আন্তর্জাতিক

ঘর গোছাচ্ছে বিজেপি, তেজ কমেছে বিরোধীদের

এক শিবিরে স্বস্তির নিঃশ্বাস এবং হাসির রেখা আরও স্পষ্ট হয়ে ওঠার ইঙ্গিত। অন্য শিবিরে আচমকা যেন ভাটার টান তৎপরতায়। সমীকরণ মেলানোর চেষ্টায় যেন গুড়েবালি। বুথফেরত সমীক্ষায় মেলা আভাস কতটা প্রভাব ফেলেছে ভারতের নির্বচনী রাজনীতিতে তা বেশ পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে দুই পক্ষের শারীরিক ভাষায়।

Advertisement

অধিকাংশ সমীক্ষার ইঙ্গিত, নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন এনডিএ জোট তিন শতাধিক আসন পেয়ে ফের ক্ষমতায় থাকছে। দুই একটি সমীক্ষায় অবশ্য দেখা যাচ্ছে এনডিএ জোট ৩০০ আসনের কম পাবে। কিন্তু নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা এনডিএ জোট পাবে না এমন আভাস কোনও সমীক্ষাই দেয়নি।

বিরোধী শিবিরের প্রায় সব নেতাই বুথফেরত সমীক্ষার দেয়া পূর্বাভাসকে নস্যাৎ করেছেন। আগে অনকবার যে এসব সমীক্ষার দেয়া আভাস ভুল প্রমাণিত হয়েছে, সে কথা তারা মনে করিয়ে দিয়েছেন। কিন্তু দিল্লিতে বিজেপি ছাড়া সরকার গঠনের উপযুক্ত রাজনৈতিক বিন্যাস তৈরি করার জন্য যে তৎপরতা শুরু হয়েছিল বিরোধী শিবিরে তা আচমকা থমকে গিয়েছে। একা সেই তৎপরতা জিইয়ে রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী তথা তেলুগু দেশম প্রধান চন্দ্রবাবু নাইডু।

আগামী মঙ্গলবার জোট শরিকদের দিল্লিতে নিমন্ত্রণ করেছেন বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ। অশোক হোটেলে ডিনার পার্টির আয়োজন করেছেন নরেন্দ্র মোদির প্রধান সেনাপতি হিসেবে পরিচত অমিত শাহ। ফলাফল প্রকাশ হওয়ার পর পরবর্তী কৌশল নিয়ে একদফা আলোচনা সেরে নিতেই যে শরিক দলগুলোর নেতাদের এই আমন্ত্রণ জানিয়েছেন অমিত শাহ তা নিয়ে রাজনৈতিক শিবিরের খুব একটা সংশয় নেই।

Advertisement

তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে ভোট শেষ হওয়ার পরে নয় সব বুথফেরত সমীক্ষাগুলোর ফলাফল সামনে আসার পরে এই ডিনার পার্টির আয়োজন হয়েছে। বিজেপি সূত্রের খবর, মঙ্গলবারের নৈশভোজের টেবিলকে অঘোষিত ভাবেই বিজয় উদ্যাপনের টেবিল করে তুলবে বিজেপি। পরবর্তী সরকার গঠন নিয়ে প্রয়োজনীয় নানা আলোচনাও সেখানে প্রাথমিক ভাবে সেরে নেয়া হবে।

সমীক্ষার ফলাফল বিজেপিকে স্বস্তিতে না রাখলে অমিত শাহ এই পার্টির আয়োজন করতেন কি না, তা নিয়ে অনেকেরই সংশয় রয়েছে। এনডিএ গরিষ্ঠতায় পৌঁছতে পারছে না, এমন কোনো আভাস পাওয়া গেলে কিন্তু এই রকম তৃপ্ত ভঙ্গিতে মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কিছুতেই অপেক্ষা করতেন না অমিত শাহ। রোববার রাত বা সোমবার সকাল থেকেই বিজেপির ‘ক্রাইসিস ম্যানেজাররা’ সংখ্যা জোগাড়ের জন্য গোটা দেশে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে দিতেন।

