খেলাধুলা

শেষবারের মত বিশ্বকাপের মঞ্চে দেখা যাবে তাদের

জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলা একজন ক্রিকেটারের জন্য পরম আরাধ্যের বিষয়। চার বছর পরপর অনুষ্ঠিত হয় বিশ্বকাপ। সেরাদের সেরারা খেলে এই আসরে। নিজেকে বিশ্ব ক্রিকেটে পরিচয় করিয়ে দিতে এর চেয়ে বড় মঞ্চ আর কিই বা হতে পারে!

Advertisement

এদিকে এবারের আসর দিয়ে শেষ হতে চলেছে অনেক ক্রিকেটারের বিশ্বকাপ অধ্যায়। সেই তালিকায় যেমন রয়েছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, তেমনি ভারতকে ২৮ বছর পর বিশ্বকাপ এনে দেয়া মহেন্দ্র সিং ধোনিও। এ ছাড়াও বিশ্ব মাতানো ক্রিস গেইল, ব্যাটসম্যানদের কাঁপিয়ে দেয়া পেসার লাসিথ মালিঙ্গার মতো দেড়-দুই দশক ধরে ক্রিকেট বিশ্বকে মাতিয়ে রাখা ক্রিকেটাররা খেলবেন নিজেদের শেষ বিশ্বকাপ।

জাগো নিউজের বিশ্বকাপ স্পেশালের বিশেষ আয়োজনে আজ শেষ বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া ১৫ ক্রিকেটার নিয়ে আলোচনা করা হলো ...

মাশরাফি বিন মুর্তজা (বাংলাদেশ)ঘরের মাঠে অনুষ্ঠিত ২০১১ বিশ্বকাপ ইনজুরির কারণে খেলতে না পারলেও এ নিয়ে ৩টি বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা হয়েছে মাশরাফি বিন মর্তুজার। এর মধ্যে ২০১৫ বিশ্বকাপে দলকে নেতৃত্ব দিয়েছেন এ ফাস্ট বোলার। এবারের বিশ্বকাপেও নেতৃত্বের গুরুভার তার কাঁধে।

Advertisement

ইংল্যান্ডের এই আসরই শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে মাশরাফির জন্য। টুর্নামেন্ট শুরুর আগে মাশরাফি নিজ মুখেই জানিয়ে দিয়েছেন এই তথ্য। এ পর্যন্ত ৩টি বিশ্বকাপে ১৬টি ম্যাচ খেলে বোলার মাশরাফির ঝুলিতে রয়েছে ১৮টি উইকেট। সেরা বোলিং ৩৮ রান দিয়ে ৪ উইকেট। ইকোনমি ৪.৯৪। অন্যদিকে ব্যাট হাতে ১৩ ইনিংস খেলে করেছেন ১৬৫ রান। মাশরাফির নেতৃত্বে বিশ্বকাপে টাইগাররা খেলেছে ৫ ম্যাচ। এর মধ্যে দল ২ ম্যাচ হারলেও, জিতেছে ৩টিতে।

মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত)ভারতকে ২০১১ বিশ্বকাপ জেতানো অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনির জন্য এটাই হতে চলেছে শেষ বিশ্বকাপ। বয়স প্রায় ৩৮ ছুঁইছুঁই এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যান এখন পর্যন্ত ৩টি বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে খেলেছেন ২০ ম্যাচ। এর মধ্যে দলকে দু’বার বিশ্বসেরার মঞ্চে প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

বিশ্বকাপে ধোনির উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স ২০১১ বিশ্বকাপের ফাইনালে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেদিন ম্যাচজয়ী অপরাজিত ৯১ রানের ইনিংস খেলে ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নেন ধোনি।

