বিশ্বকাপে প্রথমবারেরমত খেলতে যাওয়া বাংলাদেশ দলের অধিনায়ক ছিলেন তিনি। ছিলেন সময়ের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানও। আকরাম খানের নেতৃত্বে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জনের পর আমিনুল ইসলাম বুলবুলের নেতৃত্বে বিশ্বকাপ খেলতে যায় বাংলাদেশ।
Advertisement
১৯৯৯ বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে নানা ঘটনায় আলোচিত-সমালোচিত হতে থাকে বাংলাদেশের ক্রিকেট। সবচেয়ে বড় বিতর্কটা হয়েছিল, মিনহাজুল আবেদিন নান্নুকে দলে নেয়া না নেয়া নিয়ে। অধিনায়ক হিসেবে বুলবুলকে নিয়েও তখন অনেক কথা-বার্তা উঠেছিল। বলা হয়েছিল, নান্নুর বাদ পড়ার পেছনে সম্ভবত অধিনায়কেরও হাত ছিল।
যদিও পরে জানা গেছে, বুলবুলের কোনো মতামতই নেয়া হয়নি এ ব্যাপারে। সে যাই হোক, শেষ পর্যন্ত বিশ্বকাপের দলে সুযোগ পেলেন নান্নু। বিশ্বকাপে গিয়ে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম জয়ের ম্যাচ সেরাও হলেন বাংলাদেশের বর্তমান প্রধান নির্বাচক। এরপর এলো পাকিস্তানের বিপক্ষে সেই ঐতিহাসিক জয়।
তার ঠিক আগ মুহূর্তে বরখাস্ত হলেন কোচ গর্ডন গ্রিনিজ। সবকিছুরই প্রত্যক্ষদর্শী ছিলেন অধিনায়ক আমিনুল ইসলাম বুলবুল। সে সঙ্গে প্রথম বিশ্বকাপে একটি দেশকে নেতৃত্ব দেয়ার বিরল অবিজ্ঞতাও হলো তার।
Advertisement
আমিনুল ইসলাম বুলবুল সেই অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খুলে বসলেন জাগো নিউজের সামনে। বললেন অনেক না বলা কথা। অনেক নতুন তথ্যও উঠে এসেছে তার মুখ দিয়ে। ২০ বছর পর সেই ইংল্যান্ডে খেলতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। ২০ বছর আগের সেই অনেক না বলা কথা তুলে ধরলেন জাগো নিউজের পাঠকদের জন্য....।
জাগোনিউজ : ৯৯’র বিশ্বকাপ দলটা কেমন ছিল? আর দেশের মাটিতে প্রস্তুতি পর্বটা কেমন হয়েছিল?
আমিনুল ইসলাম বুলবুল : আমার তো মনে হয় শেষ পর্যন্ত আমরা যে দল নিয়ে বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিলাম, সেটাই ছিল তখনকার বেস্ট পসিবল টিম। সেই দলে শেষ মুহূর্তে নান্নু ভাই যুক্ত হয়েছিলেন। নান্নু ভাই দলে আসায় দল আরও সমৃদ্ধ হয়। ওই সময় যারা ঘরোয়া ক্রিকেটে নিমিত ভাল পারফরমার, অভিজ্ঞ, পরিণত আর ইনফর্ম পারফরমার, তাদের প্রায় সবার তখন জায়গা হয়ে যায় বিশ্বকাপ দলে। আমার মনে হয় না নান্নু ভাই দলে আসার পর বাইরে আর কেউ তেমন ছিলেন, যার বিশ্বকাপ দলে জায়গা পাবার দাবিদার।
জাগোনিউজ : কিন্তু মিনহাজুল আবেদিন নান্নুতো প্রাথমিক দলে ছিলেন না? সেটা কি করে হলো? অধিনায়ক হিসেবে আপনি কি নান্নুকে চাননি দলে? দল গঠনে আপনার কোন মতামত ও ভূমিকা ছিল?
Advertisement
বুলবুল : নান্নু ভাই অবশ্যই দলে থাকার দাবিদার ছিলেন। তিনি তারও বেশ আগে থেকেই দেশের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান। অভিজ্ঞ, পরিণত উইলোবাজ। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন ক্ষমতা ছিল যথেষ্ঠ। আমি নিজেই তার সাথে ক্লাব আর জাতীয় দলে ২০ বছরের মত খেলেছি। আমার দেখা সেরা ব্যাটসম্যানও নান্নু ভাই। এখন নির্বাচকরা তাকে শুরুতে বিবেচনায় রাখেননি।
সত্যি বলতে কি এখনকার মত তখন দল গঠন ও ক্রিকেটার নির্বাচনে অধিনায়কের তেমন কোনই ভূমিকা থাকতো না। এক কথায় দল নির্বাচন আর ক্রিকেটার বাছাই কার্যক্রমে অধিনায়ক সম্পৃক্তও ছিলেন না। তাই নান্নু ভাইকে নির্বাচকরা যখন নেননি, তখন সে অর্থে আমার কোন সম্পৃক্ততা ছিল না। আমার কোন বক্তব্য বা মতামত যাই বলা হোক না কেন নেয়াও হয়নি।
জাগোনিউজ : পরে যখন নান্নুকে নেয়া হলো তার আগে কি আপনি জেনেছিলেন, মানে আপনাকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল?
