দেশজুড়ে

কৃষকের ধান কেটে দিলেন কৃষি অফিসার

নওগাঁর মাঠে মাঠে এখনও প্রায় অর্ধেক পরিমাণ জমির ধান কাটার অভাবে পড়ে আছে। শ্রমিক সংকটের কারণে মজুরি ঊর্ধ্বমুখী। অপরদিকে বাজারে ধানের দাম নিম্নমুখী। শ্রমিক সংকট এবং ধানের দাম কম হওয়ায় কৃষকরা হতাশা হয়ে পড়েছেন। চোখে যেন সরষে ফুল দেখছেন কৃষকরা।

Advertisement

শ্রমিক সংকট মেটাতে নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগে নিয়েছেন কৃষি অফিসার সেলিম রেজা। তিনি যেসব গরীব ও অসহায় কৃষক শ্রমিকের দাম মেটাতে অক্ষম তাদের ধান কাটতে স্থানীয় বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতা চেয়েছেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে মাঠে গিয়ে শনিবার সকালে দেড় বিঘা জমির ধান কেটেছেন ধামইরহাটের সামাজিক সংগঠন ‘মানব সেবা সংগঠন, ‘দেখাবো আলোর পথ’ ও ‘আস্থার হাত’ এবং বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

উপজেলার বিহারী নগর গ্রামের দরিদ্র কৃষক আজাহারের জমির ধান কেটে দিয়েছেন কৃষি অফিসার সেলিম রেজা নিজেও। তিনি গায়ে টি-শার্ট এবং গলায় গামছা জড়িয়ে একটি কাস্তে নিয়ে জমিতে গিয়ে কৃষকের ধান কেটে দেন। তার ডাকে সাড়া দিয়ে প্রধান শিক্ষক ও স্বেচ্ছাসেবী এ সংগঠনগুলো ধান কাটায় অংশ নেন।

‘যারা শ্রমিকের অভাবে বাড়িতে বসে আছেন, শ্রমিকের অপেক্ষা না থেকে মাঠে আসুন, নিজের ধান নিজে কাটুন’ স্লোগানে আগামী এক সপ্তাহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গরীব ও দরিদ্র কৃষকের ধান কেটে দেয়া হবে এসব সংগঠনের পক্ষ থেকে।

Advertisement

স্বেচ্ছাসেবী আবু সাইদ নামে এক যুবক বলেন, এমনিতেই কৃষকদের লোকসানের শিকার হতে হচ্ছে। বর্গাচাষি এবং গরীব কৃষক যারা আছেন তারা টাকার বিনিময়ে শ্রমিক দিয়ে ধান কাটতে পারছেন না। তাই গরীব ও অসহায় কৃষকদের আমাদের সংগঠনের পক্ষ থেকে এক সপ্তাহ ধান কেটে দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। উপজেলার সব কৃষককের ধান কাটা হয়ত আমাদের পক্ষে সম্ভব হবে না। কিন্তু তারপরও আমরা চেষ্টা করব যতটুকু পারা যায়।

মানব সেবা সংগঠনের সভাপতি রাসেল আহমেদ বলেন, আমরা কৃষি অফিসারের ডাকে সাড়া দিয়ে আমাদের সংগঠনের ১০ জন সদস্য স্বেচ্ছায় কৃষকদের ধান কাটার কাজে অংশ নিয়েছি। মূলত যারা শ্রমিকদের টাকা দিয়ে ধান কাটতে অক্ষম তাদের ধানই কেটে দেয়া হচ্ছে।

আস্থার হাত স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের আহ্বায়ক অরিন্দম মাহমুদ বলেন, বাজারে ধানের দাম কম, শ্রমিকের দাম বেশি। এক বিঘা ধান কাটতে প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা লাগছে। যা গরীব কৃষকদের পক্ষে সম্ভব নয়। আমার সংগঠনের পক্ষ থেকে একাত্মতা ঘোষণা করে ২৫ জন যুবক অংশ নিয়ে ওই গরিব কৃষকের ধান কেটে দিয়েছি। এতে করে কৃষকের কিছুটা সাশ্রয় হলো এবং তার উপকার হলো। কৃষকদের সহযোগিতা করতে আমাদের এমন উদ্যোগ অব্যাহত থাকবে।

ভুক্তভোগী কৃষক আজিজার রহমান বলেন, একদিকে শ্রমিক সংকট, অপরদিকে বাজারে ধানের দাম কম। ধানের যে দাম তাতে প্রতিমণ ধানে প্রায় সাড়ে ৩০০ টাকা লোকসান হচ্ছে। শ্রমিকের দাম বেড়ে হয়েছে ৬০০-৭৫০ টাকা। শ্রমিক সংকটের কারণে জমি থেকে ধান কাটতে পারছিলাম না। সংগঠনের স্বেচ্ছাসেবী যুবকরা এসে আমার ধান কেটে দিয়েছেন। অসংখ্য ধন্যবাদ তাদের।

Advertisement

চকময়রাম মডেল উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এসএম খেলাল-ই রব্বানী বলেন, সবচেয়ে বড় সংকট শ্রমিকের। কৃষকের ধান যেন মাঠে পড়ে না থাকে, এ কারণে প্রতীকী হিসেবে সবাইকে অনুরোধ করব আসুন সবাই আমরা মাঠে নামি। কৃষকের পাশে দাঁড়াই। যে যার ধান তুলি, অন্যের ধান তুলতে সহযোগিতা করি। যে যে অবস্থানে আছেন- নিজের ধান নিজে কাটুন। শ্রমিকের জন্য বসে না থেকে সবাই যেন আমরা মাঠে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

ধামইরহাট উপজেলা কৃষি অফিসার সেলিম রেজা বলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে কৃষকরা মাঠ থেকে সোনালী ফসল ধান ঘরে তুলতে পারছেন না। এটা উপলদ্ধি করে কৃষি বিভাগের পক্ষে থেকে ধাইমরহাটের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষক, ছাত্র, সামাজিক সংগঠনসহ সকলকে আহ্বান করেছি- ‘চলুন আমরা মাঠে যাই, কৃষকদের ধান কাটি এবং ধান তুলি।’ আমার ম্যাসেজ হচ্ছে- যারা শ্রমিকের অভাবে বাড়িতে বসে আছেন শ্রমিকের অপেক্ষায় না থেকে মাঠে আসুন। নিজের ধান নিজে কাটুন। মূলত কৃষকদের আগ্রহ বাড়াতে এমন উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আব্বাস আলী/আরএআর/জেআইএম