রাজধানীতে থাকা বাবা-মা, ভাই আর নিজের জন্য টিকিট কাটবেন মো. রজমান। জামালপুরে থাকা পরিবারের অন্য সদস্য ও আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে ঈদ করতে যাবেন তারা। এজন্য ট্রেনের টিকিট কাটতে শনিবার (২৫ মে) দুপুর আড়াইটার দিকে রাজধানীর তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে আসেন তিনি। একদিন আগে আসার পরও তার সিরিয়াল ৩৩ নম্বরে। রোববার (২৬ মে) বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত টিকিটের সন্ধান পাননি রমজান।
Advertisement
তিনি বলেন, ‘শনিবার বেলা আড়াইটার দিকে এসেছি। তারপর থেকে এখানেই দাঁড়িয়ে আছি। কোনো ঘুম নাই, কিচ্ছু নাই।’
আজ রোববার (২৬ মে) আগামী ঈদ উপলক্ষে ময়মনসিংহ ও জামালপুরের ৪ জুনের অগ্রীম টিকিট বিক্রি হচ্ছে তেজগাঁও স্টেশনে। আজই শেষ হবে ঈদ উপলক্ষে ট্রেনের অগ্রীম টিকিট বিক্রি। সকাল ৯টায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়। এরপর ঈদের অগ্রীম টিকিট নাও মিলতে পারে টিকিট প্রত্যাশীদের ভাগ্যে।
টিকিট প্রত্যাশীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রোববার ৪ জুনের টিকিট কাটতে আসাদের অধিকাংশই শনিবার এসেছেন। কেউ কেউ সাহেরির পর স্টেশনের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। কেউ কেউ ২০-২২ ঘণ্টা ধরে টিকিটের প্রত্যাশায় এখানে অবস্থান করছেন বলেও জানান।
Advertisement
শনিবার সকাল ৮টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদ এলাকা থেকে তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে এসেছেন জালাল। তিনি নিজের ও তার বাবা-মা আর স্ত্রীর জন্য ট্রেনের টিকিট কাটবেন।
জালাল বলেন, ‘সন্তানরা থাকে গ্রামের বাড়ি জামালপুরের ইসলামপুরে। পরিবারের সব সদস্য এক সঙ্গে ঈদ করব। তাই টিকিট কাটতে আসছিলাম।’
‘এখানে প্রচুর ভোগান্তি। ভোগান্তির শেষ নাই। গ্রামে ফ্যামিলি আছে। যাওয়া লাগবেই’ -যোগ করেন সিরিয়ালের ৮৮ নম্বরে থাকা জালাল।
হতাশার সুরে তিনি বলেন, ‘এহনই তিস্তার টিকিট শেষ। ব্রহ্মপুত্র বা স্পেশালের টিকিট যে পামু, তার তো নিশ্চয়তা পাচ্ছি না।’
Advertisement
রমজানের অভিযোগ, ‘অনিয়ম হচ্ছে। বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। আমার সিরিয়াল ৮৮। সিরিয়াল আগাচ্ছে না। আবার শুনতেছি, তিস্তার টিকিট শেষ হয়ে গেছে।’
তারও অসহায় উক্তি, ‘যেতে হবে তো, যেতে হবে না? বছরের একটা ঈদ। টিকিট ছাড়া পরিবার নিয়ে যাব কীভাবে?’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, তেজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনে আসা টিকিট প্রত্যাশীদের একাংশের উদ্যোগে এখানে সিরিয়াল করা হয়েছে।
তবে সেই সিরিয়ালে অনিয়মের অভিযোগ করছেন আগতের কেউ কেউ। তাদের অভিযোগ, অনেকে তার পরে এসেও আগের সিরিয়াল পেয়েছেন। অনেকের সিরিয়াল আগে থাকলেও দাঁড়িয়ে আছেন, পেছনের সারিতে।
লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা মো. মানিক কিছুক্ষণ পরপরই দেয়ালে হাত ঠুকছিলেন। জামালপুরের ইসলামপুরের দেওয়ানগঞ্জে পরিবারের সঙ্গে ঈদ করবেন এই প্রত্যাশায় নারায়ণগঞ্জে থাকা স্ত্রী, শালিকা, ভায়রা আর নিজের জন্য টিকিট কাটতে এসেছেন তিনি।
মানিক বলেন, ‘এইহানে গতকাল বিকেল ৫টার দিকে আসছি। রাইতে লাইলে দাঁড়াইছি। সিরিয়ালে না থাকলে ঝামেলা। হেরলাইগা দাঁড়াইয়াই আছি। কিন্তু টিকিট পামু কি পামু না, এহনও কহার পাইতাছি না।’
এর আগে শনিবার তেজগাঁও স্টেশনে বেলা আড়াইটা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা যায়, ওই দিন বেলা আড়াইটার দিকে দুটির মধ্যে একটি সারির পুরো টিকিট শেষ হয়ে যায়। তখন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা পঞ্চাশের অধিক টিকিটপ্রত্যাশী টিকিট না পেয়ে ফিরে যান এখন থেকে। আর অন্য সারিতে তখন শুধু ঈদ স্পেশালের টিকিট বিক্রি হচ্ছিল। সারিতে থাকা শতাধিক যাত্রীরা তখন আশঙ্কা করছিলেন, স্পেশালের টিকিটও দ্রুত শেষ হবে। তারাও পাবেন না।
আজ রোববার ও অগ্রীম টিকিট বিক্রির শেষ দিনে আগের দিনগুলোর চেয়ে বেশি ভিড় পরিলক্ষিত হয়েছে এ স্টেশনে।
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে গত ২২ মে (বুধবার) থেকে চলছে ট্রেনের অগ্রীম টিকিট বিক্রি। ২২ মে বিক্রি করা হয় ৩১ মের টিকিট। এরপর ২৩ মে বিক্রি হয় ১ জুনের, ২৪ মে বিক্রি হয় ২ জুনের, ২৫ মে বিক্রি হয় ৩ জুনের এবং আজ ২৬ মে বিক্রি হচ্ছে ৪ জুনের টিকিট।
পিডি/এমবিআর/এমএস