বুলবুল : হ্যাঁ, জেনেছিলাম। তাও কোন নির্বাচকের মুখ থেকে নয়। সে সময়ের বোর্ড সভাপতি সাবের ভাই (সাবের হোসেন চৌধুরী) নিজে আমাকে ফোন করে আমার মতামত নিয়েছিলেন। সাবের ভাই একদিন ফোনে বললেন, ‘বুলবুল আমরা যদি নান্নুকে নেই, তাহলে কেমন হবে?’
নান্নু ভাই তখন ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে আমার সতীর্থ। আমরা মোহামেডানে একসাথে খেলি। তার মেধা, প্রজ্ঞা, সামর্থ্য ও কার্যকরিতা আমার খুব ভালই জানা ছিল। আমি বললাম, ‘অবশ্যই ভাল হবে।’ পাশাপাশি জানতে চাইলাম কার জায়গায়, তখন বলা হলো জাহাঙ্গীরের বদলে। আমি বলেছিলাম, ঠিক আছে। কিন্তু জাহাঙ্গীরকে দেশে রেখে যাওয়া যাবে না, তাকেও দলের সাথে যুক্তরাজ্যে নিতে হবে। সে অনুযায়ী দলের অফিসিয়াল মেম্বার না হলেও জাহাঙ্গীর ১৬ নম্বর সদস্য হয়ে আমাদের সাথে পুরো ওয়ার্ল্ড কাপেই ছিল।
জাগোনিউজ : এবার একটু প্রস্তুতি সম্পর্কে বলেন? বিশ্বকাপের আগের প্রস্তুতি পর্ব কেমন ছিল?
বুলবুল : সত্যি বলতে কি তখন আমাদের ক্রিকেট বোর্ডের অর্থনৈতিক অবস্থা তত স্বচ্ছল ছিল না। এখনকার মত শক্ত ও সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক ভিত্তি ছিল না। এমন অবকাঠামোগত সুযোগ সুবিধারও কমতি ছিল।
কিন্তু সেই সীমিত অর্থনৈতিক সুযোগ সুবিধার মধ্যেও তখনকার বোর্ড প্রাণপন চেষ্টা করেছে আমাদের প্রস্তুতি পর্বটা ভাল করতে। আমি তখনকার বোর্ড সভাপতি সাবের ভাই (সাবের হোসেন চৌধুরী), আশরাফুল ভাই (তখনকার বোর্ড সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল হক), তান্না ভাই (সে সময়ের বোর্ড সহ-সভাপতি তানভির মাজহার তান্না), টুটুল ভাই (যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল), মানু ভাই (মাহমুদুল হক মানু), ববি ভাইসহ (আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি) পুরো বোর্ডকে ধন্যবাদ জানাই। তাদের প্রতি আমার কৃতজ্ঞতা।
সে সময়ের বোর্ড আমাদের পাশে ছিল। আমরা যাতে বিশ্বকাপে ভাল খেলতে পারি, যুক্তরাজ্যের অনভ্যস্ত কন্ডিশনের সাথে মানিয়ে নিতে পারি সে জন্য সাধ্যমত চেষ্টা ছিল বোর্ডের। আমার এখনো খুব ভাল মনে আছে, ১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ১৯৯৮ সালে আমাদের যুক্তরাজ্যে পাঠানো হয়েছিল। বিশ্বকাপে যে সব জায়গায় খেলা হবে, সেই ইংল্যান্ড, আয়ারল্যান্ড ও স্কটল্যান্ডে আমাদের ঠিক এক বছর আগে ৪০ দিনের এক প্রস্তুতি সফরে পাঠানো হয়। ববি ভাই (আহমেদ সাজ্জাদুল আলম ববি) ছিলেন ম্যানেজার। সে সফরে যুক্তরাজ্যের আবহাওয়া, উইকেট, পারিপার্শিকতা সম্পর্কে একটা পূর্ব ধারণা পেয়েছিলাম। যা আমাদের এক বছর পর বিশ্বকাপে ভাল খেলতে বিশেষভাবে সাহায্য করেছে।
জাগোনিউজ : সেটাতো গেল একবছর আগের পূর্ব প্রস্তুতি। মূল বিশ্বকাপের আগে আপনাদের প্রস্তুতি সম্পর্কে কিছু বলেন?
