অবৈধপথে ইতালি পাড়ি দিতে গিয়ে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকাডুবিতে সলিল সমাধি হয় ফেঞ্চুগঞ্জের আহমদ, লিটন ও আজিজসহ দেশের অন্তত ৩৯ জন। ভাগ্যক্রমে বেঁচে যাওয়া যুবকরা এখন দেশে ফিরতে শুরু করেছেন।
Advertisement
রোববার দুপুরে দেশে ফেরা বিলাল আহমদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, নিজে বেঁচে ফিরলেও তার চোখের সামনে আপন ভাগ্নে আহমদ হোসেন, দুই ভাতিজা আব্দুল আজিজ ও লিটন আহমেদ সাগরে ডুবে মারা যান। তাদেরকে চোখের সামনে ডুবে যেতে দেখেছেন তিনি। ভাগ্যক্রমে ১১ ঘণ্টা সাগরের পানিতে ভেসে থেকে বেঁচে যান বিলাল। এই দুঃসহ স্মৃতি তাকে এখনো তাড়া করছে। ইচ্ছা করলেও তিনি স্বাভাবিক জীবন শুরু করতে পারছেন না।
লিবিয়া থেকে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবি থেকে বেঁচে ফেরার রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন বিলাল আহমদ (৩২)। তিনি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলার মউদপুর গ্রামের মৃত তজম্মুল আলীর ছেলে।
বৃহস্পতিবার ভোর ৫টা ৩৮ মিনিটে টার্কিশ এয়ারলাইন্সের টিকে-৭১২ ফ্লাইট যোগে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করেন। সেখানে ১ দিন বিভিন্ন সংস্থার জিজ্ঞাসাবাদ শেষে অবশেষে শনিবার সকালে বাড়ি ফেরেন।
Advertisement
বিলাল বলেন, ‘দালালচক্র ভারত, শ্রীলঙ্কা, কাতার হয়ে তাদের নিয়ে যায় লিবিয়ায়। লিবিয়ায় জিম্মি করে কয়েক মাস চলে নির্যাতন। পাসপোর্ট ছিনিয়ে নিয়ে বন্ধ করে দেয়া হয় দেশে ফিরে আসার পথও। অবশেষে প্রতিজনের পরিবারের কাছ থেকে চুক্তির ৮ লাখ টাকা আদায়ের পর আরও কয়েক লাখ টাকা আদায় করে ইতালির উদ্দেশ্যে তাদের তুলে দেয়া হয় রাবারের নৌকায়। অল্পদূরে গিয়েই ডুবে যায় তাদের বহনকারী নৌকাটি।
বিলাল কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেন, লিবিয়ায় আরো অন্তত ২শ বাংলাদেশি তরুণকে এই পথে ইতালি পাঠাতে জড়ো করে রেখেছে পাচারকারী চক্র। অতিরিক্ত টাকার জন্য চালাচ্ছে নির্যাতন। চুক্তি অনুযায়ী দালালরা কথা রাখেননি। তারা ইতালিতে পাঠানোর লোভ দেখিয়ে আসলে লিবিয়ার দালালদের কাছে তাদের বিক্রি করছে।’
বিলাল বলেন, ‘এখন দাবি একটাই। আর সেটি হচ্ছে এই দালাল চক্রের কঠোর শাস্তি।’ পাশাপাশি লোভে কেউ যেন দালালদের প্রতারণায় না পড়েন এই আহ্বানও তিনি।
উল্লেখ্য, লিবিয়ার জুয়ারা থেকে অবৈধভাবে ইতালিতে যাওয়ার পথে ১০ মে তিউনিসিয়া উপকূলে নৌকা ডুবে বহু মানুষের মৃত্যু হয়। নৌকাডুবির ঘটনায় নিখোঁজ ৩৯ বাংলাদেশির একটি তালিকা সরকারের পক্ষ প্রকাশ করা হয়েছে।
Advertisement
এ ঘটনায় জড়িত ফেঞ্চুগঞ্জের জামায়াত নেতা এনামুল হকসহ পাচারকারী চক্রের তিন সদস্যকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে ঢাকা র্যাবের সদস্যরা। এ ছাড়া সাগরে নৌকা ডুবে নিহত একজনের পরিবারের পক্ষ থেকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ থানায় ও বিশ্বনাথ থানায় আরেকজ পৃথক দুটি মামলা দায়ের করেছেন।
ছামির মাহমুদ/এমআরএম/জেআইএম