দেশজুড়ে

ক্ষত শুকায়নি আইলার

২০০৯ সালের ২৫ মে। প্রতিদিনের মতো স্বাভাবিকভাবে দিন শুরু হয়। বেলা ১১টা থেকে নদীর পানি বাড়তে থাকে। পানির চাপে ভাঙতে শুরু করে উপকূল রক্ষা বেড়িবাঁধ। ধীরে ধীরে আকাশ মেঘলা হয়ে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি শুরু হয়। বিকেল ৫টার মধ্যে আইলার তাণ্ডবে ধ্বংসস্তূপে রূপ নেয় দুই শতাধিক গ্রাম। ওইদিন ৭৩ জন মারা যান। ভেসে যায় শতাধিক ঘের। ধসে পড়ে কাঁচা ঘরবাড়ি।

Advertisement

সর্বনাশা ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাস আইলায় লন্ডভন্ড হয়ে যায় দক্ষিণাঞ্চলের উপকূলীয় জনপদ। আইলার দশ বছর পরও উপকূলের দুর্গম এলাকার জনজীবনের ক্ষত আজও স্পষ্ট। আইলা মূলত আঘাত হানে খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরাসহ উপকূলীয় বেশ কয়েকটি জেলার বিস্তীর্ণ এলাকায়। আইলার আঘাতে সাতক্ষীরার উপকূলীয় এলাকা শ্যামনগর ও আশাশুনি উপজেলার ৭১১ কিলোমিটার বেড়িবাঁধ বিধ্বস্ত হয়।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুড়া, পদ্মপুকুর, বুড়িগোয়ালিনী, মুন্সীগঞ্জ ও আশাশুনি উপজেলার প্রতাপনগর, আনুলিয়া ইউনিয়নের হাজার হাজার মানুষ আজও তাদের ভিটায় পা রাখতে পারেনি। সাতক্ষীরা শহরসহ বিভিন্ন এলাকায় ভাড়াবাড়িতে জীবন যাপন করছেন তারা। এখনো আকাশে মেঘ ডাকলেই কপোতাক্ষ, খোলপেটুয়া ও শাকবাড়ীয়া নদীর তীরবর্তী মানুষরা আঁতকে ওঠেন। পানি একটু বাড়লেই ঘুম বন্ধ হয়ে যায় যাদের।

শ্যামনগর উপজেলার গাবুরা গ্রামের মো. আব্দুল্লাহ বলেন, ২০ বছরের আয় রোজগারের অর্থ দিয়ে একটি বাড়ির মালিক হয়েছিলাম। আইলার তাণ্ডবলীলার দুই দিন পর পাওয়া যায় শুধু বাড়ির নিশানাটুকু। ঘরের ভিটের চি‎হ্ন ছাড়া সম্বল বলতে কিছু ছিল না। আইলার ১০ বছর পর এখনো সেই মাটি আঁকড়ে পড়ে আছি। এরপর আর ঘর তোলা সম্ভব হয়নি।

Advertisement

২৫ মে পাউবোর বেড়িবাঁধ লন্ডভন্ড হয়ে প্রবল বেগে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করে প্লাবিত হয় উপকূলীয় বিস্তীর্ণ এলাকা। মুহূর্তেই হারিয়ে যায় লাখ লাখ মানুষের সহায় সম্বল। দশ বছর পরও মানুষ সেই ক্ষতি পুশিয়ে উঠতে পারেনি। ফিরে পায়নি উপকূলের মাটির ঊর্বরতা। এমনকি পাউবোর সেই বেড়িবাঁধগুলোও পুনর্নির্মাণ করা হয়নি।

দুর্গত এলাকার বাসিন্দারা বলেন, নলকূপের পানি খাওয়া যায় না। অনেক লবণাক্ত। একটু ভালো পানি খাওয়ার জন্য রীতিমতো আমাদের যুদ্ধ করতে হয়। ১০-১২ কি.মি হেঁটে খাবার পানি সংগ্রহ করতে হয় প্রতিদিন। তাছাড়া বাধ্য হয়েই পুকুরের পানি পান করতে হচ্ছে।

শ্যামনগরের গাবুরা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান জিএম মাসুদুল আলম জানান, দুর্গত এলাকায় এখনও খাবার পানির তীব্র সংকট। আইলায় মিষ্টি পানির আধারগুলো নষ্ট হয়ে গেছে। যেটুকু খাবার পানির ব্যবস্থা করা হয়েছে তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এলাকায় কাজ নেই রয়েছে বনদস্যুদের অত্যাচার। স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেনি উপকূলীয় এসব জনপদের মানুষ। বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।

শ্যামনগর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. কামরুজ্জামান বলেন, সরকারিভাবে মানুষদের নিরাপদে থাকার জন্য ৪০টি সাইক্লোন শেল্টার নতুন করে তৈরির পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। ঝুঁকিপূর্ণ বাঁধগুলো সংস্কারের জন্যও উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। নিরাপদ পানির জন্য পুকুর কাটা হচ্ছে। তবুও এসব এলাকার মানুষদের সমস্যার অন্ত নেই। তবে সরকার তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে।

Advertisement

আকরামুল ইসলাম/এফএ/জেআইএম