অর্থনীতি

কিরণমালা-পাখি ছেড়ে বুটিকসে মজেছে নারীরা

একে একে চলে গেছে ১২ রোজা। মাত্র দুই সপ্তাহ পরই পালিত হবে মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর। এ উৎসব উদযাপনের বড় অংশজুড়েই থাকে নতুন পোশাক। কেমন হবে সেই নতুন পোশাক তা নির্ভর করে ব্যক্তির সামর্থ ও মন-মানসিকতার ওপর।

Advertisement

পছন্দের সেই পোশাকের খোঁজে ক্রেতারা ছুটছেন রাজধানীর এক মার্কেট থেকে আরেক মার্কেটে। আর ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে বিক্রেতারাও বাহারি পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। তবে পুরুষের তুলনায় পোশাকের সেই পসরায় নারী ও শিশুদের প্রাধান্যই বেশি।

নারীদের জন্য থ্রি-পিস, ফোর-পিস, টু-পিস, লেহেঙ্গা, গাউনসহ বাহারি নামের পোশাক থরে থরে সাজিয়ে রাখেন ব্যবসায়ীরা। এসব পোশাকের মধ্যে ভারতীয় টিভি সিরিয়ালের নামে কোনো একটি পোশাক ক্রেতাদের বিশেষভাবে আকর্ষণ করবে কয়েক বছর ধরে ঈদ বাজারে এটাই যেন রীতি হয়ে দাঁড়িয়েছিল দেশের বাজারে।

তবে এবার এ রীতিতে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে। এবারের ঈদ বাজারে নারীদের পোশাকের ক্ষেত্রে টিভি সিরিয়ালের নাম ধারণ করা কোনো পোশাকের তেমন কদর নেই। দেশীয় সুতি থ্রি-পিসের প্রতিই এবার নারীদের আকর্ষণ বেশি। এর মধ্যে নারীদের সব থেকে বেশি আকর্ষণ করছে বুটিকসের থ্রি-পিস।

Advertisement

নারীদের পোশাকে টিভি সিরিয়ালের দাপট কমলেও শিশুদের ক্ষেত্রে এখনও কিছুটা প্রভাব রয়েছে। গত দুই বছরের মতো এবারও ঈদ বাজারে শিশুদের পোশাকের ক্ষেত্রে ‘সুলতান সুলেমান’ দাপট ধরে রেখেছে।

শনিবার রাজধানীর শান্তিনগরে অবস্থিত টুইন টাওয়ারের পোশাক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে এমনই তথ্য পাওয়া গেছে।

তারা জানিয়েছেন, গত বছর নারীদের পোশাকে ‘মধুবালা’ ড্রেস দাপট দেখায়। ভারতীয় একটি সিরায়ালের জনপ্রিয় নায়িকা মধুবালা। তার নামেই মধুবালা পোশাকের নামকরণ হয়। তবে এবার মধুবালার প্রতি ক্রেতাদের তেমন আগ্রহ নেই। মধুবালার আগে দাপট দেখানো ‘কিরণমালা’ বা ‘পাখি’র প্রতিও নারীদের তেমন আগ্রহ নেই। এবার নারীরা বুটিকসের থ্রি-পিসের দিকেই ঝুঁকছেন বেশি।

টুইন টাওয়ারের ব্যবসায়ীরা আরও জানিয়েছেন, ঈদের এখনও দুই সপ্তাহ বাকি। তবে ইতোমধ্যেই জমে উঠেছে ঈদের পোশাক বিক্রি এবং সেই বিক্রির পরিমাণ বেশ ভালো। মার্কেটটির অন্তত ১০ জন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, গত বছরের তুলনায় এবার বিক্রি বেশ ভালো। তবে বিক্রি পরিস্থিতি খারাপ এমন মন্তব্যও করেছেন কোনো কোনো ব্যবসায়ী।

Advertisement

মার্কেটটিতে দীর্ঘদিন ধরে নারীদের পোশাকের ব্যবসা করছে এমন একটি প্রতিষ্ঠান আরিয়ান ফ্যাশন। প্রতিষ্ঠানটির মালিক মো. মানিক হোসেন জুয়েল জাগো নিউজকে বলেন, ‘আল্লাহর রহমতে এবার বিক্রি বেশ ভালো। প্রথম রোজা থেকেই ঈদের পোশাক বিক্রি হচ্ছে। তবে গতকাল শুক্রবার সব থেকে ভালো বিক্রি হয়েছে। এখন পর্যন্ত যে বিক্রি হয়েছে তাতে আমরা খুবই সন্তুষ্ট।’

তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে ৩ হাজার থেকে ৭ হাজার টাকা দামের চার পার্টের গাউন আছে। থ্রি-পিস আছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকার মধ্যে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে বুটিকসের থ্রি-পিস। সুতির এ থ্রি-পিস দেখতে যেমন সুন্দর, তেমনি পরতেও আরাম। এ কারণেই হয়তো বুটিকসের থ্রি-পিসের প্রতি নারীরা বেশি ঝুঁকছেন।

