খেলাধুলা

আশরাফুলের ব্যাটে উড়ে গেলো দক্ষিণ আফ্রিকা

* ২০০৭ বিশ্বকাপের সুপার এইটের ম্যাচ। প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা

Advertisement

২০০৭ বিশ্বকাপে যেন উড়ছিল বাংলাদেশ। ভারতকে হারিয়ে শুরু। এরপর বারমুডাকে হারিয়ে নিশ্চিত করলো সুপার এইট। ভারতকে বিদায় করে দিয়ে বাংলাদেশ গ্রুপ রানারআপ হিসেবে নিশ্চিত করলো শেষ আটে খেলা। বাংলাদশের সাফল্যের মুকুটে যোগ হলো আরও একটি পালক।

সুপার এইটে গিয়েও যে বাংলাদেশ চমক দেখিয়ে দেবে, সেটা সম্ভবত কেউ ভাবতেই পারেনি। দক্ষিণ আফ্রিকার মত পরাশক্তিতে হারিয়ে দিয়েছে সুপার এইটে। সুপার এইটে আরও একটি ম্যাচ জেতার সামর্থ্য ছিল বাংলাদেশের। সেটা আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে। কিন্তু প্রোটিয়াদের হারাতে পারলেও আইরিশদের সুপার এইটে হারাতে পারেনি টাইগাররা।

সে যাই হোক, গ্রুপ পর্বের শুরুতে ভারতকে হারানোর কারণে যে সঞ্জীবনি শক্তি সঞ্চার হয়েছিল হাবিবুল বাশারদের মধ্যে, তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটলো প্রোটিয়াদের বিপক্ষে ম্যাচে।

Advertisement

গায়ানার প্রোভিডেন্স স্টেডিয়ামে প্রোটিয়া অধিনায়ক গ্রায়েম স্মিথ টস জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ে পাঠিয়েছিলেন। তার আশা ছিল, বাংলাদেশকে দ্রুত অলআউট করে দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে ম্যাচটা জিতে নেয়া এবং একই সঙ্গে রানরেটও বাড়িয়ে নেয়া।

শন পোলক, মাখায়া এনটিনি, আন্দ্রে নেল, জ্যাক ক্যালিস, চার্ল ল্যাঙ্গাভেল্টদের নিয়ে সাজানো বিশ্বখ্যাত বোলিং লাইনআপ। তাদের ওপর তো স্মিথ ভরসা করতেই পারেন। কিন্তু এই বোলিং লাইনআপকেই বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে দিলো সেদিন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। বরেং, উইকেট নেয়ার জন্য গ্রায়েম স্মিথ পর্যন্ত ৩ ওভার বল করলেন। জাস্টিন কেম্প করলেন ১ ওভার।

প্রোটিয়া পেসার শন পোলক, মাখায়া এনটিনি জুটিতে থোড়াই কেয়ার করে ওপেনিং জুটিতে জাভেদ ওমর বেলিম এবং তামিম ইকবাল তুলে ফেলেন ৪২ রান। তবে ১৭ রানে জাভেদ ওমর আউট হয়ে ওপেনিং জুটি ভাঙার পর মাঝে কিছুটা বিপর্যয়ে পড়ে টাইগাররা। হাবিবুল বাশার ৫ এবং সাকিব আল হাসান আউট হয়ে যান ৯ রান করে। তামিম ইকবালও ফিরে যান এ সময়ে। তিনি করেন ৩৮ রান।

এরপরই মূলতঃ আসল খেলাটা শুরু করে দেন আশরাফুল। ৫ নম্বরে ব্যাট করতে নামেন তখনকার বাংলাদেশ দলের সেরা ব্যাটসম্যান আশরাফুল। ৪ উইকেটে ৮৪ রান থেকে আফতাব আহমেদকে নিয়ে ৭৬ রানের দুর্ধর্ষ এক জুটি গড়ে তোলেন আশরাফুল।