স্বাভাবিক ভাবেই গেরুয়া শিবিরের মেজাজে যে স্বস্তির রং, তার ঠিক বিপরীত ছবিটাই দেখা যাচ্ছে বিরোধী শিবিরের একটি অংশে। বিজেপি বিরোধী শক্তিগুলোকে এক ছাতার তলায় আনার বিষয়ে এখনই আর খুব একটা উদ্যোগী হতে দেখা যাচ্ছে না কংগ্রেসকে। যে সব আঞ্চলিক বা রাজ্য দলের নেতা বৈঠকের ইচ্ছা প্রকাশ করছেন, রাহুল গান্ধী বা সোনিয়া গান্ধী তাদের সঙ্গে দেখা করছেন ঠিকই কিন্তু সরকার গড়ার প্রস্তুতি নেয়ার জন্য যে ধরনের তৎপরতা জরুরি তা আপাতত অনুপস্থিত।

আচমকা যেন একটু সাবধানী বহুজন সমাজ পার্টির (বিএসপি) প্রধান তথা উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীও। গত এক থেকে দেড় মাস ধরে বিজেপিকে এবং মোদি আর অমিত শাহ জুটিকে বিভিন্ন ইস্যুতে একের পর এক অত্যন্ত কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন তিনি।

Advertisement

শুধু উত্তরপ্রদেশের বিষয় নিয়ে নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বিজেপির সঙ্ঘাতের বিষয় নিয়েও মুখ খুলছিলেন দলিত এই নেত্রী। কিন্তু রোববার সন্ধ্যায় বুথ ফেরত সমীক্ষার ফল সামনে আসার পর থেকে যেন একটু সাবধানী হয়েছেন তিনি।

দিল্লি গিয়ে সোনিয়া-রাহুলের সঙ্গে বৈঠক করার পরিকল্পনা আপাতত বাতিল করে দিয়েছেন মায়াবতী। উত্তরপ্রদেশে যার হাত ধরে লড়লেন তিনি সেই অখিলেশ যাদবকেও মায়ার দেখা পেতে হয়েছে তার বাড়ি গিয়ে।

হাল ছাড়ছেন না শুধু চন্দ্রবাবু নায়ডু। শনিবার থেকে শুরু করে গত তিনদিন দেশের এক প্রান্ত থেকে আর এক প্রান্ত পর্যন্ত অক্লান্ত ছুটছেন তিনি। সিপিএম সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি এবং সিপিআই-এর সুধাকর রেড্ডির সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

রোববার প্রথমে উত্তরপ্রদেশে গিয়ে বৈঠক করেছেন এসপি সভাপতি অখিলেশ যাদব এবং বিএসপি প্রধান মায়াবতীর সঙ্গে। সেদিন দিল্লিতে দুই দুইবার বৈঠক করেছেন রাহুল গান্ধীর সঙ্গে, এক বার সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে। বৈঠক করেছেন এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী তথা আম আদমি পার্টির (আপ) প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়াল এবং লোকতান্ত্রিক জনতা দলের প্রধান শরদ যাদবের সঙ্গেও।

সোমবার চন্দ্রবাবু নাইডু এসেছেন কলকাতায়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছেন তিনি। ভোটের ফল প্রকাশের পরবর্তী রণকৌশল নিয়ে আলোচনা করতেই যে এই বৈঠক তা স্পষ্ট করেই জানানো হয়েছে।

বিজেপির শরিক শিবসেনা বলছে, শুধু শুধু নিজের ক্লান্তি বাড়াচ্ছেন চন্দ্রবাবু। বিদায়ী সরকারের মন্ত্রী তথা বিজেপি প্রার্থী গিরিরাজ সিংহের শ্লেষাত্মক মন্তব্য, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে রাজনৈতিক আইসিইউ’তে চলে যাওয়া উচিত চন্দ্রবাবু নাইডুর।’

নিজের অবস্থান নমনীয় করে উড়িশার মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি প্রধান নবীন পট্টনায়কের ইঙ্গিত, বিজেপি নিয়ে আপাতত কোনও সমস্যা নেই তার। উড়িশার উন্নয়নে যারা সাহায্য করবেন, তাদের সঙ্গেই হাত মেলাতে প্রস্তুত। তার এমন মন্তব্যকে মোদির প্রতি স্পষ্ট বার্তা হিসেবেই দেখছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

তবে শেষ পর্যন্ত কার পক্ষে গেল দেশের রায় বৃহস্পতিবার বিকেলের আগে তা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না। কিন্তু বুথ ফেরত সমীক্ষা যে একটা আবহ তৈরি করেছে, তা অস্বীকার করার অবস্থায় প্রায় কেউই নেই। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বা চন্দ্রবাবু নাইডুরা এখনো বুথ ফেরত সমীক্ষাকে সম্পূর্ণ নস্যাৎ করারই পক্ষপাতী।

সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা

এসএ/পিআর