আসসালামু আলাইকুম আপুরা। আমি …। আবার এসেছি ফেসবুক লাইভে। আগে আপনাদের সামনে এনেছিলাম শাড়ি। আজ থ্রি-পিস, টু-পিস, ওয়ান-পিস নিয়ে এসেছি। প্রথম যেটি দেখাব, এই যে লাল-কালো থ্রি-পিস। এই যে দেখছেন গলায় কী সুন্দর কাজ করা, হাতাতেও কাজ করা। এটার ওড়না এই যে। চমৎকার এ থ্রি-পিসটার দাম হচ্ছে … টাকা। এটার কোড …। ৩০ থেকে ৫০ যে কোনো সাইজ অ্যাভেলেবল। লাইভ চলাকালীন ইনবক্স করলে ডেলিভারি চার্জ ফ্রি।
Advertisement
আরও পড়ুন >> অনলাইন অর্ডারে ঘড়ির বদলে এলো দুটি পেঁয়াজ
ফেসবুক ঘাটতে ঘাটতে হঠাৎ আপনার সামনে চলে আসতে পারে এমন ফেসবুকের লাইভ স্ট্রিমিং বা সরাসরি সম্প্রচার। যেখানে দেখা যাবে কোনো এক তরুণী একটি ঘরের ভেতর থেকে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে একের পর এক পোশাক হাতে নিয়ে, গায়ে জড়িয়ে ধরছেন। আর সেই পোশাকের রঙ, কাজ ও মানের বর্ণনা দিচ্ছেন। তুলে ধরছেন কোন পোশাকের কত দাম।
এমন ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে ক্রেতারা যেমন তার পছন্দের পোশাকটি খুঁজে নিতে পারছেন তেমনি ফেসবুক লাইভে আসা তরুণীও সুযোগ পাচ্ছেন বাড়তি অর্থ আয়ের। ইতোমধ্যে বেশ কয়েক তরুণী বাড়তি আয়ের আশায় ‘ফেসবুক লাইভ’কে পেশা হিসেবেও বেছে নিয়েছেন।
Advertisement
শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিভিন্ন পেশাজীবী নারীরাও আছেন এ পেশায়। এমনকি ডাক্তারি পেশায় জড়িতরাও সহজে বাড়তি আয়ের আশায় পণ্যের বিজ্ঞাপন দিতে ফেসবুক লাইভে আসছেন। ৩০ মিনিট থেকে এক ঘণ্টার ফেসবুক লাইভে এসে কেউ কেউ ১৫০০ থেকে ২০০০ টাকা পর্যন্ত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন।
আরও পড়ুন >> দারাজের পাঠানো মোবাইল কাপড় কাচা সাবানে পরিণত
ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন যে আর রূপকথার গল্প নয়, নতুন পেশা ফেসবুক লাইভ সেই ধারণাকে আরও পোক্ত করেছে। ডিজিটাল বাংলাদেশের অংশ হিসেবেই দেশেজুড়ে গড়ে উঠেছে বিশাল ই-কমার্স বাজার। বর্তমান সামাজিক প্রেক্ষাপটে ই-কমার্সের যে দিকটি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে তা হলো অনলাইন শপিং। কেনাকাটা করতে এখন আর যানজট ঠেলে দোকানে গিয়ে সময় অপচয় করতে হচ্ছে না। চাইলে মানসম্মত পণ্য পৌঁছে যাচ্ছে দোরগোড়ায়।
এ কারণে অনলাইনে কেনাকাটা এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। শ্রম ও সময় বাঁচানো এবং নিরাপত্তাজনিত কারণে দিন দিন ক্রেতারা অনলাইন কেনাকাটায় আগ্রহী হচ্ছেন। অনলাইনে শপিংয়ের জন্য ওয়েবসাইট বা ফেসবুকে পেজের অভাব নেই। চাল-ডাল থেকে শুরু করে জামা-কাপড় ও ইলেকট্রনিক- সব পণ্যই এখন মিলছে অনলাইনে। এ অনলাইন শপিংয়ের ওপর নির্ভর করে সৃষ্টি হয়েছে নতুন পেশা ‘ফেসবুক লাইভ’।
Advertisement
আরও পড়ুন >> শ্রমিকের ছেলে থেকে ৭০০ কোটি ডলারের মালিক
