প্রথমে ফেসবুকে একাধিক পেজ খুলে আকর্ষণীয় ও দৃষ্টিনন্দন পোশাক, গহনা কিংবা মোবাইল ফোন বিক্রির বিজ্ঞাপন প্রচার। পরে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে অনেক কম দামে পণ্য কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে পাঠানোর আশ্বাস মেলে যোগাযোগে। তবে বেশিরভাগ সময়ই সার্ভিস চার্জ কিংবা পণ্যের আংশিক দাম আদায় করলেও পণ্য পৌঁছাত না। অর্ডার করা পণ্যের পরিবর্তে কখনও পৌঁছাত সাবান, আলু-পটোল, পেঁয়াজ ভর্তি প্যাকেট।
Advertisement
অর্ডার করা পণ্য না পেয়ে অভিযোগ করলে তাদের চট্টগ্রামের অফিসে যোগাযোগ করতে বলা হতো। অল্প কিছু টাকার জন্য পরবর্তীতে প্রতারিত হয়েও কোনো গ্রাহক কোথাও অভিযোগ করতেন না। এভাবে প্রতিজনের কাছ থেকে বেশি অর্থ না নিলেও বিপুলসংখ্যক মানুষের কাছ থেকে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছিল সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্র।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে কিংবা অনলাইনে ব্যবসা বাংলাদেশে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। তবে এ সুযোগে প্রতারণার ফাঁদ পেতেছে এ প্রতারক চক্র।
বুধবার (২২ মে) দিবাগত রাতে রাজধানীর দারুস সালাম এলাকায় অভিযান চালিয়ে চক্রটির সাত সদস্যকে আটক করে র্যাব-৪ এর একটি টিম। র্যাব জানিয়েছে, চক্রটি দীর্ঘ সাত বছর ধরে প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
Advertisement
আটকরা হলেন- সুজন মোল্লা (২৬), হাসিবুল হাসান ওরফে চঞ্চল (৩২), জারদিস হোসেন (২০), মেহেদী হাসান (২৩), নুর ইসলাম (১৯), পারভেজ মোল্লা (১৯) ও আবু তাহের (১৯)।
এ সময় তাদের কাছ থেকে একটি ল্যাপটপ, একটি ডেস্কটপ কম্পিউটার, একটি প্রিন্টার, একটি রাউটার, ২৩টি মোবাইল, মানি রিসিট, ২৫০ পিস পাঞ্জাবি ও ১০ পিস পায়জামা উদ্ধার করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২৩ মে) দুপুরে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র্যাব-৪ এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি চৌধুরী মঞ্জুরুল কবির বলেন, চক্রটি বিভিন্নভাবে ক্রেতাদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছিল। তারা বিভিন্ন নামিদামি ব্র্যান্ডের অনলাইনে দেয়া পণ্য সামগ্রীর ছবি ডাউনলোড করে নিজেদের পণ্য হিসেবে চালিয়ে ফেসবুক পেজে আপ করত। কিন্তু সেসব পণ্যের নির্ধারিত দামের চেয়ে কম দাম দেখে কেউ আকৃষ্ট হয়ে যোগাযোগ করলে চক্রটি প্রথমে সার্ভিস চার্জ গ্রহণ করত। এরপর হোম ডেলিভারির মাধ্যমে নিম্নমানের পণ্য পাঠিয়ে দিত।
ক্রেতারা কোনো পণ্য অর্ডার করলে, কখনও কখনও মূল্য পরিশোধ করতে বলা হতো। কিন্তু নির্ধারিত মূল্যবান পণ্যের পরিবর্তে সাবান, ভিমবার, আলু, পেঁয়াজ, পটোল প্যাকেট করে পাঠিয়ে দিত। কখনও কোনো পণ্য না পাঠিয়েই কিছু অর্থ আদায় করে পণ্য পাঠিয়েছে বলে দাবি করত। গ্রাহক পণ্য পায়নি দাবি করলে বিভিন্ন কুরিয়ার সার্ভিসে খোঁজ নিতে বলতো এবং পণ্য না পৌঁছানোর জন্য সেসব কুরিয়ার সার্ভিসকে দায়ী করত প্রতারক চক্রের সদস্যরা।
Advertisement
র্যাব-৪ সিও এর বলেন, প্রতারকদের ব্যবহৃত ১৭টি পেজ জব্দ করা হয়েছে। সেগুলো হলো- Unique Fashion, Rose Fashion BD, Lifestyle.com, GreenXpress.Com, Gentle Fashion, Gentle Point, Fashion Point, Plus Point, Mobile Shop 24, গয়না মহল, Arifull Islam Ariean, নিলয় মাহমুদ সুজন, MD Tanvir Abutaher, Advance Electronics, Dream Fashion, Xian Rihan.
চক্রটি ২০১৩ সাল থেকে এ ধরনের কার্যক্রম চালিয়ে আসছিল। তারা প্রতি গ্রাহকের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থ না নিলেও বিপুলসংখ্যক গ্রাহকের কাছ থেকে অল্প অল্প করে প্রতিদিন লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।
র্যাব-৪ এর সিও বলেন, আমরা প্রাথমিকভাবে চক্রটির ১৭টি পেজ পেয়েছি। আরও পেজ রয়েছে কি-না বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হবে।
এ সময় সেইলরের অ্যাসিস্যান্ট মার্কেটিং ম্যানেজার সাইদুজ্জামান বলেন, আমাদের কপিরাইট করা ছবি ওরা কপি করে তাদের পেজে নিজেদের লোগো বানিয়ে ডিসপ্লে করতো। আমরা র্যাবকে বিষয়টি জানানোর পর প্রতারকদের আটক করা হয়। এজন্য র্যাবকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
জেইউ/এমবিআর/পিআর