বুলবুল : সেটাও ছিল বেশ ভাল। প্রায় মাস তিনেক আগে শুরু হয় প্রস্তুতি। পুরো দলকে এক সাথে রেখে দীর্ঘ আবাসিক ক্যাম্পের আয়োজন করা হয়। আমরা বিকেএসপিতে দীর্ঘ দিনের আবাসিক অনুশীলন ক্যাম্প করি। ওয়েস্ট ইন্ডিজ গ্রেট গর্ডন গ্রিনিজ ছিলেন আমাদের কোচ। তিনি প্রচুর পরিশ্রম করেন।
তারপর বিশ্বকাপের কয়েক মাস আগে ঢাকায় একটি তিন জাতি টুর্নামেন্টও খেলি। জিম্বাবুয়ে আর কেনিয়া ছিল আমাদের প্রতিপক্ষ। তারপর দেশের মাটিতে সামর্থ্য অনুযায়ী সম্ভাব্য সেরা প্রস্তুতি নিয়ে সম্ভবত আমরা বিশ্বকাপ শুরুর সপ্তাহ তিনেক আগে যুক্তরাজ্য যাই।
আমাদের ম্যানেজার ছিলেন, এক সময়ের কৃতি ক্রিকেটার ও নামী ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব তানভির মাজহার তান্না। আর বোর্ডের দুই যুগ্ম সম্পাদক টুটুল ভাই আর মানু ভাইও ছিলেন দলের সাথে। কোচ গর্ডন, ম্যানেজার তান্না ভাই আর টুটুল ভাই ও মানু ভাই সহ আমরা ক্রিকেটার এবং কোচিং স্টাফরা সবাই ছিলাম যেন এক বাগানের একটি ফুল।
একদম অন্তরঙ্গ পরিবেশে প্র্যাকটিস হতো। তিন সিনিয়র নান্নু ভাই, ফারুক ভাই, মনি ভাই, সাথে আকরাম, আমিসহ সুজন, দুর্জয়, রফিক থেকে শুরু করে কনিষ্ঠ সদস্য হাসিবুল হোসেন শান্ত, শফিউদ্দিন বাবু- রাহুল সবাই মিলে আমরা পুরো দল যেন ছিলাম একটি পরিবার। সবাই হাসি খুশি সময় কাটিয়েছি।
আমাদের আন্তরিকতা, সম্প্রীতি আর ঐক্য ও সংহতি ছিল যথেষ্ঠ। একটি উপমা দিলেই বোঝা যাবে আমাদের পারস্পরিক সম্প্রীতি ছিল কতটা?
আমরা যুক্তরাজ্যে যাবার ক্রিকেটারদের প্র্যাকটিসে উদ্যমী হতে এবং সামর্থ্যের সবটুকু উজাড় করে দিতে ম্যানেজার তান্না ভাই কিছু ‘ইনটেন্সিভ’ দিতেন। প্র্যাকটিসে কেউ ভাল ক্যাচ নিলে বা রান আউট করলেই ২০ পাউন্ড করে দিতেন। ক্রিকেটারদের উৎসাহিত করতেই ছিল তান্না ভাইয়ের সে আন্তরিক উদ্যোগ। বিশ্বাস করেন, সেই ২০ পাউন্ড কেউ নিতো না। আমরা ১৫ ক্রিকেটার সেই ২০ পাউন্ড ভাগ করে কোল্ড ড্রিঙ্কস, আইসক্রিম জাতীয় কিছু খেতাম। এভাবেই আমরা একটা পরিবারের মত সময় কাটিয়ে নিজেদের তৈরি করেছি বিশ্বকাপের জন্য।
জাগোনিউজ : যুক্তরাজ্যে মূল প্রস্তুতি পর্ব শেষে ক’টি কাউন্টি দলের বিপক্ষে আপনারা কিছু ম্যাচও খেলেছিলেন, সে সব ম্যাচের কথা কিছু বলবেন?