নারীদের বিভিন্ন পোশাকের পাশাপাশি ফেসবুক লাইভে এসে বিভিন্ন জুয়েলারি সামগ্রীর বিজ্ঞাপনও প্রচার করা হচ্ছে, আছে পুতুলেরও বিজ্ঞাপন। ফেসবুক লাইভে বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে কোন পোশাক গায়ে জড়ালে কেমন দেখাবে, কোন জুয়েলারি পরলে কেমন দেখাবে- তা কিছুটা হলেও যাচাই করে নিতে পারছেন আগ্রহীরা। ফলে সরাসারি হাতে আসার আগেই পছন্দের পণ্যটি সম্পর্কে একটি ধারণা পাওয়া যাচ্ছে।
‘ফেসবুক লাইভ’ পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন এমন একজন দন্তচিকিৎসক সাদিয়া জ্যোতি। নতুন এ পেশা সম্পর্কে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমি পেশায় একজন দন্তচিকিৎসক। পাশাপাশি ফেসবুক লাইভে আসি। এতে আমার কিছু বাড়তি আয় হয়। আমার মতো অনেকেই এখন পার্টটাইম (খণ্ডকালীন) ফেসবুক লাইভে আসছেন। আবার অনেক উদ্যোক্তা নিজের পণ্য নিয়ে নিজেই ফেসবুক লাইভে আসছেন।’
তিনি বলেন, এ পেশার ভবিষ্যৎ খুবই উজ্জ্বল। ডিজিটাল বাংলাদেশ যে এখন আর স্বপ্ন নয়, নতুন পেশা ফেসবুক লাইভ তার-ই প্রমাণ। আমি মনে করি, যারা ফেসবুক লাইভে আসবেন তাদের বাচনভঙ্গি সুন্দর হতে হবে। পাশাপাশি যারা অনলাইনে ব্যবসা করবেন তাদের পণ্যের মান যেমন ভালো হতে হবে, তেমনি ব্যবসায়ীদের সৎ থাকতে হবে। কোনোভাবেই গ্রাহকদের ঠকানো যাবে না।
আরও পড়ুন >> অনলাইন শপিংয়ে প্রতারণা, মোবাইলের বদলে পেঁয়াজ
‘ফেসবুক লাইভ’ খণ্ডকালীন পেশা হিসেবে নেয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইলারা বলেন, ফেসবুক লাইভের মাধ্যমে যে আয় করা যায়, ধারণাটা আমাদের দেশে নতুন। পণ্যের প্রচারে ফেসবুক ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। আমার ধারণা, ভবিষ্যতে খণ্ডকালীন পেশা হিসেবে ফেসবুক লাইভ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তিনি বলেন, একটি অনলাইন শপিংয়ের পণ্যের প্রচারে আমি প্রায়ই ফেসবুক লাইভে আসি। এক একটি লাইভে ৩০ থেকে ৪৫ মিনিট সময় ব্যয় হয়। এ সময়ের মধ্যে যে ব্যবসায়ীর পণ্যের প্রচারে আসি, তার সব পণ্যই হাতে ধরে কিংবা গায়ে জড়িয়ে আগ্রহীদের সামনে উপস্থাপন করি। এজন্য মোটামুটি হ্যান্ডসাম পারিশ্রমিক পাই।
ইলারা আরও বলেন, ফেসবুক লাইভে অনেকেই বিভিন্ন ধরনের মন্তব্য করেন। যেগুলোর উত্তর দেয়ার দরকার, সেগুলোর উত্তর দেই। অনেক সময় আমার বন্ধুরাও লাইভে মজা করার জন্য মন্তব্য করেন। তবে সবার উদ্দেশ্যে আমার একটি অনুরোধ থাকবে, কেউ কোনো পণ্যের প্রচারে লাইভে আসলে কটূক্তিমূলক ইঙ্গিত বা কোনো মন্তব্য করবেন না।
আরও পড়ুন >> বিকাশ ফোন দেয় না, ফোন দেয় প্রতারকরা
ফেসবুক লাইভ দেখে একটি অনলাইন শপিং থেকে থ্রি-পিস কেনা রামপুরার বাসিন্দা ফারিয়া বলেন, অনলাইনে যেসব পণ্যের স্যাম্পল দেয়া থাকে, সেই স্যাম্পল দেখে অর্ডার করলে অনেক সময় মনের মতো হয় না। তবে ফেসবুক লাইভ দেখে আমি দুটি অর্ডার করেছি। দুটি থ্রি-পিসই ভালো পেয়েছি। লাইভে যেসব পণ্যের প্রচার হয়, তার স্কিনশট নিয়ে রাখা যায়। তাছাড়া লাইভে যিনি আসেন তিনি নিজের গায়েও পোশাকগুলো জড়িয়ে ধরেন, ফলে কোন পোশাক পরলে কেমন লাগবে- সে সম্পর্কে একটি ধারণাও পাওয়া যায়।
এমএএস/এনডিএস/এমএআর/পিআর