জাতীয়

জামায়াত ইস্যুতে তুরস্ক এখন নীরব

মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী নেতাদের পক্ষে এক সময় সরব ছিল তুরস্ক। যা নিয়ে দু’দেশের মধ্যকার সম্পর্কে টানাপোড়নও সৃষ্টি হয়। তবে বাংলাদেশের সাথে সুসম্পর্কের স্বার্থে জামায়াত ইস্যুতে কথা বলা থেকে সরে যায় দেশটি। সোমবার (২০ মে) দু’দেশের মধ্যে অনুষ্ঠিতব্য তৃতীয় ফরেন অফিস কনসালটেশনেও (এফওসি) স্থান পাচ্ছে না জামায়াত ইস্যু। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

Advertisement

এদিকে বিষয়টিকে সম্পর্কের একধাপ উন্নয়ন হিসেবে দেখছেন কূটনৈতিকরা। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জাগো নিউজকে বলেন, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কের যে অবনতি হয়েছিল তা এখন কিছুটা স্বাভাবিক। বিদ্রোহ মোকাবেলা করাসহ তুর্কি নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ অনেক সঙ্কটও কেটেছে। দেশ দুটি এখন পেছনের কথা ভুলে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পক্ষে।

তিনি আরও বলেন, বাস্তব পরিস্থিতি বুঝেই তুরস্ক জামায়াত ইস্যুতে আমাদের সঙ্গে আর কথা বলেনি। বাংলাদেশের পক্ষ থেকেও এ বিষয়টি আর তোলা হয়নি।

সোমবারের (২০ মে) বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের সব বিষয়ে নিয়ে আলোচনা হবে বলেও জানান ওই কর্মকর্তা।

Advertisement

উল্লেখ্য, ১৯৭১ সালের মানবতাবিরোধী অপরাধে দণ্ডিতদের পক্ষ নিয়ে বক্তব্য-বিবৃতি দেওয়ায় দুই দেশের সম্পর্কের অবনতি হয়েছিল। রাষ্ট্রদূত ডেকে নিয়ে যাওয়া এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়া ঢাকায় বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিয়ে আসার মত অবস্থাও হয়েছে। বিদ্রোহ মোকাবেলা করাসহ তুর্কি নেতৃত্বের অভ্যন্তরীণ অনেক সঙ্কটও কেটেছে ওই সময়ে। ঢাকার সঙ্গে পূর্বনির্ধারিত বৈঠকও বাতিল হয়।

সূত্র জানায়, সোমবার (২০ মে) বাংলাদেশ ও তুরস্কের মধ্যে তৃতীয় পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেবেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব মো. শহীদুল হক। আর তুরস্কের প্রতিনিধি দলের পক্ষে নেতৃত্ব দেবেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব।

বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক কূটনীতিতে জোর দেওয়া হবে। আর তুরস্কের পক্ষ থেকে জোর দেওয়া হবে অধিবাসী প্রত্যাবাসন। জানা যায়, অবৈধভাবে ইউরোপে পাড়ি জমাতে গিয়ে বিভিন্ন সময়ে তুরস্কে ২৭০ জন বাংলাদেশি আটক রয়েছে। তাদের ফেরত পাঠাতে চায় আঙ্কারা।

এছাড়া দ্বিপাক্ষিক রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ইস্যুসহ আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক রাজনীতি, রোহিঙ্গা সঙ্কট, জলবায়ু পরিবর্তন, ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হবে।

Advertisement

সূত্র জানায়, বাংলাদেশের খাদ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্পে নতুন প্রক্রিয়াকরণ পদ্ধতি, কারখানা ও কারিগরি সহযোগিতা রফতানি করার সক্ষমতা রয়েছে তুরস্কের। চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যে ডিজাইন ও এক্সেসরিজ, সিরামিক, হোম-টেক্সটাইলের কারিগরি সহযোগিতা দিয়ে দামি পণ্য বাংলাদেশ থেকে প্রস্তুত করা এবং পরবর্তিতে তা তুরস্কে রফতানির সুযোগ রয়েছে।

এছাড়া বাংলাদেশে রাজনৈতিক স্থীতিশীলতা, শ্রম অধিকার, তৈরি পোশাক শিল্পের কাজের পরিবেশ, ব্যাংকিং সিস্টেম, যোগাযোগ ব্যবস্থা আধুনিকায়ন ও উন্নয়ন নিয়ে আগ্রহ দেখাচ্ছে তুরস্ক। বাংলাদেশে পক্ষ থেকে তুরস্কের দেশি শিল্প সংরক্ষণে সেফ গার্ড ডিউটি বাংলাদেশি পণ্যের জন্য শিথিল করা, স্বাস্থ্যখাতে সহযোগিতা, বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রফতানি, বিনিয়োগ সুরক্ষা, ভিসা জটিলতা দূর করাসহ বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হবে।

জেপি/আরএস