বুলবুল : আমরা যুক্তরাজ্যে গিয়ে এমসিসি আর কিছু লোকাল ক্লাবের সাথে কয়েকটি অনানুষ্ঠানিক প্র্যাকটিস ম্যাচের পর তিন কাউন্টি দল অ্যাসেক্স, মিডলসেক্স ও নর্দাম্পটনশায়ারের মত নামি ও শক্তিশালি ইংলিশ কাউন্টি দলের বিপক্ষে তিন তিনটি ম্যাচ খেলি। বলতে পারেন, সেই ম্যাচগুলোই আমাদের বিশ্বকাপের মাঠে নামায় রেখেছে কার্যকর ভূমিকা।
খুব মনে আছে আমরা প্রথম ম্যাচ খেলি ইংলিশ কাউন্টির অন্যতম প্রতিষ্ঠিত শক্তি এসেক্সের সাথে। ওই ম্যাচে দারুণ সেঞ্চুরি করেছিল খালেদ মাহমুদ সুজন।
যতটুকু মনে আছে, আমি ৪৫ রানের আর আকরামও ৪০ রানের একটি ভাল ইনিংস খেলেছিল; কিন্তু সুজন মিডল অর্ডারে সম্ভবত ছয় কি সাত নম্বরে নেমে সংগ্রামি শতক উপহার দিয়েছিল। তার সেঞ্চুরিতেই জিতে যাই আমরা। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের হয়ে খেলা পিটার সার্চ আর রনি ইরানির মত প্রতিষ্ঠিত পারফরমারে সাজানো এসেক্সের বিপক্ষে জয়ের পর আমরা আরও অনুপ্রাণিত হয়ে যাই।
ঠিক পরের খেলাই ছিল আরেক নামি কাউন্টি ক্লাব মিডলসেক্সের সাথে। সে ম্যাচেও জয়ী হই আমরা। মার্ক রাম প্রকাশসহ আরও একাধিক ইংলিশ জাতীয় ক্রিকেটারে গড়া মিডলসেক্সের বিপক্ষে জয়ের পর আমরা শেষ ম্যাচটি খেলি নর্দাম্পটনশায়ারের সাথে। সে ম্যাচেও আমরা প্রায় সমান তালেই লড়াই করি। বলা যায় জেতার মত অবস্থা থেকে হেরে যাই।
তারপরও তিন কাউন্টি দলের দুটির সাথে জয় আর একটিতে অল্পের জন্য জয় হাতছাড়া- সব মিলে বিশ্বকাপের আগের প্রস্তুতি পর্ব এবং ম্যাচ প্র্যাকটিসও হয় বেশ ভাল। এক কথায় ‘ব্রিলিয়ান্ট।’
জাগোনিউজ : এবার মূল বিশ্বকাপের কথা বলুন? কেমন ছিল স্বপ্নের সেই যাত্রা?
বুলবুল : বিশ্বকাপে আমরা প্রথম ম্যাচটি খেলি নিউজিল্যান্ডের সাথে। খেলা হয় চেমসফোর্ডের কাউন্টি গ্রাউন্ডে। সেই মাঠে আমরা একটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলেছিলাম। প্রচন্ড ঠান্ডা ছিল। শীতে হাত-পা জমে যাওয়ার যোগাড়। মোটা দাগে বলতে গেলে বলতে হয়, আমরা সে অর্থে ভাল খেলিনি। আমার ভাষায় গড়পড়তা বা সাদামাটা পারফর্ম করি।
দ্বিতীয় ম্যাচ আয়ারল্যান্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। আমার মনে হয়, প্রথম ম্যাচের তুলনায় সে ম্যাচে আমরা ছিলাম খানিকটা স্বপ্রতিভ ও উজ্জ্বল। মেহরাব হোসেন অপি আর নাঈমুর রহমান দুর্জয় কোর্টনি ওয়ালশ, রেয়ান কিং আর মারভিন ডিলনের সাজানো ক্যারিবীয় ফাস্ট বোলিংয়ের বিপক্ষে সাহসী ব্যাটিং করে। আমরা সে অর্থে প্রতিদ্বন্দ্বিতা গড়ে তুলতে না পারলেও প্রথম ম্যাচের চেয়ে ভাল খেলি। রানও বেশি করি।
এরপর তৃতীয় ম্যাচ খেলি এডিনবরার গ্র্যাঞ্জ ক্রিকেট ক্লাব মাঠে স্বাগতিক স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। সে ম্যাচের শুরু ভাল হয়নি একটুও। আমরা শুরুতে ব্যাকফুটে চলে যাই। মাত্র ২৬ রানে খুইয়ে বসি ৫ উইকেট। সে চরম সংকটে দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন নান্নু ভাই (১১৬ বলে ৬৮ নট আউট)। সাথে দুর্জয়ও (৫৮ বলে ৩৬) ভাল সাপোর্ট দিয়েছিল।
মূলতঃ তাদের ব্যাটিং দৃঢ়তায় আমরা প্রাথমিক ধাক্কা সামলে মোটামুটি লড়াকু স্কোর গড়ি। পরে তিন পেসার হাসিবুল হোসেন শান্ত (২/২৬), মঞ্জুরুল ইসলাম (২/৩৩) আর খালেদ মাহমুদ সুজন (২/২৭) দুর্দান্ত বোলিং করলে আমরা ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেই। ওই ম্যাচে অন্য বোলাররাও ভাল বল করেন। উইকেট না পেলেও অফ স্পিনার দুর্জয় রান গতি মোটামুটি নিয়ন্ত্রণে রেখেছিল। নান্নু ভাই (১/১২) আর মনি ভাই (১/২৩) ও দারুণ ব্যাকআপ করেন। সবার সম্মিলিত চেষ্টায় আমরা জিতে যাই ২২ রানে।