Advertisement

বলতে গেলে আশরাফুল একাই দলকে টেনেই তোলেন। ফাইন লেগ দিয়ে অভাবনীয় সব শর্ট কিংবা মাথার ওপর দিয়ে স্কুপ খেলে তাক লাগিয়ে দেন বাংলাদেশের প্রথম সুপার স্টার। ৮৩ বলে ১২ বাউন্ডারির সাহায্যে আশরাফুলের ব্যাট থেকে আসে ৮৭ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস। আফতাব আহমেদ করেন ৪৩ বলে ৩৫ রান। শেষ দিকে ব্যাট করতে নেমে মাশরাফিও বিধ্বংসী হয়ে ওঠেন। ১৬ বলে তিনি করেন ২৫ রান।

এই কয়েকটি ইনিংসের ওপর ভর করেই শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়ে যায় ২৫১ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর। প্রোটিয়া বোলারদের মধ্যে আন্দ্রে নেলই একমাত্র সমীহ আদায় করতে পেরেছে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছ থেকে। ১০ ওভারে ৪৫ রান দিয়ে ৫ উইকেট নেন তিনি।

জবাব দিতে নামার আগেই কেন যেন একটা প্যানিক তৈরি হয়ে যায় প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের মধ্যে। বাংলাদেশের মাশরাফি, সৈয়দ রাসেল, আবদুর রাজ্জাকদের ঠিক মত খেলতেই পারছিল না তারা। রাজ্জাক, রাসেলের ঘূর্ণি আর তোপে শুরু থেকেই ব্যাকফুটে প্রোটিয়ারা। ১২ রানে গ্রায়েম স্মিথকে সৈয়দ রাসেল, ১৫ রানে এবি ডি ভিলিয়ার্সকে বোল্ড করেন আবদুর রাজ্জাক।

জ্যাক ক্যালিসকে তামিমের হাতে ক্যাচ দিতে বাধ্য করেন রাসেল। তিনি করেন ৩২ রান। এরপর জাস্টিন ক্যাম্প রিটার্ন ক্যাচ দেন সাকিব আল হাসানের হাতে। অ্যাশওয়েল প্রিন্স হলেন রানআউট। ১২ রান করে মার্ক বাউচার সাকিব আল হাসানের বলে ক্যাচ দিলেন সৈয়দ রাসেলের হাতে।

একা লড়াই করলেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান হার্শেল গিবস। তিনি শেষ পর্যন্ত ৫৬ রানে অপরাজিত থেকে যান। শন পোলক রান আউট হলেন ১৭ রানে। বাকি ব্যাটসম্যানরাও দাঁড়াতে পারেনি বোলারদের সামনে। শেষ পর্যন্ত ৪৮.৪ ওভারে মাত্র ১৮৪ রানে অলআউট দক্ষিণ আফ্রিকা।

৬৭ রানের বিশাল ব্যবধানে দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়ে চমকের ষোলকলা পূর্ণ করলো বাংলাদেশ। ২৫ রানে ৩ উইকেট তুলে নেন রাজ্জাক। সৈয়দ রাসেল আর সাকিব আল হাসান নেন ২টি করে উইকেট। মোহাম্মদ রফিক নেন ১ উইকেট। ৮৭ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলার কারণে একই বিশ্বকাপে দু’বার ম্যাচ সেরার পুরস্কার জিতে নেন মোহাম্মদ আশরাফুল।

সংক্ষিপ্ত স্কোরবাংলাদেশ: ২৫১/৮, ৫০ ওভার (আশরাফুল ৮৭, তামিম ৩৮, আফতাব ৩৫, মাশরাফি ২৫, জাভেদ ১৭, সাকিব ৯, মুশফিক ৬, হাবিবুল ৫, রফিক ৩, রাজ্জাক ২; নেল ৪৫/৫, ক্যালিস ২৭/১, এনটিনি ৬১/১)

দক্ষিণ আফ্রিকা: ১৮৪/১০, ৪৮.৪ ওভার (গিবস ৫৬*, ক্যালিস ৩২, পোলক ১৭, ডি ভিলিয়ার্স ১৫, স্মিথ ১২, লেঙ্গেভেল্ট ৯, এনটিনি ৮, কেম্প ৭, প্রিন্স ১, নেল ১; রাজ্জাক ২৫/৩, রাসেল ৪১/২, সাকিব ৪৯/২)।

ফল: বাংলাদেশ ৬৭ রানে জয়ী।ম্যান অব দ্য ম্যাচ: মোহাম্মদ আশরাফুল।

আইএইচএস/জেআইএম