আন্তর্জাতিক

মোদিকে ঠেকাতে একাট্টা বিরোধীরা, মহাজোট গঠনে তুমুল দৌড়ঝাঁপ

ভারতের চলমান লোকসভা নির্বাচনের শেষ দফার ভোটের আগে ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) বিরোধী মহাজোট গঠনে তৎপর হয়ে উঠেছে দেশটির প্রধানবিরোধী দল কংগ্রেস। আগামী ২৩ মে ভোটের চূড়ান্ত ফল ঘোষণার আগেই এই তৎপরতা দৃশ্যমান হয়ে উঠেছে।

Advertisement

ইতোমধ্যে কংগ্রেসের পক্ষ থেকে জোটসঙ্গী হিসেবে তামিলনাড়ুর রাজনৈতিক দল দ্রাভিড়া মুন্নেট্রা কাড়াগাম (ডিএমকে) এবং ওড়িশার বিজেডি, অন্ধ্রপ্রদেশের ওয়াইএসআর কংগ্রেস এবং তেলেঙ্গানার রাষ্ট্র্র সমিতির (টিআরএস) মতো আঞ্চলিক দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে মহাজোট গঠনে যোগাযোগ করা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিরোধী ঐক্যকে অটুট করে তোলার লক্ষ্যে কংগ্রেস এই প্রচেষ্টা শুরু করেছে।

এছাড়া বিহার এবং ঝাড়খণ্ডের স্থানীয় জনতা দল (সেকুলার), মহারাষ্ট্রের আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল জাতীয়তাবাদী কংগ্রেস পার্টি (এনসিপি) এবং উত্তরপ্রদেশের প্রধান দুই দল সমাজবাদী পার্টি এবং বহুজন সমাজ পার্টির নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করছে কংগ্রেস। এবারের নির্বাচনে মোদিকে হারানোর লক্ষ্যে এসব দলের সঙ্গে মহাঐক্য গড়ার কাজ শুরু করেছে দলটি।

আরও পড়ুন :‘শরীরী ভাষাই বলছে হার মেনে নিয়েছেন মোদি’

Advertisement

ভারতীয় একটি গণমাধ্যম বলছে, শনিবার সকালের দিকে রাজধানী নয়াদিল্লিতে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধীর বাসভবনে গিয়ে দেখা করেছেন বিরোধী শিবিরের অন্যতম মুখ অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী এন চন্দ্রবাবু নাইডু। ভোট পরবর্তী সম্ভাব্য পরিস্থিতি ও জোট নিয়ে তারা আলোচনা করেছেন।

কংগ্রেস সভাপতির পদ বছর খানেক আগে ছাড়লেও সোনিয়া গান্ধী এখনও ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের (ইউপিএ) চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করছেন। ৭২ বছর বয়সে এসে এবার নিজ দলকে ক্ষমতায় ফেরাতে ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ করছেন তিনিও। আগামী ২৩ মে চলতি লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল বেরোনোর পরে বিরোধীদের সঙ্গে নিয়ে মহাজোট গঠনের দায়িত্ব নিজ কাঁধে তুলে নিয়েছেন বর্ষীয়ান এই নেত্রী।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে ঠেকাতে বিরোধীদের একই পাটাতনে নিয়ে আসার উদ্যোগ নিয়েছেন তিনি। নির্বাচনে সোনিয়া গান্ধী তার কেন্দ্র রায়বেরেলি থেকে লড়লেও নির্বাচনের প্রচারপর্বে সেভাবে তাকে দেখা যায়নি। তার ছেলে কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী এবং মেয়ে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী নির্বাচনী প্রচার সামলেছেন।

আরও পড়ুন : লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির ভরাডুবির ইঙ্গিত!

Advertisement

কিন্তু ফল প্রকাশের সময় যত ঘনিয়ে আসছে, সোনিয়ার তৎপরতা ততই বাড়ছে। এমনকি অতীতে তাকে কেন্দ্র করে যেসব নেতা কংগ্রেস থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন, এখন তাদেরকে কংগ্রেসের সঙ্গে একমঞ্চে আনার গুরুদায়িত্ব পালন করছেন সোনিয়া।

কংগ্রেস এখন এতটাই ছাড় দিতে প্রস্তুত যে দলটির জ্যেষ্ঠ নেতা গোলাম নবী আজাদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী পদ পাওয়ার জন্য তারা আকুল হবেন না। যদিও পরে কংগ্রেস নেতা রণদীপ সুরজেওয়ালা বলেছেন, একক বৃহত্তম দল নির্বাচিত হলে কংগ্রেসের নেতৃত্বের ওপরে দাবি জানানো স্বাভাবিক। কিন্তু সব কিছুই এখন নির্ভর করছে ফলাফল কী হয়, তার ওপর।

মোদিবিরোধী জোট গড়তে দেশটির তিনটি প্রধান আঞ্চলিক দলকে কাছে টানার চেষ্টা করছে কংগ্রেস। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেস, মায়াবতীর বিএসপি এবং অখিলেশ যাদবের এসপি। অনেক আঞ্চলিক নেতার সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্ক ভালো থাকায় এই দলগুলোর সঙ্গে এখন যোগাযোগ করছেন সোনিয়া। ২৩ মে নির্বাচনী ফল ঘোষণার দিনে নয়াদিল্লিতে সোনিয়া গান্ধীর সভাপতিত্বে বৈঠকে বসবেন মহাজোটের সম্ভাব্য এসব দলের শীর্ষ নেতারা। তার আগে দফায় দফায় বৈঠক করেছেন বিরোধীরা। শেষদফায় রোববারের ভোটের আগেই মুখোমুখি বসতে চলেছেন চন্দ্রবাবু নাইডু এবং রাহুল গান্ধী। দিল্লিতে এনসিপি নেতা শারদ পাওয়ারের সঙ্গে ইতোমধ্যে একদফা বৈঠক সেরেছেন চন্দ্রবাবু নাইডু।

আরও পড়ুন : অভিনেতা কমল হাসানকে জুতা-পাথর-ডিম নিক্ষেপ

ওয়ান ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রাহুলের সঙ্গে দিল্লিতে বৈঠক করার পর চন্দ্রবাবু নাইডু উত্তর প্রদেশের লখনউয়ে বিএসপি নেত্রী মায়াবতী এবং এসপি নেতা অখিলেশ যাদবের সঙ্গেও বৈঠক করবেন। রাহুলের সঙ্গে বৈঠকের আগে শুক্রবার তিনি সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরি এবং আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বৈঠকে ভোট পরবর্তী জোট নিয়ে আলোচনা হয়েছে।

শুক্রবার চন্দ্রবাবু জানিয়েছিলেন, বিজেপি বিরোধী সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে তিনি হাত মেলাতে প্রস্তুত। তাতে কেসিআর থাকলেও আপত্তি নেই তার। তেলেঙ্গানা নিয়ে কেসিআরের সঙ্গে চন্দ্রবাবু নাইডুর বিবাদ নতুন নয়। চরম বিরোধীদলকেও বিজেপিবিরোধী জোটে নিতে কোনো আপত্তি নেই বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি।

ভারতের এবারের ১৭ তম লোকসভা নির্বাচনে সাত দফার ভোট শুরু হয়েছিল ১১ এপ্রিল। যা শেষ হচ্ছে রোববার (১৯ মে)। ভোটগ্রহণ শেষে নির্বাচনের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হবে ২৩ মে। ওইদিন জানা যাবে দেশটির ক্ষমতায় মোদির বিজেপি নাকি রাহুল গান্ধীর কংগ্রেস।

এসআইএস/এমএস