স্কটিশদের বিপক্ষে জয়টি ছিল আমাদের বিশ্বকাপে লক্ষ্য পূরণের ম্যাচ। আমাদের মূল টার্গেটই ছিল স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে অন্তত এক ম্যাচ জিতে ফেরত আসা। তা করতে পারায় খুব স্বভাবতই একটা ভাল লাগায় আচ্ছন্ন ছিলাম সবাই।
পরের ম্যাচ ছিল ডারহামের চেস্টারলি স্ট্রিটের রিভারসাইড মাঠে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়া তখন আহত বাঘ। শেষ অবধি পাকিস্তানকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হলেও আমাদের সাথে ম্যাচের আগে পর্যন্ত তিন ম্যাচে স্টিভ ওয়াহর দল জিতেছিল মোটে এক ম্যাচে। সেটাও স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। নিউজিল্যান্ড (৫ উইকেটে) আর পাকিস্তানের (১০ রানে) কাছে হার মানা অজিদের সেমিফাইনাল খেলতে আমাদের বিপক্ষে শুধু জয়ই নয়, রান রেট সমৃদ্ধ করতে অনেক বড় ব্যবধানে জয় দরকার ছিল।
স্টিভ ওয়াহ, মার্ক ওয়াহ, অ্যাডাম গিলক্রিস্ট, রিকি পন্টিং, মাইকেল বেভান, টম মুডি, গ্লেন ম্যাকগ্রাথ, ডেমিয়েন ফ্লেমিং, ব্রেন্ডন জুলিয়ান আর শ্যেন ওয়ার্নের দুর্ধর্ষ অজি বাহিনী যখন বাঁচা-মরার লড়াইয়ে সামর্থ্যের সবটুকু নিংড়ে দেয়, সে ম্যাচে আমাদের মত প্রথমবার বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া দলের জন্য ভাল খেলা কঠিন ছিল বেশ।
তারপরও আমরা মনে হয় চেস্টারলি স্ট্রিটের রিভারসাইড মাঠের সিমিং কন্ডিশনে অসাধারণ ব্যাটিং করেন নান্নু ভাই (৯৯ বলে ৫৩*)। একদিক আগলে রাখার পাশাপাশি রানের গতি সচল রাখার কাজটি বেশ দক্ষতার সাথে করেন নান্নু ভাই। অপিও শুরুতে একটি সাবলীল (৭৫ বলে ৪২) ইনিংস খেলে যায়।
তাদের চেষ্টায় আমরা ১৭৮ রান করেছিলাম। রানরেট উন্নত করার নেশায় হাত খুলে খেলে ৭ উইকেটের সহজ জয়ে মাঠ ছাড়ে স্টিভ ওয়াহর দল।
জাগোনিউজ : পাকিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচতো অনেক ঘটনাবহুল, সে ম্যাচের আগের দিন স্বদেশি সাংবাদিকদের সাথে আপনার একটি স্মরণীয় মিডিয়া সেশন আছেন, সে সম্পর্কে একটু বলুন?
বুলবুল : হ্যাঁ, বিশ্বকাপে পাকিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচের আগের দিন ও ম্যাচের দিন সত্যিই অন্যরকম। অনেক ঘটনাবহুল ঐতিহাসিক। আমার স্পষ্ট মনে আছে, ৩১ মে নর্দাম্পটনশায়ারের সেই ঐতিহাসিক ম্যাচের ঠিক ২৪ ঘন্টা আগে কোচ গর্ডন গ্রিনিজকে অব্যাহতি দেয়া হয়। আমি আর গর্ডন পাশাপাশি রুমেই ছিলাম। গর্ডন খুব আপসেট ছিলেন। আমাকে দুঃখ ভারাক্রান্ত কন্ঠে শুধু একটি কথাই বলেছিলেন, বুলবুল, তোমার বোর্ড কর্তাদের সাহস এত কম কেন? আমাকে অব্যাহতি দিয়েছে। সেটা তাদের ইচ্ছে। তাই বলে অব্যাহতি পত্রটি কোন বোর্ড কর্তা নিজ হাতে দিতে পারলো না আমাকে? সে সময়ে বোর্ডের লজিস্টিক স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য শ্যামল নিয়ে গিয়েছিলেন গর্ডন গ্রিনিজের হাতে সেই অব্যাহতি পত্র।
জাগোনিউজ : পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম বিশ্বকাপে নিজেদের শেষ ম্যাচের আগের দিন স্বদেশি সাংবাদিকদের সাথে আপনার একটি স্মরণীয় সেশন ছিল। সেটা কেমন, একটু বলবেন?
