বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেছেন, কৃষক ধানের দাম না পেয়ে ধানক্ষেতে এবং ধানের বস্তায় আগুন দিচ্ছে। আর খাদ্যমন্ত্রী, কৃষিমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী কেউই দায় না নিয়ে বেফাস মন্তব্য করছেন। ব্যর্থতার দায় নিয়ে এ মন্ত্রীদের পদত্যাগ করা উচিত।
Advertisement
রাজধানীর পল্টনের মৈত্রী মিলনায়তনে রোববার অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তারা।
বাম গণতান্ত্রিক জোটের নেতারা বলেন, কৃষকের মনের আগুন নেভাতে ব্যর্থ হলে সরকারের গদিতে আগুন লেগে যাবে। দাম না পেয়ে যদি কৃষক উৎপাদনে নিরুৎসাহিত হয় তাহলে দেশ খাদ্যনিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়বে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন তারা। অবিলম্বে ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত, ধান ক্রয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি ও ক্রয়কেন্দ্র খুলে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান কেনারও দাবি জানান নেতারা।
লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বাম জোটের সমন্বয়ক ও বাসদ নেতা বজলুর রশীদ ফিরোজ। বক্তব্য দেন শাহ আলম ও সাইফুল হক। সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন অধ্যাপক আব্দুস সাত্তার, মানস নন্দী, হামিদুল হক, লিয়াকত আলী, সাজ্জাদ জহির চন্দন, অনিরুদ্ধ দাস অঞ্জন, রুহিন হোসেন প্রিন্স, জুলফিকার আলী, খালেকুজ্জামান লিপন, শম্পা বসু, আকবর খান, আনসার আলী দুলাল প্রমুখ।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনে বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, ‘সরকার ঋণখেলাপিদের শাস্তি না দিয়ে উল্টো ২% ডাউন পেমেন্টে রিশিডিউল করে ১০ বছরের জন্য পুনরায় লুটপাটের সুযোগ করে দিচ্ছে। এটা দেশের ব্যাংক ও আর্থিক খাতকে ছোবড়া করে দেবে।’
ব্যাংক ও আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা আনতে ঋণখেলাপিদের পুরস্কৃত নয়, শাস্তি দিতে হবে এবং তাদের স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ বাজেয়াপ্ত করার দাবি জানান তিনি।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সাইফুল হক বলেন, ‘দেশে বিদ্যমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সঙ্কটের জন্য দায়ী গত ৩০ ডিসেম্বর ২০১৮ অনুষ্ঠিত ভোট ডাকাতির নির্বাচনে অধিষ্ঠিত সরকার। ভোট ডাকাতির মাধ্যমে ক্ষমতায় এসে আওয়ামী লীগ দেশে ফ্যাসিবাদী দুঃশাসন প্রতিষ্ঠা করেছে। এর অবসানের জন্য দ্রুত বর্তমান সংসদ ভেঙে দিয়ে দল নিরপেক্ষ তদারকি সরকারের অধীনে পুনরায় নির্বাচন দিতে হবে।’
এক প্রশ্নের জবাবে শাহ আলম বলেন, ‘দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকরা তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধসহ ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করছেন। সরকার বার বার প্রতিশ্রুতি দিয়েও তাদের দাবি মানছে না। ষড়যন্ত্র করছে পাটকলগুলো বিক্রির।’ অবিলম্বে পাটকল শ্রমিকদের ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
Advertisement
সংবাদ সম্মেলনের লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, দেশে নারী-শিশু নির্যাতন ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এটা বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ দরকার। প্রয়োজনে নতুন আইন প্রণয়ন ও দল মত নির্বিশেষে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করার দাবি জানানো হয়। লিখিত বক্তব্যে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ, বাজার সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, ভেজালমুক্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করারও দাবি জানানো হয়।
লিখিত বক্তব্যে আরও বলা হয়, দুর্নীতি আজ মহামারি রূপ নিয়েছে। যত বড় প্রকল্প তত বড় দুর্নীতি, মেগা প্রকল্পে মেগা দুর্নীতি, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের বালিশ কাণ্ড দুর্নীতির একটি প্রতীক মাত্র। সংবাদ সম্মেলনে দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানো হয়।
এদিকে ২৯ মে সকাল সাড়ে ১০টায় প্রগতি সম্মেলন কেন্দ্রে বাজেট নিয়ে ‘জনগণের জন্য কেমন বাজেট চাই’ শীর্ষক এক মতবিনিময় সভার আহ্বান করা হয়। এ ছাড়া ২৮ মের মধ্যে পাটকল শ্রমিকদের বকেয়া বেতনসহ ৯ দফা দাবি মেনে নেয়ার দাবি জানানো হয়। না হলে ৩০ মে বিজিএমসি কার্যালয়ের সামনে অবস্থান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয়া হয়।
একই সঙ্গে কৃষকের ধানের লাভজনক দাম নিশ্চিত, ঋণখেলাপি এবং দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিলে ঈদের পর বাংলাদেশ ব্যাংক, দুদক কার্যালয়, খাদ্য মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয় ঘেরাওসহ বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি দেয়া হবে বলেও ঘোষণা দেয়া হয়।
এফএইচএস/এনডিএস/জেআইএম