আনন্দে ভাসছে ১২ ঘণ্টা দোকানে কাজ করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পাওয়া মো. বুলবুল হোসেন (১৬) ও তার পরিবার। অর্থের অভাবে এখন আর বন্ধ হবে না তার পড়ালেখা। পড়াশোনার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করে যাওয়া বুলবুলের প্রতি সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে চান দু’জন হৃদয়বান মানুষ।
Advertisement
এবারের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হলেও অর্থের অভাবে বুলবুলের উচ্চ মাধ্যমিকে ভর্তি হওয়া দুরহ বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। দুশ্চিন্তায় পড়েন মেধাবী বুলবুলের বাবা-মা। কে নেবে বুলবুলের পড়ালেখার খরচ বহনের দায়িত্ব? বুলবুকে নিয়ে গত ৮ মে জাগো নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এরপর আরো কয়েকটি দৈনিকে সংবাদ প্রকাশ হয়। প্রতিবেদন পড়ে এরই মধ্যে দু’জন বুলবুলের দিকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তারা হলেন, গৌরনদীর কৃতি সন্তান সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. নাসির উদ্দিন ও ঝালকাঠি জেলার নলছিটি উপজেলার বাসিন্দা বর্তমানে চট্টগ্রামের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান জয়। তারা দু’জনই মেধাবী বুলবুলের পড়ালেখার খরচ বহন করতে চান।
ব্যবসায়ী আসাদুজ্জামান জয় জানান, গণমাধ্যমে প্রকাশ হওয়া প্রতিবেদনটি পড়েছি। তার প্রতিবেদনটি পড়ে আমার মনে নাড়া দিয়েছে। শুধুমাত্র অর্থের অভাবে বুলবুলের পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যাবে ভেবেই মন খারাপ হয়ে গেছে। ফোন নম্বর সংগ্রহ করে শনিবার সন্ধ্যায় বুলবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। বলেছি উচ্চ মাধ্যমিকের বই কেনা থেকে পড়ালেখার যাবতীয় খরচ এখন থেকে আমি বহন করব।
একইভাবে সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব ড. মো. নাসির উদ্দিন মেধাবী বুলবুলে পড়ালেখার যাবতীয় খরচ বহনের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।
Advertisement
এদিকে সহায়তার আশ্বাসে খুশির জোয়ারে ভাসছে বুলবুলের পরিবার। বুলবুলকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করায় জাগো নিউজের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান তারা।
গৌরনদী উপজেলা সদরের ওয়েভ সিনেপ্লেক্সের পাশের একটি ঝুপড়ি ঘরে থাকে বুলবুল। তার সঙ্গে থাকে বাবা-মা। বাবা মো. খলিলুর রহমান সরদার হৃদরোগসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত। বছর খানেক ধরে কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। আগে একটি প্রাইভেট ক্লিনিকে রোগীদের সিরিয়াল লিখে কিছু অর্থ রোজগার করতেন। মা আলেয়া বেগম সেলাইয়ের কাজ করেন। কিন্তু তাতে তাদের সংসার চলে না। পরিবারের আর্থিক অবস্থার কারণে ক্লাস নাইনে পড়ার সময় থেকে গৌরনদী বাসস্ট্যান্ডের ব্যবসায়ী মামুনুর রশিদ মান্নার মোবাইল ফোন বিক্রির প্রতিষ্ঠান মান্না স্মার্ট গ্যালারিতে সেলসম্যান হিসেবে চাকরি নেয় বুলবুল।
বুলবুল জানায়, বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র-ছাত্রীরা যেমন সব বিষয়ে প্রাইভেট পড়ে, আমি তেমন সুযোগ পাইনি। সে সক্ষমতাও ছিল না আমার পরিবারের। পড়াশোনার জন্য রীতিমতো সংগ্রাম করতে হয়েছে। আমার অসহায় অবস্থা ও অতীতের ভালো ফলাফলের কথা জানতে পেরে সরকারি গৌরনদী কলেজের ইসলামের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মো. ইউনুস আলী প্রাইভেট পড়াতেন। বিনিময়ে কিছু দেয়া লাগতো না।
জাগো নিউজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বুলবুল জানায়, ভবিষ্যতের পড়ালেখা নিয়ে অন্ধকার দেখছিলাম। এখন সামনে শুধুই মনযোগ দিয়ে পড়াশোনা করার স্বপ্ন দেখছি। পড়ালেখা নিয়ে আর কোনো চিন্তা নেই। এ আনন্দের কথা আমি কাউকে বলে বোঝাতে পারব না। আজকের দিনটি আমার জন্য স্মরণীয়। যারা সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা আর শ্রদ্ধা জানানোর ভাষা নেই।
Advertisement
বুলবুল জানায়, আমার স্বপ্ন মানুষের মতো মানুষ হওয়ার। এজন্য আমি ডাক্তার হতে চাই। মানুষের সেবা করতে চাই। আমার জন্য দোয়া করবেন।
এফএ/এমএস