বুলবুল : ওহ, ওটা মনে দাগ কেটে আছে আমার। সেটা কোন অফিসিয়াল প্রেস মিট বা সেশন ছিল না। এখনকার মত তখন অত নিয়ম কানুনের কড়াকড়ি ছিল না। এখন যেমন আপনি ইচ্ছে করলেও কোন ম্যাচের আগের দিন একটি দেশের ক্যাপ্টেনের রুমে যেতে পারবেন না। সেটা শুধু নিরাপত্তার কারনেই নয়, আইসিসি দূর্নীতি দমন সংস্থারও বিধি নিষেধ আছে।
কিন্তু তখন ওসবের বালাই ছিল না। সাংবাদিকরা অনায়াসে ক্রিকেটারদের হোটেল রুমে যেতে পারতেন। প্রিয় ক্রিকেটারের সাথে বসে নির্মল আড্ডা দেয়া চা-কফি পানও করা যেত।
আমার স্মৃতিতে এখন জ্বলজ্বল করছে পাকিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচের আগের দিন আমার হোটেল রুমে এসেছিলেন চার বাংলাদেশি সাংবাদিক উৎপল শুভ্র, আরিফুর রহমান বাবু , শহিদুল আজম আর অঘোর মন্ডল।
তারা আমার সাথে হোটেল কক্ষে একদম আড্ডাচ্ছলে অনেকটা সময় কাটালেন। আমরা ঢাকা লিগের সময় যেমন খেলার বাইরে সাংবাদিকদের সাথে প্রাণখুলে মিশতাম। আড্ডা দিতাম, অনেকটা সে রকম আলাপই হয়েছিল পাকিস্তানের সাথে খেলার আগে। সাংবাদিকরা ম্যাচ নিয়ে কথা বলছিলেন।
আমার অনুভুতি ও ম্যাচ ভাবনা জানতে চাওয়া হলে আমি বুক ভরা সাহস নিয়ে বলছিলাম, আমাদের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য ছিল স্কটল্যান্ডকে হারানো। সে লক্ষ্য পূরণ হয়েছে। এখন আমরা শেষ ম্যাচ খেলতে নামবো কাল। প্রতিপক্ষ পাকিস্তান। ক্রিকেটের পরাশক্তি। তাই বলে আমরাও বিনা যুদ্ধে আত্মসমর্পণ করতে রাজি না। আমরাও খেলার মাঠের লড়াইয়ে হারতে চাই না। সামর্থ্যের শেষ বিন্দু দিয়ে লড়াই করতে চাই। আমার বিশ্বাস, যদি সামর্থ্যের সেরাটা মাঠে উপহার দিতে পারি , তাহলে জিতেও যেতে পারি।’
বাস্তবে কিন্তু সেটাই হয়েছিল। আমি বিশ্বাস করি আমরা ৩১ মে নর্দাম্পটনশায়ারে সব শক্তি দিয়ে সামর্থ্যের সেরাটা উপহার দিয়ে পাকিস্তানীদের হারিয়ে ক্রিকেট বিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলাম।
জাগোনিউজ : ওটাতো ছিল সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলা কথা। নিজ দলের ক্রিকেটারদের জন্য শেষ ম্যাচের আগে আপনার বার্তা কি ছিল?
বুলবুল : হ্যাঁ, একটা ক্যাপ্টেন্স ম্যাসেজ ছিল। তার আবার একটা প্রেক্ষাপটও ছিল। পাকিস্তানের সাথে ম্যাচের দিন সকালে হঠাৎ নান্নু ভাই (মিনহাজুল আবেদিন), ফারুক ভাই (ফারুক আহমেদ) আর রফিক (মোহাম্মদ রফিক) এসে বলে, এটাই আমাদের শেষ ম্যাচ। আমরা এ ম্যাচ খেলেই আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে গুডবাই জানাচ্ছি।
আমি সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলাম, ভাইরা নান্নু ভাই, ফারুক ভাই আর রফিকের জন্য হলেও আমাদের ভাল খেলতে হবে। আসুন আমরা ওই তিন সিনিয়র ক্রিকেটারের বিদায়ী ম্যাচে নিজেদের সেরাটা উপহার দেয়ার প্রাণপন চেষ্টা করি। তখন কোর্চ গর্ডন গ্রিনিজ ঠিক আমার পাশেই দাঁড়ানো ছিলেন। তিনিও একটি ছোট্ট বক্তব্য দিলেন, ‘ডোন্ট গিভ আপ।’
জাগোনিউজ : আচ্ছা বিশ্বকাপের মাঠ ও মাঠের বাইরের কোন স্মরণীয় ঘটনা আছে, যা এখনো মনকে দোলা দেয়?
