বিয়ের সব আয়োজন সম্পন্ন। মণ্ডপ সাজিয়ে বসেছেন পুরোহিত। কনেকে বিয়ের সাজে প্রস্তুত করা হয়েছে। চলে এসেছে বরযাত্রীও। কিন্তু বর বেশে যিনি এসেছেন তিনি একজন নারী! এমন আজব রীতিই চলে আসছে ভারতের গুজরাটের তিনটি গ্রাম সুরখেদা, সানাদা ও আম্বালায়।
Advertisement
এখানকার রীতি অনুযায়ী, বরের পক্ষে তার অবিবাহিতা বোন বা পরিবারের কোনো অবিবাহিত নারী বিয়ের সব অনুষ্ঠান- সিঁদুর দান থেকে সাত পাক, সব কিছুই সম্পন্ন করেন। আর বর শেরওয়ানি পরে, সাফা মাথায়, কোমরে ঐতিহ্যবাহী তলোয়ার ঝুলিয়ে থেকে যান বাড়িতেই, তার মায়ের কাছে।
কিন্তু কেন এই রীতি? এ বিষয়ে আম্বালা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধান বেচান রাথওয়া বলেন, ‘কথিত আছে, আমাদের পুরুষ দেবতা ব্রহ্মদেব অন্য দেবতাদের বিয়ে দেয়ার কাজে এত ব্যস্ত ছিলেন যে, নিজে বিয়েটা করে উঠতে পারেননি। তাকে সম্মান জানাতেই আমাদের গ্রামের ছেলেরা নিজেদের বিয়েতে উপস্থিত থাকে না। বরের হয়ে তার বোন বা অবিবাহিতা আত্মীয়া বিয়ের সব নিয়ম-নীতি পালন করে। নতুন বউকেও সে-ই সঙ্গে করে নিয়ে আসে। লোকের বিশ্বাস- এই রীতিতে বিয়ে হলে দেবতা নবদম্পতিকে সুরক্ষিত রাখেন।’
সুরখেদা গ্রামের পঞ্চায়েত প্রধানের দাবি, যারাই এই রীতি মানেন না, বিয়ের পর তাদেরই জীবনে অশান্তি ঘনিয়ে আসে। তার কথায়, ‘যারাই অন্ধবিশ্বাস বলে এটাকে অস্বীকার করেন, তাদেরই বিয়ে হয় ভেঙে যায়, না হলে পরিবারে অশান্তি বেড়ে যায়।’
Advertisement
এই বিশ্বাসের ভিত্তিতেই বৌদিকে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যান ননদ। সিঁদুর দান, মালা বদল, সাতপাকে ঘোরা- সব রীতি পালন করেন তিনি। পরদিন বউ শ্বশুর বাড়িতে পৌঁছনোর পর বরকে পাশে বসিয়ে ছোটখাটো ঘরোয়া অনুষ্ঠানে বিয়ের আচার পালন হয়।
বর্তমান প্রজন্মের অধিকাংশই পড়াশোনা শিখেছেন, কেউ কেউ বাইরেও কাজ করেন তারা কি এসব রীতি মানেন? এর উত্তরে আম্বালা গ্রামের এক কিশোর বলেন, ‘অনেকে বিশ্বাস মেনে এই রীতিতেই বিয়ে করে। অনেকে আবার এসব মানে না। কিন্তু সেক্ষেত্রে বাড়ির লোকদের বোঝানো রীতিমতো কষ্টসাধ্য হয়ে ওঠে।’
এসময় পাশে থাকে এক বৃদ্ধা বলে ওঠেন, ‘বাড়ির লোকের তো অমঙ্গলের ভয় রয়েছে। ২৫-৩০ বছর আগে এক শিক্ষিত দম্পতি এই রীতি না মেনে বিয়ে করেছিল। বিয়ের কয়েক দিনের মধ্যে তারা দুজনেই মারা যান। এরপরও আর কে ঝুঁকি নেবে?’
এমবিআর/জেআইএম
Advertisement