রমজান মাসের ২০ রোজায় ইতেকাফ শুরু করে মুমিন। এদিন ইফতারের আগেই ইতেকাফে আগ্রহীদের মসজিদে চলে যেতে হয়। ইতেকাফই একমাত্র ইবাদত, যার ফলে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার একান্ত নিবিড় সর্ম্পক তৈরি হয়। মুমিন পায় মহান প্রভুর একান্ত সান্নিধ্য।
Advertisement
আল্লাহর সঙ্গে বান্দার ঘনিষ্ট সম্পর্ক তৈরির পাশাপাশি ইতেকাফের অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো পবিত্র লাইলাতুল কদর পাওয়া। এ রাত যে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম।
প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম রোজা ফরজ হওয়ার পর থেকে ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত ইতেকাফ ছাড়েননি। আর তাইতো ইসলামিক স্কলারদের ভাষায় রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফে অতিবাহিত করা সুন্নাতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া।
যারা নিজেদেরকে ইতেকাফের মাধ্যমে মসজিদে আবদ্ধ করে রাখে, তাদের সঙ্গে আল্লাহর সম্পর্ক না হয়ে পারে না। আর তারা নিশ্চয়ই পবিত্র লাইলাতুল কদরের মতো মর্যাদার রাতের ফজিলতও লাভ করেন।
Advertisement
ইতিকাফ করবেন যে মসজিদেইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়, যে মসজিদে নিয়মিত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ জামাআতসহ আদায় করা হয় সে মসজিদে রমজানের শেষ দিন অবস্থান করা।
মসজিদ ছাড়াও নির্ধারিত স্থানে ইতেকাফ করা যায়। তবে মসজিদে ইতেকাফই উত্তম। কারণ মসজিদ মুত্তাকিদের ঘর। সুতরাং যারা ইবাদতের উদ্দেশ্যে মসজিদে ইতেকাফ করবে আল্লাহ তাআলা ওই বান্দার প্রতি অবিরত শান্তি ও রহমত নাজিল করবেন। পরকালের সব হিসাব-কিতাব সুসম্পন্ন করে জান্নাতে পৌছানোরও জিম্মাদার হবেন।
ইতেকাফের ধরনওয়াজিব ইতেকাফ : যদি কেউ কোনো কারণে নিয়ত করে ইতেকাফ করার ইচ্ছা করে। তবে তার জন্য ইতেকাফ আদায় করা ওয়াজিব। ওয়াজিব ইতেকাফ করার সময় দিনের বেলায় অবশ্যই রোজা রাখতে হবে।আবার কেউ যদি সুন্নাত ইতেকাফে থাকাবস্থায় ইতেকাফ ভঙ্গ করে তবে তার জন্য এ ইতেকাফ পুনরায় পালন করা ওয়াজিব বা আবশ্যক হয়ে যায়।
সুন্নাত ইতেকাফ : রমজানের শেষ ১০ দিন ইতেকাফ করা সুন্নাত। ২০ রমজান ইফতারের আগেই মসজিদে অবস্থান করতে হয়। আর শাওয়াল মাসের চাঁদ ওঠা পর্যন্ত এ ইতেকাফ পালন করতে হয়। যদি কেউ সুন্নাত ইতেকাফে বসে শাওয়ালের চাঁদ ওঠার আগেই ইতেকাফ ভঙ্গ করে তবে পরবর্তীতে এ ইতেকাফ আদায় করা ওই ব্যক্তির জন্য ওয়াজিব বা আবশ্যক।
Advertisement
নফল ইতেকাফ : সাধারণভাবে যে কোনো সময় ইতেকাফ করা নফল। এ ইতেকাফের নির্ধারিত কোনো সময় কিংবা দিন নেই। তা অল্প সময়ের জন্যও হতে পারে। এ কারণেই মসজিদে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে ইতেকাফের নিয়ত করা উত্তম।
রমজানের সুন্নাত ইতেকাফ কেন করবেন?রমজান মাসের শেষ দশকে রয়েছে এক মহিমান্বিত রাত ‘লাইলাতুল কদর’। কুরআনে কারিমে এ রাতকে হাজার মাসের চেয়ে উত্তম বলা হয়েছে। আর রাতটি রয়েছে রমজানের শেষ দশকের যে কোনো বেজোড় রাতে। তাইতো রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম লাইলাতুল কদর তালাশে শেষ দশক মসজিদে ইতেকাফে অতিবাহিত করতেন।
আরও পড়ুন > তাহাজ্জুদ নামাজে যে সুফল লাভ করে মুমিন
ইতেকাফের অন্যতম ফজিলত>> হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের উদ্দেশ্যে একদিন ইতেকাফ করে, আল্লাহ সেই ব্যক্তি ও জাহান্নামের মধ্যে ৩ খন্দক (এক খন্দকের দূরত্ব হলো পূর্ব থেকে পশ্চিম দিগন্তের চেয়ে বেশি) পরিমাণ দূরত্ব সৃষ্টি করেন।’ (তাবরানি ও মুসতাদরাকে হাকেম)
>> হজরত আলি বিন হোসাইন রাদিয়াল্লাহু আনহু নিজ পিতা থেকে বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ হলো দুই হজ ও দুই ওমরার সমান’ (বায়হাকি)
>> হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘ইতেকাফকারী গোনাহ থেকে বিরত থাকে। তাকে সব নেক কাজের কর্মী বিবেচনা করে অনেক সাওয়াব দেয়া হবে।’ (ইবনে মাজাহ)
আরও পড়ুন > পুরো রোজায় যে বিশেষ দোয়াগুলো পড়বেন
ইতেকাফের শর্ত>> মুসলমান হওয়া।>> জ্ঞানবান হওয়া অর্থাৎ পাগল না হওয়া।>> বালেগ বা প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়া।>> ইতেকাফের নিয়ত করা।>> ইতেকাফের সময় ফরজ গোসলসহ হায়েজ নেফাস থেকে পবিত্র হওয়া।>> মসজিদে ইতিকাফ করা।- ইমাম মালেক রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে জামে মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম।- ইমাম আবু হানিফা ও ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাহমাতুল্লাহি আলাইহির মতে যে মসজিদে জামাআতের সঙ্গে নামাজ হয় না, সে মসজিদে ইতিকাফ জায়েজ নেই।>> ইতেকাফকালীন সময়ে রোজা রাখা।
নারীদের ইতেকাফনিজ নিজ ঘরে নির্ধারিত স্থানে ইতেকাফ করবে। ইতেকাফ চলাকালীন সময়ে হাজত ছাড়া নির্ধারিত স্থান ছেড়ে কোথাও আসা-যাওয়া না করে ইবাদত-বন্দেগিতে লিপ্ত থাকা। শরিয়তের কোনো ওজর ছাড়া নির্ধারিত স্থান ছেড়ে অন্য কোথাও না যাওয়া। এমনকি ওই নির্ধারিত স্থানেই রাতে ঘুমানো।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে ইতেকাফের ফজিলত লাভে যথাযথ নিয়ম মেনে ইতেকাফে অংশগ্রহণ ও পবিত্র লাইলাতুল কদর পাওয়ার মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক গভীর করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
এমএমএস/এমএস