বিশ্বকাপে ব্যাট হাতে ১৭ ইনিংস খেলে সাবেক ভারতীয় অধিনায়কের সংগ্রহ ৫০৭ রান। কোনো সেঞ্চুরি নেই, ফিফটি ৩টি। এ ছাড়াও উইকেটের পেছনে ২৭ ক্যাচ আর স্ট্যাম্পিং করার রেকর্ড রয়েছে ক্যাপ্টেন কুল খ্যাত এই উইকেটরক্ষকের।

Advertisement

ক্রিস গেইল (ওয়েস্ট ইন্ডিজ)স্বঘোষিত 'ইউনিভার্সাল বস' ক্রিস গেইলের জন্য এটাই হতে চলেছে শেষ বিশ্বকাপ। ১৯৯৯ সালে রঙিন পোশাকে অভিষেক হওয়া এই ক্যারিবিয়ান ব্যাটিং দানব এবার ক্যারিয়ারের ৫ নম্বর বিশ্বকাপ খেলবেন।

এর আগে ৪টি বিশ্বকাপ খেলা গেইল ২৬ ম্যাচে করেছেন ৯৪৪ রান। ২টি সেঞ্চুরির সঙ্গে আছে ৪টি ফিফটি। এ ছাড়াও বল হাতে ১১৭ ওভারে ১৪ উইকেট পেয়েছেন তিনি। উল্লেখ্য, গেল বিশ্বকাপে ক্যানবেরার মানুকা ওভালে ডাবল সেঞ্চুরি (২১৫) হাঁকান গেইল। প্রতিপক্ষ ছিল জিম্বাবুয়ে।

লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা)শ্রীলঙ্কার ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকালের সেরা বোলারদের একজন লাসিথ মালিঙ্গা। বিশ্বকাপে একমাত্র বোলার হিসেবে দু’দুটি হ্যাটট্রিক করার রেকর্ড রয়েছে তার। আগের ৩টি বিশ্বকাপ খেলা মালিঙ্গার জন্য এটা হতে চলেছে শেষ বিশ্বকাপ।

৩৫ বছর বয়সী এই পেসার বিশ্বকাপে মোট ২২টি ম্যাচ খেলেছেন। উইকেট শিকার করেছেন ৪৩টি। সেরা বোলিং কেনিয়ার বিপক্ষে, ৩৮ রান খরচায় ৬ উইকেট। এ ছাড়াও ইনিংসে দুইবার ৪ উইকেট নেয়ার কীর্তি রয়েছে মালিঙ্গার।

রস টেলর (নিউজিল্যান্ড)সাবেক এই কিউই অধিনায়কও এ পর্যন্ত খেলেছেন ৩টি বিশ্বকাপ। যদিও বিশ্বমঞ্চে দলকে কখনো নেতৃত্ব দেয়ার সৌভাগ্য হয়নি টেলরের। তবে ব্যাট হাতে প্রতিবার দলের সেরাদের একজন ছিলেন তিনি।

বিশ্বকাপে মোট ২৩টি ম্যাচ খেলছেন রস টেলর। এর মধ্যে ২১ ইনিংসে ব্যাট করে তার উইলো থেকে এসেছে ৬৫২ রান। সর্বোচ্চ অপরাজিত ১৩১ করেছেন পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১১ বিশ্বকাপে। বিশ্বকাপে মোট ৩টি ফিফটি ও ১টি সেঞ্চুরির পাশাপাশি ১১টি ক্যাচ নিয়েছেন এই কিউই ব্যাটসম্যান।

শন মার্শ (অস্ট্রেলিয়া)এই প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ান ব্যাটসম্যান শন মার্শ। তবে প্রথম বিশ্বকাপই আবার শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে মার্শের জন্য। বয়স ৩৫, অসিদের হয়ে এই বয়সে বিশ্বকাপ খেলাও বা কম গর্বের কিসে! ৭১টি ওয়ানডে খেলে ৪১-এর বেশি গড়ে ২৭৪৭ রান করা মার্শ এই বিশ্বকাপে ক্যাঙ্গারুদের মিডল অর্ডারের ভরসার প্রতীক।

