ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, ‘শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহ কমেছে। এইটা খুব জরুরি, কেবল শিক্ষা দিলে হবে না। দেখতে হবে যে ছেলেমেয়েরা সেই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারছে কি-না। আজকে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার যেভাবে বাড়ছে সেটা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী করে না। দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা সিভিল সার্ভিস প্রতিযোগিতা পরীক্ষা দেয়ার জন্য ব্যস্ত।’
Advertisement
শুক্রবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির আয়োজনে ‘আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ও করণীয়’ শীর্ষক মতবিনিময় ও ইফতার অনুষ্ঠানে প্রধান আলোচকের বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রের ক্যাফেটেরিয়াতে এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সভাপতি রায়হানুল ইসলাম আবিরের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাহদী আল মুহতাসিম নিবিড়ের সঞ্চালনায় অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান, উপ-উপাচার্য (প্রশাসন) অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ সামাদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক গোলাম রব্বানী, সাদা দলের যুগ্ম আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. লুৎফুর রহমান, বিটিভির মহাপরিচালক হারুন-অর-রশীদ, সমিতির প্রতিষ্ঠাতা সদস্য আফতাব উদ্দিন মানিক, সমিতির সাবেক যুগ্ম সাধরণ সম্পাদক আব্দুল হাকিম আবির প্রমুখ।
অনুষ্ঠানের শুরুতে ডাকসু নেতৃবৃন্দ, ক্যাম্পাসে ক্রিয়াশীল ছাত্র সংগঠন এবং সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আলোচনার বিষয়বস্তুর ওপরে প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন সাংবাদিক সমিতির সভাপতি।
Advertisement
প্রধান আলোচক হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, ‘এ র্যাংকিং কীভাবে হয়েছে সেটা আমরা নিশ্চিত জানি না। আমরা সব তথ্য সরবরাহ করতে পেরেছি কি না জানি না। টাইমস হায়ার এডুকেশনে গবেষণার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে আবার অন্য একটিতে শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস রুমের শিক্ষা এবং শিক্ষকদের গবেষণা এ দুটি জিনিসই খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমরা যদি গবেষণা না করি তাহলে কী জ্ঞান সরবরাহ করব? কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় হচ্ছে একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তার মূল কাজ হচ্ছে শিক্ষা দান। এবং এ শিক্ষা দানের বিষয়টি যদি আমরা দেখি তাহলে আমার নিজের অভিজ্ঞতা হচ্ছে সমস্যাটা অনেক।’
শিক্ষার্থীদের আগ্রহ না থাকার একটি বড় কারণ বেকারত্ব উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এইটাকে কিন্তু আমাদের বিবেচনার মধ্যে আনতে হবে। আজকে বাংলাদেশে শিক্ষিত বেকারের হার যেভাবে বাড়ছে সেটা শিক্ষার্থীদের শিক্ষার ব্যাপারে আগ্রহী করে না। দেখা যাচ্ছে শিক্ষার্থীরা সিভিল সার্ভিস প্রতিযোগিতা পরীক্ষা দেয়ার জন্য ব্যস্ত থাকে। তার কারণ হচ্ছে তার চাকরি হচ্ছে খুব জরুরি। কাজেই শিক্ষার এ সমস্যাকে আমরা বিচ্ছিন্নভাবে আলোচনা করতে পারব না। আমাদের দেখতে হবে গোটা আর্থ-সামাজিক অবস্থাটা কী। এখানে একজন শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ কী? এইটা এক নম্বর কথা। দ্বিতীয়ত আমাদের সমাজে জ্ঞানের গুরুত্ব কমে গেছে। জ্ঞান দরকার হয় না, জ্ঞান ছাড়াই অনেক কাজ করা যায়। সে ক্ষেত্রে জ্ঞানের যদি মর্যাদা না থাকে সমাজে তাহলে শিক্ষার আগ্রহ কেমন করে বাড়বে, শিক্ষার মান কেমন করে বাড়বে? শিক্ষায় বরাদ্দ খুব জরুরি, গবেষণা ক্ষেত্রে বরাদ্দ বাড়াতে হবে। কিন্তু সামগ্রিক ক্ষেত্রে একটি বড় বিষয় আছে শিক্ষা খাতে যে ব্যয় বরাদ্দ সেটা বাড়ানো দরকার। জাতীয় বাজেটের শতকরা অন্তত ২০ ভাগ শিক্ষা খাতে ব্যয় করা উচিত। এটি খুবই যুক্তিসঙ্গত দাবি এবং আমাদের জিডিপির অন্তত দুই ভাগ শিক্ষাখাতে দেয়া উচিত। এগুলো না বাড়ালে আমরা শিক্ষার মান বাড়াতে পারব না।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আখতারুজ্জামান বলেন, ‘সম্প্রতি কিউএস র্যাংকিং নামে একটি জরিপ প্রকাশিত হয়েছে। দুটো বিখ্যাত প্রতিষ্ঠান আছে যারা এ র্যাংকিং করে। একটি টাইমস হায়ার এডুকেশন, আরেকটি কিউএস র্যাংকিং। কিউএস র্যাংকিং সমীক্ষা দেখিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার মধ্যে ১২৭তম অবস্থানে। হায়ার এডুকেশন দেখিয়েছে ৪১৭টির মধ্যে নেই। এ র্যাংকিংগুলো কোন মানদণ্ডে হয় সেটা নিয়ে অনেক বিতর্ক থাকবে। কিন্তু একটি বিতর্কের বিষয় বলা যায় কিউএস র্যাংকিং আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। গতকাল লন্ডনভিত্তিক কিউএসের একজন প্রতিনিধি আমাদের সঙ্গে কথা বললেন, আমরা যদি তথ্য দেয় তাহলে তারা আমলে নিয়ে আমাদের মূল্যায়ন করবেন। তাহলে মানেটা হলো এ রকম যে আমাদের তথ্যগুলো/ডটাগুলো তাদের কাছে নেই। এবং সেগুলো তাদের কাছে উপস্থাপিত হলে এ বিশ্ববিদ্যালয় র্যাংকিংয়ের আওতাভুক্ত হবে। এটা হলো টাইমস হায়ার এডুকেশনের কথা। আর কিউএস র্যাংকিং প্রতিবছর ফ্রি সোর্সের ভিত্তিতে বিশ্ববিদ্যালয়কে মূল্যায়ন করে থাকে। গতকাল তারা জরিপ প্রকাশ করেছে কিন্তু আমাদের আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তবে প্রতিবছর চিঠি দিয়ে জানায়। এ বছর আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার মধ্যে ১২৭তম।’
এমএইচ/এনডিএস/এমকেএইচ
Advertisement