নারীদের পোশাক বিক্রির আর একটি প্রতিষ্ঠান এন ক্রাফট। প্রতিষ্ঠানটিতে জাগো নিউজের কথা হয় মো. ফরহাদ রেজার সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে সুতি, সিল্ক ও জর্জেটের থ্রি-পিস আছে। এসব থ্রি-পিস ১ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে বিক্রি করা হচ্ছে। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে বুটিকসের থ্রি-পিস ও কামিজ।’

বিক্রি পরিস্থিতি সম্পর্কে জানতে চাইলে ফরহাদ রেজা বলেন, ‘শবে বরাতের পর থেকেই ঈদের পোশাক বিক্রি শুরু হয়ে গেছে। তবে এখন পর্যন্ত সব থেকে ভালো বিক্রি হয়েছে গতকাল শুক্রবার। এখন পর্যন্ত বিক্রি পরিস্থিতি গত বছরের তুলনায় ভালো। আমরা আশা করছি, বাকি দিনগুলোতেও ভালো বিক্রি হবে।’

আগে টিভি সিরিয়ালের নামের সঙ্গে মিল থাকা পোশাক বেশি বিক্রি হতো, এখন কী অবস্থা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এখন টিভি সিরিয়ালের নাম দেয়া পোশাকের প্রতি মানুষের তেমন আগ্রহ নেই। রুচির অনেক পরিবর্তন হয়েছে। সবাই এখন আরামদায়ক পোশাক পরতে চায়। যে কারণে সুতির থ্রি-পিসের প্রতি আগ্রহ বেশি।’

বিক্রি পরিস্থিতি নিয়ে মার্কেটটির বেশিরভাগ ব্যবসায়ী সন্তুষ্টি প্রকাশ করলেও কিছুটা হতাশ ড্রেস ডিকশনারীর মো. রুহুল আমিন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, ‘ঈদের বিক্রি এখনও শুরু হয়নি। গতকাল শুক্রবার গেছে। ভেবেছিলাম ভালো বিক্রি হবে। কিন্তু আমাদের সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। অন্যবার ১২ রোজায় ১০ থেকে ১২ লাখ টাকার বিক্রি হয়। কিন্তু এবার দুই লাখ টাকারও বিক্রি হয়নি। কাস্টমার খুব একটা আসছে না, যে কারণে আমাদেরও মন খারাপ।’

ছেলেদের পোশাক বিক্রির প্রতিষ্ঠান স্টাইল পয়েন্টের মো. মেহেদি বলেন, ‘বাচ্চাদের পোশাকে এবারও গত দুই বছরের মতো সুলতান সুলেমান সব থেকে বেশি বিক্রি হচ্ছে। ৮৫০ থেকে ১ হাজার টাকার মধ্যে সুলতান সুলেমান নামের এ পোশাক পাওয়া যাচ্ছে। এ ছাড়া বাচ্চাদের পোশাকের মধ্যে ৭০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দামের শার্ট, ১ হাজার ৩৫০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা দামের ভারতীয় টি-শার্ট, ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দামের দেশি টি-শার্ট ভালো বিক্রি হচ্ছে।’

বেচাকেনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এবার বিক্রি বেশ ভালো। প্রতিদিনই ক্রেতা আসছেন। তবে গতকাল সব থেকে ভালো বিক্রি হয়েছে। সাধারণত রোজার প্রথমদিকে শুক্র-শনিবার বেশি বিক্রি হয়। আর ২০ রোজার পর প্রতিদিনই সমানতালে বিক্রি হয়। আমরা আশা করছি, এবার গত বছরের তুলনায় অনেক ভালো বিক্রি হবে।’

ছেলেদের পোশাক বিক্রির আরেক প্রতিষ্ঠান বডি ফ্রেমের পারভেজ বলেন, ‘ঈদ উপলক্ষে এখন পর্যন্ত ভালো বিক্রি হয়েছে। বাকি দিনগুলোতে কী হয় দেখা যাক। আমাদের কাছে ছেলেদের জন্য বিভিন্ন ধরনের ইন্ডিয়ান ফেব্রিক্স আছে। ১৭০০ থেকে ২ হাজার টাকার মধ্যে এগুলো বিক্রি করা হচ্ছে। পাশাপাশি ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা দামের পোলো টি-শার্ট, ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ টাকা দামের কারচুপি পাঞ্জাবি, ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা দামের টি-শার্ট এবং ১ হাজার ২০০ টাকা দামের গ্যাবার্ডিন প্যান্ট, ৮০০ থেকে ২ হাজার ৩০০ টাকা দামের জিন্স প্যান্ট বিক্রি করছি।’

এমএএস/এনডিএস/এমকেএইচ