ট্রফিটা যদি হয় বিশ্বকাপের আর সে ট্রফি যদি উঁচিয়ে ধরা যায় ক্রিকেটের তীর্থস্থান হিসেবে পরিচিত লর্ডসে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে, একজন ক্রিকেটারের জীবনে এর চেয়ে বড় ঘটনা আর কি হতে পারে? এমন সৌভাগ্যবানই বা হতে পারেন ক’জন। যেমন হয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তী ক্লাইভ লয়েড, ভারতের কপিল দেব আর অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ।
Advertisement
ক্রিকেটের ভেন্যু হিসেবে লর্ডসের গুরুত্ব আলাদা। অনেকের কাছেই বিশ্ব ক্রিকেটের তীর্থস্থান এই গ্রাউন্ডটি। ৩০ মে শুরু হতে যাওয়া আইসিসি ক্রিকেট ওয়ার্ল্ডকাপের ৫টি ম্যাচ হবে লন্ডনের এ ভেন্যুতে। ফাইনাল তো আছেই এর মধ্যে। যুক্তরাজ্যে বিশ্বকাপ, লর্ডস ছাড়া কি ফাইনাল জমে? গ্রুপ পর্বের চারটি ম্যাচ। এরপর ১৪ জুলাই ফাইনাল।
তো এবার কোন দেশের অধিনায়ক এই লর্ডসে দাঁড়িয়ে ট্রফি উঁচিয়ে ধরে হাসবেন শেষ হাসি? কে নাম লেখাবেন ক্লাইভ লয়েড, কপিল দেব আর স্টিভ ওয়াহ’র পর লর্ডসে বিশ্বকাপ জেতা অধিনায়ক হিসেবে? সেটা বলে দেবে সময়।
বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ইতিহাসে আগে চারটি ফাইনাল হয়েছে এই লর্ডসে। যার দু’বারই বিজয় উৎসব করেছে ক্যারিবিয়ানরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়ক ক্লাইভ লয়েডের হাতে ট্রফি উঠেছে ১৯৭৫ সালের ২১ জুন আর ১৯৭৯ সালের ২৩ জুন ফাইনাল শেষে। তারা প্রথম ফাইনালে হারিয়েছিল ১৭ রানে অস্ট্রেলিয়াকে, পরের ফাইনালে ৯২ রানে স্বাগতিক ইংল্যান্ডকে।
Advertisement
লর্ডসের দ্বিতীয় ভাগ্যবান অধিনায়ক ছিলেন ভারতের কপিল দেব। ১৯৮৩ সালের ২৫ জুন ফাইনালে ভারত ৪৩ রানে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে ট্রফি ছিনিয়ে এনেছিল কপিল দেবের নেতৃত্বে। লয়েডের পর দ্বিতীয় অধিনায়ক হিসেবে বিশ্বকাপের ট্রফি লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে দাঁড়িয়ে উঁচিয়ে ধরে উল্লাস করেছিলেন কপিল।
সর্বশেষ অস্ট্রেলিয়ার স্টিভ ওয়াহ। ১৯৯৯ সালে লর্ডসের সর্বশেষ ফাইনালভাগ্য ছিল অস্ট্রেলিয়ার। স্ট্রিভ ওয়াহ’র নেতৃত্বে অসিরা ৮ উইকেটে পাকিস্তানকে হারিয়ে লর্ডস জয় করেছিল অসি বাহিনী।
বিশ্ব ক্রিকেটে লর্ডস একটা ইতিহাস। পুরো বিশ্বে যে কয়টি ঐতিহ্যবাহী ও নান্দনিক ক্রিকেট ভেন্যু আছে লর্ডস সেগুলোর অন্যতম। লন্ডন শহরের সেন্ট জন’স উডে ২০৫ বছর আগে ১৮১৪ সালে তৈরি করা হয় এই স্টেডিয়ামটি। ১৭৮৭ থেকে ১৮১৪- এই সময়কালে তৈরি হয়েছে লর্ডস।
২৮ হাজার দর্শক ধারণ ক্ষমতার এই স্টেডিয়ামটির নামকরণ হয়েছে প্রতিষ্ঠাতা টমাস লর্ডনের নামে। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের সময় এ স্টেডিয়ামের ব্যাপক সংস্কার করা হয়েছিল। তখনই তৈরি করা হয়েছি এই ক্রিকেট ভেন্যুর অন্যতম আকর্ষণ জেপি মর্গ্যান মিডিয়া সেন্টার।
Advertisement
লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ডে আন্তর্জাতিক ম্যাচ প্রথম হয়েছিল ১৮৮৪ সালে ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া টেস্ট দিয়ে। এরপরও বহু বছর পর এই স্টেডিয়ামে প্রথম একদিনের আন্তর্জাতিক ম্যাচ হয় ১৯৭২ সালে।
এবারের বিশ্বকাপের ফাইনাল ছাড়া প্রথম পর্বের যে চারটি ম্যাচ হবে তার মধ্যে আছে বাংলাদেশের একটি ম্যাচও। ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ খেলতে নামবে ক্রিকেটের এই তীর্থস্থানে। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ও পাকিস্তান- কথাগুলো আসলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটামোদীদের মনে পড়ে যায় ১৯৯৯ সালের কথা। সেবার বাংলাদেশ প্রথম অংশ নিয়েই হারিয়ে দিয়েছিল পাকিস্তানকে। এবার লর্ডসে টাইগারদের সামনে সেই পাকিস্তান।
৩০ মে বিশ্বকাপ শুরু হলেও ক্রিকেটের তীর্থভূমি লর্ডসে বিশ্বকাপ পা রাখবে অনেক পর, ২৩ জুন। পাকিস্তান ও দক্ষিণ আফ্রিকার ম্যাচ দিয়ে এবারের বিশ্বকাপ বরণ করে নেবে লর্ডস। এরপর ২৫ জুন স্বাগতিকরা খেলবে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে। ২৯ জুন নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার ম্যাচও হবে লর্ডসে। এরপর বাংলাদেশ-পাকিস্তান এবং ফাইনাল।
সেই লর্ডসে এবার ‘লর্ড’ হয়ে দাঁড়াবেন কোন দেশের অধিনায়ক? ক্লাইভ লয়েডদের উত্তরসূরিরা নেই ভালো অবস্থানে। এই বিশ্বকাপে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ফেবারিটের তালিকায় রাখছেন না অনেকে। বিশ্বকাপ শুরুর আগে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত ত্রিদেশীয় টুর্নামেন্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ফাইনালসহ ৩ ম্যাচ হেরেছে বাংলাদেশের কাছে।
তবে ফেবারিটের তালিকায় ঠিকই জায়গা করে নিয়েছে ১৯৮৩ বিশ্বকাপের নায়ক কপিল দেবের ভারত ও ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপের নায়ক স্ট্রিভ ওয়াহ’র অস্ট্রেলিয়া। স্বাগতিক হিসেবে ইংল্যান্ড তো থাকছেই। দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ডকেও রাখতে হবে হিসেবের খাতায়। তবে শেষ পর্যন্ত কোন দেশের অধিনায়কের হাতে ট্রফি উঠবে লর্ডসে তা দেখতে সবার অপেক্ষা ১৪ জুলাই ফাইনাল শেষ হওয়া পর্যন্ত।
আরআই/আইএইচএস/পিআর