ইমরান তাহির (দক্ষিণ আফ্রিকা)এবারের বিশ্বকাপে সবচেয়ে বয়স্ক ক্রিকেটার হিসেবে খেলতে যাচ্ছেন ইমরান তাহির। দক্ষিণ আফ্রিকার এই লেগ-স্পিনারের বয়স ৪০ বছর। এই বয়সেও শুধুমাত্র ধারাবাহিক পারফরম্যান্সের জোরে বিশ্বকাপ দলে নিজের জায়গা নিশ্চিত করেছেন তাহির।

এর আগে দুটি বিশ্বকাপ খেলা তাহির বিশ্বকাপে বেশ সফল বোলারদের একজন। ১৩টি ম্যাচ খেলে তার ঝুলিতে রয়েছে ২৯টি উইকেট। গড় ১৬, সেরা বোলিং ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ১৫ বিশ্বকাপে ৪৫ রান খরচায় ৫ উইকেট।

জেপি ডুমিনি (দক্ষিণ আফ্রিকা)ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ নিজের ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ হতে চলেছে জেপি ডুমিনিরও। দক্ষিণ আফ্রিকার এই অলরাউন্ডারের বয়স ৩৫ বছর। এর আগে খেলেছেন ২০১১ ও ১৫ বিশ্বকাপ।

১৩ ম্যাচে অংশ নিয়ে ১২ ইনিংসে ডুমিনির ব্যাট থেকে এসেছে ৩৮৮ রান। সর্বোচ্চ ১১৫ সেডন পার্কে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। বিশ্বকাপে ১টি সেঞ্চুরি ও ১টি ফিফটি ছাড়াও বল হাতে ৫২ ওভার বল করে 8 উইকেট শিকার করেছেন ডুমিনি।

ডেল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা)‘স্টেইনগান’ খ্যাত বিধ্বংসী পেসার ডেল স্টেইনও জানিয়ে দিয়েছেন এটাই হতে চলেছে তার শেষ বিশ্বকাপ। প্রায় ৩৬ বছর হতে চললো তার বয়স। ২০০৫ সালে ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক হলেও এই প্রোটিয়া বোলার খেলেছেন কেবল ২টি বিশ্বকাপ।

টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা বোলারদের একজন হলেও, দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে রঙিন পোশাকে ততটা ক্ষুরধার স্টেইনকে কখনো দেখেনি ক্রিকেট বিশ্ব। দুই বিশ্বকাপে ১৪ ম্যাচ খেলে স্টেইনের উইকেটসংখ্যা ২৩। সেরা বোলিং ফিগার ভারতের বিপক্ষে, ৫/৫০।

হাশিম আমলা (দক্ষিণ আফ্রিকা)দক্ষিণ আফ্রিকার আরও একজন ক্রিকেটার। যার জন্য আসন্ন ইংল্যান্ড বিশ্বকাপই হতে চলেছে শেষ বিশ্বকাপ। দুটি বিশ্বকাপে অংশ নেয়া ৩৬ বছর বয়সী এই ওপেনিং ব্যাটসম্যান প্রোটিয়াদের হয়ে ১৫ ম্যাচ খেলে ৪২.৬০ গড়ে করেছেন ৬৩৯ রান। আছে ৩টি ফিফটি এবং ২টি হাফ-সেঞ্চুরি। ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ১৫৯ করেছিলেন মানুকা ওভালে। ২০১৫ অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে।

শোয়েব মালিক (পাকিস্তান) ১৯৯৯ সালে রঙিন পোশাক গায়ে জড়ালেও এখন পর্যন্ত মাত্র ১টি বিশ্বকাপ খেলার সৌভাগ্য হয়েছে পাকিস্তানের শোয়েব মালিকের। বয়স পৌঁছে গেছে প্রায় ৩৮-এ। সুতরাং, এটাই যে মালিকের ক্যারিয়ারের শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ২০০৭ ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপ খেলা মালিক ৩ ম্যাচে করেছিলেন মাত্র ৯২ রান। আছে ১টি ফিফটি। বল হাতেও ওই টুর্নামেন্টে ১ উইকেট পেয়েছিলেন মালিক।

মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান) পাকিস্তান দলে মি. প্রফেসর খ্যাত মোহাম্মদ হাফিজও খেলছেন তার বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপের পর পুরোপুরি হয়তো ব্যাট-প্যাড জোড়াও তুলে রাখবেন তিনি। এর আগের বিশ্বকাপ না খেললেও ২০০৭ ও ২০১১ বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা আছে হাফিজের। এই দুই বিশ্বকাপে মোট ১০ ম্যাচ খেলে একটিমাত্র ফিফটির সাহায্যে নিজের পাশে ২৩০ রান যোগ করেছেন এই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। এদিকে বল হাতে ১১ উইকেট শিকার করার সুখস্মৃতিও আছে এই অলরাউন্ডারের।

লিয়াম প্লাঙ্কেট (ইংল্যান্ড)২০০৫ সালে অভিষেক হলেও ইংল্যান্ড দলে কখনোই পরিচিত মুখ ছিলেন না পেসার লিয়াম প্লাঙ্কেট। ৮২টি ওয়ানডে খেলা এই ফাস্ট বোলার থ্রি-লায়ন্সদের হয়ে কেবলমাত্র ২০০৭ বিশ্বকাপই খেলতে পেরেছে। ৩৪ বছর বয়সী এই পেসার বল হাতে সেবার বলার মতো তেমন কিছু করতেও পারেননি তিনি। বিশ্বকাপ ক্রিকেটে প্লাঙ্কেটের ঝুলিতে আছে ৪ উইকেট।

হামিদ হাসান (আফগানিস্তান)বলতে গেলে আকস্মিকভাবে আফগানিস্তানের বিশ্বকাপ দলে ডাক পেয়েছেন পেসার হামিদ হাসান। ৩১ বছর বয়সী এই পেসার ২০১৬ সালের পর থেকে জাতীয় দলের হয়ে কোনো ম্যাচই খেলেননি। একের পর ইনজুরি ক্যারিয়ারটা প্রায় শেষ করে দিচ্ছিল হামিদের।

তবে নির্বাচকরা আস্থা রেখেছেন এই পেসারের উপর। ইনজুরি কাটিয়ে মাঠে ফেরায় তাকে বিশ্বকাপের টিকেট তুলে দিয়েছেন নির্বাচকরা। এর আগে, ২০১৫ বিশ্বকাপেও আফগান দলে ছিলেন হামিদ হাসান। ওই আসরে আফগানদের হয়ে ৬টি ম্যাচেই মাঠে নামেন তিনি।

এর এই ৬ ম্যাচে ৫.১২ ইকোনমি রেটে ঝুলিতে ৮ উইকেট রয়েছে হামিদের। এদিকে একের পর এক ইনজুরিতে আক্রান্ত হওয়া হামিদ এই বিশ্বকাপ শেষেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় জানাবেন বলে ইতোমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছেন।

মোহাম্মদ নবী (আফগানিস্তান)আফগানিস্তান ক্রিকেটের উত্থান থেকে দলটির সঙ্গে আছেন মোহাম্মদ নবী। তবে দেখতে দেখতে বয়স এখন প্রায় ৩৫! সুতরাং, জাতীয় দলের হয়ে এটাই হতে চলেছে নবীর শেষ বিশ্বকাপ। বিশ্বকাপে আফগানরা প্রথম অংশ নেয় ২০১৫ সালে।

ওই আসরে দলের অধিনায়ক ছিলেন নবী। তবে মনে রাখার মতো তেমন কোনো পারফরম্যান্স উপহার দিতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচ খেলে নবীর ব্যাট থেকে এসেছে ৯০ রান, সেরা ৪৪। আর বল হাতে এসেছে মাত্র ৩ উইকেট।

এসএস/আইএইচএস/জেআইএম