দেশজুড়ে

ধান চাষের অর্ধেক টাকাও উঠছে না

এ বছর বোরো ধান আবাদে রাজবাড়ীতে ধানের বাম্পার ফলন হলেও সব খরচ মিটিয়ে ন্যায্যমূল্য না পেয়ে লোকসানে পড়েছেন কৃষকরা। সরকার সরাসরি কৃষকদের থেকে ধান না কিনে ব্যবসায়ীদের থেকে ধান কেনায় লোকসানে পড়তে হচ্ছে।

Advertisement

প্রধান অর্থকারী ফসলের মধ্যে ধান অন্যতম। প্রতিবছর রাজবাড়ীর ৫টি উপজেলায় হাজার হাজার হেক্টর জমিতে ধান উৎপাদন করে কৃষকরা। তবে এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় ধানের ফলন ভালো হলেও খরচের তুলনায় অর্ধেক দাম পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছেন তারা।

প্রতিবিঘা জমিতে চাষ শুরু থেকে ধান কেটে বাড়িতে আনা পর্যন্ত কৃষকদের খরচ হয় ৮-১০ হাজার টাকা এবং ধান উৎপাদন হয় বিঘাপ্রতি ১৮-২২ মণ। বর্তমানে বাজারে বিক্রি করতে হচ্ছে ৫০০ টাকা (মণ) দরে। ধান কাটার জন্য প্রতিটি শ্রমিকের মজুরি ৫০০-৬০০ টাকা এবং সঙ্গে ৩ বেলা খাবার।

রাজবাড়ী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, রাজবাড়ীতে এ বছর বোরো ধানের আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে যা গত বছর ছিল ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর। এর মধ্যে রাজবাড়ী সদরে ৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন।

Advertisement

কৃষকরা বলেন, এ বছর ধানের ফলন ভালো হয়েছে কিন্তু ধান চাষ করতে যে টাকা খরচ হয়েছে তার অর্ধেক টাকাও উঠছে না। বাজারে ধানের দাম প্রতিমণ ৫০০ টাকা বিক্রি করছেন। কিন্তু এক মণ ধানে খরচ হয়েছে প্রায় ৮০০ টাকা। সরকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে ধান কেনায় তারা লোকসানে পড়ছেন।

ধান বিক্রি করে শ্রমিকদের কেমন করে টাকা দেবেন, এখন তাও বুঝতে পারছেন না। কারণ কেউ ধান কিনছেন না। ধান চাষ করতে গিয়ে অনেকে ঋণী হয়ে পড়েছে। এখন কীভাবে এ লোকসান কাটিয়ে উঠবেন?

রাজবাড়ী সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. বাহাউদ্দিন শেখ বলেন, কৃষি অফিসের সার্বিক সহায়তা ও পরামর্শে এ বছর রাজবাড়ীতে বোরো ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। রাজবাড়ীতে এ বছর ধানের আবাদ হয়েছে ১৩ হাজার ৮১০ হেক্টর জমিতে যা গত বছর ছিল ১৪ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে।

এর মধ্যে রাজবাড়ী সদরে আবাদ হয়েছে ৬ হাজার ৫১০ হেক্টর জমিতে এবং উৎপাদিত হয়েছে প্রায় ২৬ হাজার মেট্রিক টন। সরকার থেকে কৃষকদের কাছ থেকে যে ১০৪০ টাকা মণ দরে ধান কেনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কৃষকরা সে মূল্যে পেলে লাভবান হবে। একটি কমিটির মাধ্যমে এ ধান কিনবে সরকার।

Advertisement

রাজবাড়ীর ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক আলমগীর হুসাইন বলেন, সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কৃষকদের কাছ থেকে কেজিপ্রতি চাল সংগ্রহ করা হবে। এতে কোনো ধরনের অনিয়ম হলে এবং তার প্রমাণ পেলে ব্যবস্থাগ্রহণ করবেন। সরকার থেকে যে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তার প্রতিটি টাকা কৃষকরা পাবে।

এজন্য প্রতিটি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে উপস্থিত থেকে ধান সংগ্রহের জন্য। সেখানে কৃষি ও খাদ্য অফিসের কর্মকর্তাসহ প্রশাসনের কর্মকর্তারাও থাকবেন। কোনো মধ্যস্বত্বভোগী যেন তাদের স্বার্থ উদ্ধার করতে না পারে সেজন্য জেলা প্রশাসন তৎপর থাকবে। কৃষকদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠায় প্রশাসন সর্বাত্মক সহযোগিতা করবেন।

রুবেলুর রহমান/এমআরএম/এমএস