গ্রীন লাইন পরিবহনের আচরণ আমাদের কাছে ভালো লাগছে না। আমাদেরকে হার্ড (কঠিন) হতে বাধ্য করবেন না বলে মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
গ্রীনলাইন পরিবহনের বাসচাপায় পা হারানো প্রাইভেটকারের চালক রাসেল সরকারকে টাকা পরিশোধ করতে গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষের প্রতি নির্দেশনা প্রতিপালনের বিষয়ে শুনানিকালে বুধবার (২২ মে) হাইকোর্ট এমন কথা বলেন।
পা হারানো রাসেল সরকারকে গ্রীন লাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষ ক্ষতিপূরণ বাবদ বাকি ৪৫ লাখ টাকার মধ্যে কোনো টাকা না দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করে আদালত বলেন, আমাদের উদারতাকে নমনীয়তা মনে করবেন না। আমরা আমাদের ব্যবস্থা নেব। যেটা করা দরকার সেটাই করব।
শুনানিতে গ্রীনলাইনের আইনজীবীর উদ্দেশে হাইকোর্ট বলেছেন, ‘আমরা শপথ নিয়েছি। আমাদের রাগ, বিরাগ ও অনুরাগের কিছু নেই। তবে, গ্রীনলাইনের আচরণ আমাদের ভালো লাগেনি।’
Advertisement
সড়ক দুর্ঘটনায় পা হারানো রাসেল সরকারকে অর্থ প্রদানে অগ্রগতিবিষয়ক শুনানিতে এসব মন্তব্য করেন আদালত।
শুনানির শুরুতে গ্রিন লাইনের আইনজীবী ওজিউল্লাহ বলেন, ২০ তারিখের পর থেকে গ্রিন লাইন কর্তৃপক্ষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করেনি। আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নের বিষয়েও বলেনি। তাদের আচরণে তিনি (ওজিউল্লাহ) খুশি নন। তাই গ্রীনলাইনের পক্ষ থেকে মামলা পরিচালনা ক্ষমতা প্রত্যাহার করার কথাও বলেন তিনি।
আদালত বলেন, ‘আপনি আনুষ্ঠানিকভাবে আপনার যা মত, তা করতে পারেন। আমরা পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেব।’ গ্রিন লাইনকে আদালত সতর্ক করে দিতে পারেন বলেও মত দেন এই আইনজীবী।
এ সময় আদালত রাসেলের চিকিৎসার খোঁজখবর জানতে চান। জবাবে রিট আবেদনকারী আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, ‘চিকিৎসা চলছে। গত তারিখের পর গ্রীনলাইন আর যোগাযোগ করেনি। বনানীর একটি ক্লিনিকে তার পায়ে অস্ত্রোপচার হয়েছে, যেখানে তিন লাখ টাকা ব্যয় হয়েছে। এই অর্থ গ্রীনলাইন দিয়েছে।’
Advertisement
রাসেল হাঁটতে পারেন কি না, আদালত তা জানতে চাইলে জবাবে শামসুল হক রেজা বলেন, রাসেল পুরোপুরি হাঁটতে পারেন না, ক্রাচে ভর দিয়েই হাঁটতে হয়। আদালত বলেন, দুর্ঘটনায় তাঁর দুটি পা-ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। খন্দকার শামসুল হক রেজা বলেন, রাসেল যেখানে চাকরি করতেন, সেখান থেকে চিকিৎসার জন্য ঋণ নিয়েছেন। গ্রীনলাইন কর্তৃপক্ষ টাকা না দেয়ার প্রক্রিয়া করছে, যা গণমাধ্যমে এসেছে। আদালত বলেন, ‘আইনজীবীর সঙ্গেও গ্রীনলাইনের যোগাযোগ হয়নি বলে আইনজীবী জানিয়েছেন। তিনি তার পাওয়ার প্রত্যাহার (মামলা পরিচালনার ক্ষমতা) করার কথা বলেছেন। তিনি পাওয়ার প্রত্যাহার করলে পর্যালোচনা করে পদক্ষেপ নেয়া হবে।’
আদালত রিট আবেদনকারী আইনজীবী খন্দকার শামসুল হক রেজার উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের উদ্বেগ সামগ্রিকভাবে আদেশের প্রতিফলন করি না। দেখেন, তারা এসে বলেননি কমিয়ে দেন (অর্থ), অসুবিধা আছে। আপনাদের সঙ্গে আলোচনা করতে পারত। রাসেলের দুটি পা-ই ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তারা ব্যবসা করবে, তাদের মানবীয় মূল্যবোধ থাকা উচিত। চিকিৎসার ব্যবস্থা নেবে।’
আইনজীবী ওয়াজিউল্লাহর উদ্দেশে আদালত বলেন, ‘আপনি এখনও গ্রীনলাইনের আইনজীবী আছেন। আপনি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করবেন। নমনীয়তাকে দুর্বলতা মনে করার কোনো কারণ নেই। আমাদের কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।’
এরপর আদালত ২৫ জুন পরবর্তী আদেশের তারিখ ধার্য করেন। এ সময় রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এ বি এম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এম সাইফুল আলম উপস্থিত ছিলেন।
প্রসঙ্গত গত বছরের ২৮ এপ্রিল রাজধানীর মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভারে কথা কাটাকাটির জেরে গ্রীনলাইন পরিবহনের এক বাসচালক ক্ষিপ্ত হয়ে প্রাইভেটকার চালকের ওপর দিয়েই বাস চালিয়ে দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই প্রাইভেটকারচালক রাসেল সরকারের (২৩) বাম পা বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় সংরক্ষিত আসনের সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট উম্মে কুলসুম স্মৃতি হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
ওই রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০১৮ সালের ১৪ মে রুল জারি করেন। রুলে কেন রাসেলকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দিতে নির্দেশ দেয়া হবে না তা জানতে চাওয়া হয়। সেই রুলের ওপর শুনানি শেষে হাইকোর্ট গত ১২ মার্চ এক রায়ে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন।
একই সঙ্গে রাসেলের চিকিৎসা-সংক্রান্ত যাবতীয় খরচ গ্রীনলাইন পরিবহন কর্তৃপক্ষকে বহন করতে এবং তার কৃত্রিম পা লাগানোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়। পরে এ নিয়ে আরও কয়েক দফা আদেশ হয়েছে। এসব আদেশের ধারাবাহিকতায় গত ৪ এপ্রিল হাইকোর্ট ১০ এপ্রিলের মধ্যে ক্ষতিপূরণ হিসেবে রাসেল সরকারের অনুকূলে ৫০ লাখ টাকা দিতে নির্দেশ দেন। অন্যথায় ১১ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি বন্ধ রাখতে নির্দেশ দেন আদালত।
এফএইচ /এমএমজেড/এমকেএইচ