জাতীয়

রূপালী ও বেসিক ব্যাংকে ২৩৯ কোটি টাকার অডিট আপত্তি

রূপালী ও বেসিক ব্যাংকে এক অর্থবছরেই প্রায় ২৩৯ কোটি টাকার অডিট আপত্তি ধরা পরেছে। এর মধ্যে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা শর্তানুযায়ী মেয়াদী ঋণ ও ফোর্সড লোন আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় কথা অডিট আপত্তিতে উঠে এসেছে। এসব অডিট আপত্তির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি দ্রুত শেষ করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

Advertisement

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চতুর্থ বৈঠকে এ অডিট আপত্তির বিষয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজী বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে আরও অংশ নেন কমিটির সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, জহিরুল হক ভূঁঞা মোহন, মনজুর হোসেন, আহসানুল ইসলাম (টিটু) , মুস্তফা লুৎফুল্লাহ ,ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং মো. জাহিদুর রহমান।

বৈঠকে ২০১২-১৩ অর্থবছরের হিসাব সম্পর্কিত মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের বার্ষিক অডিট রিপোর্ট ২০১৩-১৪ এর অডিট আপত্তির অনুচ্ছেদ ১,২,৩,৪,৫,১২ ও ১৪ নিয়ে আলোচনা হয়।

কমিটির সভাপতি রুস্তম আলী ফরাজী বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দুটির অবস্থা কত নাজুক তা অডিট আপত্তি থেকে বোঝা যায়। এর সঙ্গে জড়িতদের সরকার বিচারের আওতায় আনতে পারে। এছাড়া অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে কমিটিকে জানানোর সুপারিশ করা হয়েছে।

Advertisement

জানা যায়, বৈঠকে সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করে কর্মকর্তা/কর্মচারীরা আয়কর ব্যাংকের তহবিল হতে পরিশোধ করায় ব্যাংকে আর্থিক ক্ষতি দুই কোটি ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৫১ টাকা। কমিটি এটাকে ব্যক্তিগত দায় হিসেবে চিহ্নিত করে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অনধিক ৯০ দিনের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে রফতানিতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডিভাইন নীট ওয়্যার লিমিটেডের অনুকূলে সৃষ্ট ফোর্স্ড লোনের মেয়াদোত্তীর্ণ ২২ কোটি ৭৯ লাখ ৪৭৯ টাকা অনাদায়ী মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তি ধরা পরেছে। কমিটি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তির নামে ঋণ প্রদানকে চরম অন্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করে। যারা এ ঋণ প্রদানের সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ দায়েরকৃত মামলা তদারকি করার সুপারিশ করা হয়।

চূড়ান্ত অনুমোদন গ্রহণ ব্যতীত আর্থিক ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে প্রকল্প মেয়াদী ঋণ বিতরণ ও কিস্তি অনাদায়ী, সিসি (হাইপো) ও এলটিআর ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ায় কু-ঋণে পরিণত এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পিসি, এলসি, বিটুবি বিল ও ফোর্সড লোনসহ ৫৮ কোটি ৪ লাখ টাকা আদায় অনিশ্চিত হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। কমিটি পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ না করাকে অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের যারা ঋণ প্রদানের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে দায়ী রাখার বিধান চালুর পাশাপাশি বকেয়া ঋণের ওপর ৯% হারে সুদ আরোপ করে ঋণ পুনঃতফসিলকরণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে ক্রয়কৃত রফতানি বিল ও জামানতবিহীন ব্যাংক ওডি ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের ২৬ কোটি ৫৮ লাখ ৬১ হাজার ৪৫৯ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়।

Advertisement

সীমাতিরিক্ত চলতি মূলধন সিসি হাইপো ঋণবিতরণ, ডাউন পেমেন্ট ব্যতীত পুনঃতফসিলিকরণ এবং মঞ্জুরিপত্রের শর্তানুযায়ী মেয়াদী ঋণ ও ফোর্সড লোন আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংকের ১১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে বৈঠকে উল্লেখ করা হয়। এ অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ না করাকে অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের যারা ঋণ প্রদানের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে দায়ী রাখার বিধান চালুরর পাশাপাশি বকেয়া ঋণের উপর ৯% হারে সুদ আরোপ এবং দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে ঋণ পুনঃতফসিলকরণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে আরও জানানো হয়, সঠিক ঋণগ্রহীতা নির্বাচন না করে টিওডি ঋণ বিতরণ করায় অনাদায়ী অর্থ কু-ঋণে পরিণত হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ১ কোটি ৯৮ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৩ টাকা। এ অনাদায়ী টাকা অনধিক দুই মাসের মধ্যে আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে কমিটি।

বৈঠকে মেসার্স সিলেট প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজকে সহজামানতের দ্বিগুণ পরিমাণ ঋণ বিতরণ করায় মঞ্জুরিকৃত ঋণের অর্থ পরিশোধ না করায় ব্যাংকের ১০ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ৯৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। কমিটি দায়েরকৃত মামলার তদারকি জোরদার, ব্যাংকের যারা ঋণ প্রদানের সঙ্গে জড়িত তাদের সবাইকে দায়ী রাখার বিধান চালুর পাশাপাশি অনাদায়ী টাকা অনধিক দুই মাসের মধ্যে আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে সিএন্ড এজি মোহাম্মদ মুসলিম চৌধুরী, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, অডিট অফিস এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এইচএস/জেএইচ/পিআর