দেশজুড়ে

‘বিশেষ কোটা’ চান চা-শ্রমিকরা

আসন্ন জাতীয় বাজেটে চা-বাগানের শিক্ষাখাতে বিশেষ বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন সিলেটের বিভিন্ন চা-বাগানের শ্রমিকরা।

Advertisement

রোববার দুপুরে এ দাবিতে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে চা-বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদ। তাদের স্মারকলিপিটি গ্রহণ করেন সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক সন্দ্বীপন সিংহ।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, বর্তমানে বাংলাদেশের প্রধান অর্থকরী ফসল চা। চা-জনগোষ্ঠীর অমানুষিক পরিশ্রমে শুধু নান্দনিক সৌন্দর্যের চা-বাগানই গড়ে উঠছে না, সচল হচ্ছে দেশের অর্থনীতির চাকা।

দেশের স্বাধীনতা সংগ্রামসহ সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনে রয়েছে চা-জনগোষ্ঠীর বীরত্বপূর্ণ অংশগ্রহণ। অথচ দুঃখজনক হলেও সত্য যে স্বাধীনতার ৪৮ বছর পরও শিক্ষাসহ সব মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত চা-শ্রমিকরা।

Advertisement

সারাদেশের ১৬৬টি চা-বাগানের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে মাত্র ১২ থেকে ১৪টিতে। আর মাধ্যমিক স্কুল আছে তিনটিতে। অথচ সংবিধানের ১৭ নম্বর অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, রাষ্ট্রে একই পদ্ধতির গণমুখী ও সর্বজনীন শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য এবং আইনের দ্বারা নির্ধারিত স্তর পর্যন্ত সকল বালক-বালিকাকে অবৈতনিক ও বাধ্যতামূলক শিক্ষাদানের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।

তবে সংবিধানের এ ঘোষণা চা-বাগানে আজও কার্যকর হয়নি। শুধু তাই নয়, ১৯৯০ সালে বাংলাদেশ সরকারের ‘বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা’ কর্মসূচিও বাস্তবায়ন করা হয়নি চা-বাগানে।

এরপরও বাগানের যেসব শিক্ষার্থী পড়াশোনা করেন, আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে শিক্ষার উপকরণই তারা ক্রয় করতে পারে না। তাই বাগান কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে শিক্ষাবৃত্তি চালু ও বিনামূল্যে শিক্ষা উপকরণ সরবরাহ করা প্রয়োজন। আবার এদের মধ্যে যারা এতো বাধা অতিক্রম করেও উচ্চ শিক্ষা নিতে কিংবা রাষ্ট্রীয় কোনো আয়োজনে অংশ নিতে যান, শুরু থেকেই তারা পিছিয়ে থাকেন। তাই স্মারকলিপিতে পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর সামগ্রিক বিকাশের স্বার্থে উচ্চশিক্ষা ও চাকরির ক্ষেত্রে ‘বিশেষ কোটা’ পদ্ধতি অবিলম্বে চালু করার দাবি জানানো হয়।

অন্যদিকে যে ভূমির ওপর চা-শ্রমিকরা প্রায় দেড়শ বছরের অধিক সময় থেকে বাস করে আসছেন, সেই ভূমিতে তাদের কোনো অধিকার নেই। আবার চা-বাগানের অনেক কর্মক্ষম তরুণ-তরুণী আছেন যাদের উপযুক্ত কোনো কাজের সুযোগ নেই। পিছিয়ে পড়া এ জনগোষ্ঠীর জন্য প্রয়োজন রাষ্ট্রীয় বিশেষ আয়োজন। তাই আসন্ন জাতীয় বাজেটে চা-বাগানের শিক্ষাক্ষেত্রে বিশেষ বরাদ্দ দিয়ে এ জনগোষ্ঠীর শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়নে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়ার দাবি জানানো হয়।

Advertisement

এর আগে বেলা ১টার দিকে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে বিভিন্ন চা-বাগানের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে একটি পথসভা অনুষ্ঠিত হয়। অধীর বাউরীর সভাপতিত্বে ও রানা বাউরীর পরিচালনায় এ পথসভায় উপস্থিত ছিলেন- চা-বাগান শিক্ষা অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের সংগঠক সঞ্জয় কান্ত দাস, বিশ্বজিৎ শীল, মালনিছড়া বাগান শাখার সংগঠক সঞ্জিত বাউরী, লাক্কাতুরা বাগানের সংগঠক অংকন নায়েক, লালাখাল বাগানের সংগঠক সুমন মৃধা, হিলুয়াছড়া বাগান শাখার সংগঠক রঞ্জু গঞ্জু, খান বাগানের সংগঠক জীবন রায়, দলদলি বাগানের সুচিত্রা লোহার ও ছড়াগাং বাগানের রিপন কুর্মী প্রমুখ।

সভা শেষে একটি র‌্যালি বের করা হয়। র‌্যালিটি নগরের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়। পরে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে অর্থ মন্ত্রণালয় বরাবরে স্মারকলিপিটি দেয়া হয়।

ছামির মাহমুদ/এএম/পিআর