পরিচ্ছন্ন, সবুজ ও পরিবেশবান্ধব ঢাকার প্রতিশ্রুতিতে কোনো অগ্রগতি নেই ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হকের। অথচ তার নির্বাচনী ইশতেহারে মূল শ্লোগান ছিলো এমন কথা। দায়িত্ব গ্রহণের চার মাস চলে গেছে। চলতি বছরের ৬ মে শপথ নিয়ে আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব পালন শুরু করেন তিনি। কিন্তু ফল যেন শূন্য।অবশ্য আনিসুল হক শনিবার বলেন, জলাবদ্ধতা আর যানজট দূর করার কোনো জাদুর কাঠি নেই তার কাছে। তবে তিনি বলেন, রাস্তা দখল করে অনেকে মাস্তানি করেন। কিন্তু আমি ব্যবসায়ী মানুষ হলেও মাস্তানি করতেই এখানে এসেছি। শুধু দরকার নগরবাসীর সহায়তা।আনিসুল হক তার ঘোষিত ইশতেহারে বলেছিলেন, ‘নাগরিকের সুস্বাস্থ্য’ নগর ব্যবস্থাপনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজের একটি। পরিচ্ছন্ন ও সবুজের সঙ্গে নাগরিকের স্বাস্থ্যের বিষয়টি জড়িত। স্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত সরাসরি উৎপাদন ও উন্নয়নের সম্পর্ক। তাই সবার আগে নিশ্চিত করতে চাই পরিচ্ছন্ন, সবুজ এবং পরিবেশবান্ধব ঢাকা উত্তর।এ জন্য রাস্তাঘাট, বাসা-বাড়ি নির্মাণ এবং নগর পরিকল্পনায় সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হবে। সবুজ ঢাকা গড়ে তুলতে এলাকাভিত্তিক পরিকল্পিত বনায়ন করা হবে। উৎসাহিত করা হবে বাড়িভিত্তিক সবুজায়ন।নগর পরিকল্পনায় পরিবেশকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া, নগরায়ণ হবে পরিবেশবান্ধব। জল, জমি, বায়ু, শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়া হবে। ব্যাপক প্রচারণা চালানো হবে শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করতে। পাশাপাশি ‘শব্দসীমা’ বিষয়ে প্রণীত আইন বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট অধিদফতর ও সংস্থাগুলোর সঙ্গে মিলে সমন্বিত কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।তবে গত চার মাসে এসব ক্ষেত্রে কার্যকর একটি উদ্যোগেরও দেখা মেলেনি। অবশ্য এখন তিনি বলছেন, সময়ের দরকার। এলাকাভিত্তিক জলাবদ্ধতা দূরীকরণে স্থানীয় এবং বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ সাপেক্ষে দ্রুত পদক্ষেপ নেয়ার কথা বলেও কোনো কাজ করতে পারেনি চার মাসে।বর্জ্য ব্যবস্থাপনা : আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার কোনো অগ্রগতি নেই। অথচ নগর পরিচ্ছন্ন রাখতে ও আধুনিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার বড় অঙ্গীকার ছিল ব্যবসায়ী থেকে নগরপিতা বনে যাওয়া আনিসুল হকের।ময়লা, আবর্জনা, দুর্গন্ধ থেকে নগরবাসীকে মুক্তি দিতে পর্যায়ক্রমে সড়ক থেকে ময়লার ভাগাড়গুলো (ডাস্টবিন) সরিয়ে নেয়ার কথা বলেছিলেন তিনি। কিন্তু সূত্র বলছে, গত চার মাসে একটি ভাগাড়ও সরাতে পারেননি। তবে গৃহস্থালিবর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বাসা-বাড়িতে তিন রঙের বিন (ময়লা রাখার পাত্র) সরবরাহ করার একটি পদক্ষেপ শিগগিরই হাতে নেয়া হবে বলে জানা গেছে।নিরাপদ স্বাস্থ্যকর ঢাকা : আরবান হেলথ কেয়ার বা নগর স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে স্বল্প-নিম্ন আয় ও বস্তিবাসী নাগরিকদের জন্য সুলভে চিকিৎসা দেয়ার কথা শুধু ইশতেহারের ঘোষণাতেও শেষ বলে জানা গেছে।সচল ঢাকা :নাগরিক জীবনের প্রধান সংকটের নাম ‘যানজট’। শুধুমাত্র যানজটের কারণে নগরবাসীর প্রতিদিন ৮০ লাখ কর্মঘণ্টা নষ্ট হয়। সড়কে অব্যবস্থাপনা, চালকদের সচেতনতার অভাব, যত্রতত্র পার্কিং, সিগন্যাল না মানা, ব্যক্তিগত পরিবহনের আধিক্যকে যানজটের প্রধান কারণ ধরা হয়। যদিও যানজট নিরসনে সিটি কর্পোরেশনের ক্ষমতা সীমিত। তবে প্রতিশ্রুতি ছিল- ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) সঙ্গে সমন্বয়ের পাশাপাশি উন্নত ব্যবস্থাপনা ও সচেতনতা তৈরির মাধ্যমে ঢাকাকে সচল-গতিময় ও উৎপাদনমুখর রাখার।সূত্র বলছে, এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিয়েও অদৃশ্য কারণে পিছিয়ে গেছেন এই নগরপিতা। চার মাসেও পারেননি নিরাপদ ও পরিকল্পিত পার্কিংয়ের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে। যত্রতত্র পার্কিং নিষিদ্ধ করা হবে এবং পুরো ব্যবস্থাকে শৃঙ্খলার মধ্যে আনা হবে এমন ঢাক পিটিয়েছেন তিনি।স্মার্ট ও ডিজিটাল ঢাকা : আধুনিক স্থাপত্যকলা ও নান্দনিকতার মিশেলে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের নিজস্ব পরিবেশবান্ধব বা সবুজ ভবন নির্মাণ করা হবে। যা হবে ঢাকা উত্তরের নাগরিকদের ইতিহাস, ঐতিহ্য, গৌরব ও চেতনার প্রতীক। এমন ঘোষণা দিলেও এ বিষয়ে দৃশ্যত কোনো নজর নেই।এসএ/একে/বিএ
Advertisement