বুলবুল : তাতে আছেই। ৯৯’র পুরো বিশ্বকাপই আমার কাছে এক স্বপ্নের মিশন হয়ে আছে। হয়ত থাকবে আজীবন। স্কটল্যান্ডকে হারানো আর পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় জয়ের মুহূর্ত দুটি আমার সারা জীবন মনে থাকবে। হয়ত জীবনের অন্যতম স্মরণীয় মুহূর্ত হয়ে থাকবে।
এর বাইরে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা আছে। যার একটি বিশেষভাবে মনে দাগ কেটে আছে। যা এখনো মনকে নাড়া দেয়। সেটা বিশ্বকাপ শুরুর ঠিক আগের ঘটনা। আইসিসির একটা অফিসিয়াল অনুষ্ঠান ছিল সেটা। ১২ প্রতিযোগি দলের অধিনায়কের একটা আনুষ্ঠানিক সম্মিলনে অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ, পাকিস্তান অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম, ভারত অধিপতি মোহাম্মদ আজহার উদ্দীন, শ্রীলঙ্কার দলনেতা অর্জুনা রানাতুঙ্গা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্রায়ান চার্লস লারা, দক্ষিণ আফ্রিকার হ্যান্সি ক্রোনিয়ে, ইংলিশ ক্যাপ্টেন অ্যালেক স্টুয়ার্ট, নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক স্টিফেন ফ্লেমিং, জিম্বাবুয়ের অধিনায়ক অ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল, কেনিয়ান অধিনায়ক আসিফ করিম আর স্কটল্যান্ড অধিনায়ক জর্জ স্যালমন্ডের সাথে আমিও ছিলাম।
বিশ্বের শীর্ষ ১২ ক্রিকেট শক্তির অধিনায়কের এক সাথে বসা, কথা বলা, গল্প গুজব করা, চা কফি পানসহ আড়াই ঘণ্টা একসঙ্গে কাটানো। রীতিমত রোমাঞ্চকর অভিজ্ঞতা। সেখানে স্টিভ ওয়াহ, ওয়াসিম আকরাম, আজহার উদ্দীন, রানাতুঙ্গা, লারা, ক্রনিয়ে, ফ্লেমিং আর অ্যালেক- এই আট শীর্ষ ও এলিট ক্যাপ্টেনের সামনে আমি, কেনিয়ান ক্যাপ্টেন আসিফ করিম আর স্কটল্যান্ড ক্যাপ্টেন স্যালমৈন্ড রীতিমত ‘মিনোজ।’ ওইসব বিশ্ব তারকা আর সুপার পাওয়ার ক্যাপ্টেনের পাশে নিজেদের একটু ছোট আর খানিক অনাহুতই মনে হচ্ছিল। আমরা খানিক জবুথবু আর একটু আড়ষ্ট হয়েইছিলাম। আর তা না করে উপায়ও ছিল না।
কি করবো? তারকা অধিনায়করা প্রায় সবাই নিজেদের মত করে আলাপ আলোচনা আর আড্ডায় ব্যস্ত। আমি আর আসিফ করিম একটু দুরে নিজেদের মধ্যে কথা-বার্তা বলেই সময় কাটাচ্ছিলাম। বাকিরা হাই-হ্যালো করেই ক্ষান্ত দিলেন। মাঝে মধ্যে হয়ত একটি কি দুটি কথা বললেন। আমরা মানে আমি আর আসিফ করিম এক পাশে বসেছিলাম। হঠাৎ দেখি স্টিভ ওয়াহ এসে আমাদের পাশে বসলেন। আমরা একটু অপ্রস্তুতই হলাম। এতবড় এক ক্রিকেট ব্যক্তিত্ব। টিম অস্ট্রেলিয়ার ক্যাপ্টেন, ক্রিকেট বিশ্বের অন্যতম সেরা তারকা। তিনি নিজে এসেছেন আমাদের দুই দুর্বল ও নিচু সারির অধিনায়কের সাথে গল্প করতে। পাশে বসে সময় কাটাতে।
তাও অল্প সময়ের জন্য নয়। অনেকটা সময় কাটালেন আমাদের সাথে। আমাদের কাছ থেকে বাংলাদেশ আর কেনিয়ান ক্রিকেট সম্পর্কে জানলেন। কিভাবে ক্রিকেটীয় কর্মকান্ড পরিচালিত হয় শুনলেন। ঘরোয়া ক্রিকেটের অবকাঠামো মাঠ, উইকেট এবং আনুসাঙ্গিক সুযোগ সুবিধা কি? এসব জানতে চাইলেন।
