো হয়, আর্থিক প্রতিবেদনে নানা অসঙ্গিত থাকার অভিযোগ ওঠায় ফিন্যান্সিয়াল রিপোর্টিং কাউন্সিল (এফআরসি) থেকে দ্য ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউনট্যান্টস অব বাংলাদেশকে (আইসিএবি) বিষয়টি খতিয়ে দেখে রিপোর্ট দিতে বলা হয়। কিন্তু কপারটেকের নিরীক্ষক এ বিষয়ে অসহযোগিতা করছে বলে আইসিএবির পক্ষ থকে জানানো হয়। এসব কারণেই কপারটেকের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের কাছে প্রস্তাব দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

গত বছরের ডিসেম্বরে ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে ২ কোটি সাধারণ শেয়ার ছেড়ে পুঁজিবাজার থেকে কপারটেক ইন্ডাস্ট্রিজকে ২০ কোটি টাকা উত্তোলনের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। সেই অনুমোদন নিয়ে ইতোমধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে থেকে কোম্পানিটি প্রাথমিক গণ প্রস্তাবের আবেদন গ্রহণ করেছে। এরপরই কোম্পানিটির আর্থিক প্রতিবেদন নিয়ে নানা অভিযোগ ওঠে।

এমএএস/এমএমজেড/পিআর