‘একটা খবর আছে। যদিও এটি আরও পরে দিতে চেয়েছিলাম। তবু আজ বলে যাই। কারণ এখানে নির্মাতা, অভিনেতাসহ টেলিভিশনের সংস্কৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষেরা আছেন। সবাইকে জানাচ্ছি যে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারের মত এবার জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার চালুর পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা। বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন।’
Advertisement
গতকাল শনিবার (২৫ মে) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশানের ইমানুয়েলস কনভেনশন সেন্টারে টেলিভিশন নাটকের নির্মাতাদের সংগঠন ডিরেক্টরস গিল্ড আয়োজিত মতবিনিময় সভায় এই মন্তব্য করেন তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
‘টেলিভিশন নাটকে পেশাদারিত্বের সংকট এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক সভায় চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম, আলী ইমাম, ইমদাদুল হক মিলন, লাকী ইনাম, সুবর্ণা মুস্তাফা এমপি উপস্থিত ছিলেন।
আরও উপস্থিত ছিলেন ডিরেক্টরস গিল্ডের সভাপতি সালাউদ্দিন লাভলু, সাধারণ সম্পাদক এস এ হক অলীক, গাজী রাকায়েত, অভিনেতা ও নির্মাতা মাহফুজ আহমেদসহ ছোটপর্দার নির্মাতাসহ নাট্যঙ্গনের অনেকেই।
Advertisement
সভায় চলতি বছর সংস্কৃতিকর্মীদের মধ্য থেকে একুশে পদকপ্রাপ্তদের সম্মাননা দেওয়া হয়। সম্মাননা শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের কাছে নাটকের বর্তমান অবস্থার প্রসঙ্গ ধরে বেশকিছু দাবি-দাওয়া তুলে ধরে ডিরেক্টর'স গিল্ড।
সেই দাবির ভিত্তিতে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমি মন্ত্রী পদে এখানে নতুন হলেও গত ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি দলে প্রচার সম্পাদকের কাজ করছি। সেই কারণেই নাট্যাঙ্গনের অবস্থা সম্পর্কে আমার জানার সুযোগ হয়েছে।’
আমরা বাঙালিরা সংস্কৃতি লালন পালন ও সংরক্ষণ-অনুশীলনে কলকাতার চেয়ে এগিয়ে আছি। এর কারণ আমাদের নির্মাতাদের কাজের মান। আমাদের নির্মাতাদের অল্প বাজেটের কাজও আন্তর্জাতিক পুরস্কার পায়।
কিন্তু নানা সমস্যার মুখে এখানে যে দাবি-দাওয়া তুলে ধরা হয়েছে এগুলো সম্পর্কে আমি জানি। নির্বাচনী প্রচারণার সময় শিল্পীরা আমার সঙ্গে কাজ করেছেন। সেই সুবাদে আমি অনেককেই চিনি এবং জানি। প্রথম কথা হচ্ছে আজকে যে নাটক বানানোর খরচ কমে গেছে, এগুলো বিক্রি করে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
Advertisement
সব কিছুর মূল কারণ হচ্ছে এই সেক্টরটি এখন আনহেলদি সিচুয়েশন বিরাজ করছে।
টেলিভিশন চ্যানেল বেড়েছে কিন্তু টেলিভিশন চ্যনেলের যে বাজারটা তৈরি হওয়া দরকার ছিল সেটা তৈরি হয়নি। বরং আরও সংকুচিত হয়েছে। সেই কারণেই টেলিভিশন চালাতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে মালিকপক্ষকে।
নাটকের বর্তমান অবস্থা এমন হওয়ার কারণ তুলে ধরে মন্ত্রী আরও বলেন, ‘দেশের বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে বিদেশি চ্যানেলে। দেশের টাকা বিদেশে পাচার হচ্ছে। এগুলো কীভাবে পে করে সেটারও কোনো স্বচ্ছতা ছিল না। পুরো পৃথিবীতে আইন আছে। ভারতেই অন্য কোনো দেশের বিজ্ঞাপন প্রচার করতে পারে না।
আমাদের দেশের বিজ্ঞাপন যদি ইউকেতে যায় তাহলে প্রদর্শন করতে পারে না। যদি কন্টিনেন্টাল ইউরোপে যায় প্রদর্শন করতে পারে না।’
তিনি আরও বলেন, আমাদের দেশে আইন অমান্য করে এগুলো চলছিল; আমরা সেটা বন্ধ করার পদক্ষেপ নিয়েছি। আপনারা জানেন এক চ্যানেল অন্য চ্যানেলের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে গিয়েও বিজ্ঞাপন রেট কমেছে। সোশ্যাল মিডিয়ারও প্রভাবও পড়েছে। যে কারণে সব বিজ্ঞাপন চলে যাচ্ছে ফেসবুক, ইউটিউব কিংবা নেটফ্লিক্সসহ অন্যান্য প্ল্যাটফর্মে।
এতে টেলিভিশনে বিজ্ঞাপনের রেট অনেক কমে যাচ্ছে। আমাদের সম্প্রচার নীতিমালা আছে এবার আমরা সম্প্রচার আইন করতে যাচ্ছি। কোন ধরনের অনুষ্ঠান চলবে, কোন ধরনের অনুষ্ঠান বর্জন করতে হবে, বিজ্ঞাপন কীভাবে চলবে এগুলো আইন আকারে পাস হবে। নীতিমালার আলোকেই আপনাদের পরামর্শেই আইন হবে।
আমি মনে করি আবারও সুদিন ফিরবে নাটকের মানুষদের। আর একটা বিষয় এখনই আমি বলতে চাচ্ছিলাম না কিন্তু তারপরও বলি সেটা হচ্ছে জাতীয় চলচ্চিত্রের মতো এবার জাতীয় টেলিভিশন পুরস্কার চালুর পদক্ষেপ নিয়েছি আমরা। বিভিন্ন প্রসেসে এটার আলোচনা চলছে।’
মন্ত্রির এই ঘোষণার পর হাততালিতে মুখরিত হয়ে উঠে মিলনায়তন।
এলএ/পিআর