আন্তর্জাতিক

জলবায়ু পরিবর্তনই সন্তান না নেয়ার কারণ যাদের কাছে

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যেসব নারী ও তরুণ-তরুণী সন্তান না নেয়ার আন্দোলেন শুরু করেছেন তাদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন জার্মানির বাভারিয়া রাজ্যের বাসিন্দা ফেরেনা ব্রুনশভাইগার। এই স্কুল শিক্ষিকা বলছিলেন, ‘আমরা এটা নিয়ে দীর্ঘ সময় গভীরভাবে চিন্তা করেছি। ঘটনাচক্রে জলবায়ু পরিবর্তনই আমার কাছে (সন্তান না নেওয়ার) প্রধান কারণ হিসেবে প্রতীয়মান হয়েছে। অবশ্য আমি অনেক সংগ্রাম করেছি এটা নিয়ে। কারণ, আমরা শিশুদের ভালোবাসি। আমার স্বামীও একজন স্কুল-শিক্ষক। বোধ করি, আমরা সঠিক সিদ্ধান্তই নিয়েছি।’

Advertisement

এভাবে পৃথিবীব্যাপী তরুণ সমাজের একটা অংশের সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে দিচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তন। সর্বোপরি, বিশ্বব্যাপী বন্যা, খরা ও ঝড় থেকে শুরু করে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি ও দারিদ্র্য চিন্তায় ফেলছে তাদের।

বিজ্ঞানীরা ইতোমধ্যে সতর্ক করেছেন, গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমাতে অভূতপূর্ব কোনো পদক্ষেপ না নিলে ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের আরও শত শত মিলিয়ন মানুষ বিপদের সম্মুখীন হবে।

কম সন্তান নেয়া, বিমানে কম চড়া এবং উদ্ভিদজাতীয় খাবার খেয়ে উন্নত বিশ্বের মানুষ ব্যক্তিগতভাবে গ্রিনহাউজ গ্যাস নিঃসরণ কমাতে পারেন বলে বিজ্ঞানীদের ভাষ্য।

Advertisement

স্কুল-শিক্ষিকা ব্রুনশভাইগারের মতো অন্যরাও মনে করেন, এমতাবস্থায় পৃথিবীর জনসংখ্যা আর বাড়ানো এক ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা। কারণ, ২০১৭ সালের ৭৬০ কোটি থেকে ২০৫০ সালে বিশ্বের জনসংখ্যা ১০০০ কোটি হতে চলেছে, যা কার্বন নিঃসরণ ও সম্পদের সমস্যা বাড়ানোর বড় কারণ হবে।

আবার কেউ বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন তাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে বিপদের সম্মুখীন করবে। মিউজিশিয়ান ও অ্যাক্টিভিস্ট ব্লাইথ পেপিনোরও তাই মত। সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা গভীরভাবে পোষণ করলেও দুই বছর আগে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি নিয়ে গবেষণা প্রতিবেদন পড়ার পর মত পাল্টে যায় তার।

যেসব নারী সন্তান জন্ম না দেয়ার অঙ্গীকার করেছেন, এখন তাদের নিয়ে ‘বার্থস্ট্রাইক’ নামে বিশ্বব্যাপী একটি ক্যাম্পেইন গ্রুপ চালু করেছেন পেপিনো। ‘জীববৈচিত্র্যে সংকটের ভয়াবহতা এবং সরকারি উদ্যোগের অভাবের’ ফলে নারীরা এরকম সিদ্ধান্ত নিচ্ছে বলে তার ভাষ্য।

পেপিনো বলেন, ‘আমরা নিরাপদ ভবিষ্যতের দিকে এগোচ্ছি না। এটা যখন ভাবি, তখন আমি বুঝতে পারি সন্তান নেয়া বুদ্ধিমানের কাজ নয়।’

Advertisement

যদিও এটাকে মায়েদের জন্য এক ধরনের অবিচার বলে মানছেন তিনি। কারণ, সন্তান না নেয়া ‘বড় ধরনের একাকীত্বেরই’ ব্যাপার।

পেপিনো বলেন, ‘বার্থস্ট্রাইক’ প্রচারাভিযানের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে সহজে ‘দৃষ্টিগ্রাহ্য’ বার্তাই দিতে চাচ্ছেন তারা, যা তাদের আন্দোলনে আবেগের সংযোগও তৈরি করছে।

জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষেত্রে উদ্বেগ জন্মহারে কতটা প্রভাব ফেলছে, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো উপাত্ত পাওয়া যায়নি। তবে ২০১৭ সালের এক হিসাব থেকে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি নারীর গড় সন্তানের সংখ্যা ১ দশমিক ৮-এ নেমে এসেছে, যা ইতিহাসের সর্বনিম্ন। অন্য উচ্চ ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোতে জন্মহার স্থিতিশীল থাকতে কিংবা কমতে দেখা গেছে।

জনসংখ্যার ওঠানামার সুনির্দিষ্ট কারণ জানা কষ্টকর হলেও জলবায়ু পরিবর্তন যে এক্ষেত্রে প্রভাব ফেলছে তা স্পষ্ট। কারণ, একটা বড় অংশের মানুষ এর ফলে সন্তান নেয়ার ক্ষেত্রে ভীতি কিংবা অনীহার কথা বলছেন।

যুক্তরাষ্ট্রে ১ হাজার লোকের মধ্যে চালানো এক জরিপে দেখা যায়, ১৮ থেকে ৪৪ বছর বয়সীদের মধ্যে এক-তৃতীয়াংশের বেশি নারী সন্তান জন্মদানের সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনকে বিবেচনায় নিচ্ছেন। আরেক গবেষণায় দেখা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে উদ্বেগ থাকলেও ৩৩ শতাংশ বলছেন, এরপরও তারা সন্তান নেবেন এবং পরিবার চালু রাখবেন।

সূত্র : ডয়েচে ভেলে

জেডএ/জেআইএম