আমিও তার কাছ থেকে ক্রিকেটীয় পরামর্শ চাইলাম। মাঠে অধিনায়কের করণীয় সম্পর্কে জানতে চাইলাম। কখন আক্রমণাত্মক হতে হয় অধিনায়ককে? কখন অ্যাটাকিং ফিল্ডিং সাজাতে হয়? কোন সময় একটু ডিফেন্সিভ কৌশল আঁটতে হয়? বোলার ব্যবহারের কলা কৌশলই বা কি- এসব জানতে চাইলাম। স্টিভ ওয়াহ ও আমাদের ওসব জানালেন।
সত্যি এতবড় ক্রিকেটার অসি ক্রিকেটের সব সময়ের অন্যতম সেরা অধিনায়ক- আমার পাশে বসে আড়াই ঘন্টা কাটালেন। কথা বললেন যেন অনেকদিনের চেনা। খুব ভাল লাগলো। রীতিমত পূলক অনুভব করলাম। আজ ২০ বছর পরও সেদিনের কথা মনে হয়। এখন আরও কাছাকাছি এসেছি স্টিভ ওয়াহর। সম্পর্ক আরও নীবিঢ় হয়েছে।
জাগো নিউজ : কিন্তু সেই স্টিভ ওয়াহ নাকি মাঠে অনেক কঠিন মনের? প্রতিপক্ষ হিসেবেও শক্ত। প্রতিদ্বন্দ্বীতামূলক মনোভাব খুব বেশি?
বুলবুল : খুব বেশি মানে। অনেক বেশি। অস্ট্রেলিয়ার সাথে ম্যাচের দিন নান্নু ভাই যখন একাই অসি বোলিংয়ের বিপক্ষে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন, তখন স্লিপ, গালি কিংবা ৩০ গজের ভিতর দাঁড়িয়ে তখনকার অসি অধিনায়ক স্টিভ ওয়াহ অনবরত কঠিন ভাষায় স্লেজিং করে যাচ্ছিলেন।
জাগোনিউজ : কোন প্রেস কনফারেন্সে আপনি সরাসরি কোচ গর্ডন গ্রিনিজের বিরোধিতা করেছিলেন?
বুলবুল : হ্যাঁ, এমনিতে কোচ হিসেবে আর সবার মত গর্ডন গ্রিনিজ আমারও খুব প্রিয় ছিলেন। তার অনেক গুণই আমার ভাল লাগতো। তিনিও চাইতেন বাংলাদেশ টেস্ট খেলুক। জাতি হিসেবে আমাদের অভিষেক ঘটে; কিন্তু গর্ডন সব সময় বলতেন, এখনো (৯৯’র বিশ্বকাপের সময় পর্যন্ত) টেস্ট খেলার অবস্থা হয়নি বাংলাদেশের। সম্ভাবনা আছে। তবে ঘরোয়া অবকাঠামো তত সমৃদ্ধ আর টেস্ট উপযোগি নয়। ফার্স্ট ক্লাস ক্রিকেটটা সবে শুরু হয়েছে। কয়েক বছর পর বিবেচনায় আতে পারে। এই মুহূর্তে টেস্ট খেলার জন্য তৈরি নয় বাংলাদেশ।
স্কটল্যান্ডের সাথে জয়ের পরে প্রেস কনফারেন্সে আমি প্রথম তার সেই বক্তব্যর বিপক্ষে অবস্থান নেই। এক ভিনদেশি সাংবাদিক জানতে চেয়েছিলেন, ‘আচ্ছা বাংলাদেশ কেন এখনই টেস্ট স্ট্যাটাস চায়? বাংলাদেশের কি টেস্ট খেলার যোগ্যতা আছে?’
গর্ডন ছিলেন আমার পাশে। তিনি উত্তরে বলে বসলেন, ‘আমার মনে হয় বাংলাদশ ঠিক এই মুহূর্তে টেস্ট খেলার জন্য তৈরি নয়।’
আমি সরাসরি কোচের বিপক্ষে অবস্থান নিলাম। জোরালো কন্ঠে বললাম, ‘আমরা যোগ্য। আমাদেরও টেস্ট খেলার যোগ্যতা আছে। তাই আমরা টেস্ট মর্যাদা চাইতেই পারি। সবচেয়ে বড় কথা, কেউ জন্ম থেকে শিখে আসে না। পথ চলতে চলতেই শেখে। আমরা যদি এখন টেস্ট মর্যাদা না পাই, তাহলে কোনদিন দিনও পাবো না। আমার বিশ্বাস, পাকিস্তানকে হারানোর মধ্য দিয়ে সে দাবি আরও জোরালো হয়েছিল আমাদের।
এআরবি/আইএইচএস/পিআর