খেলাধুলা

‘লাকি সেভেন’ : আরেকটি হতাশা নাকি আক্ষেপ ঘোচানোর শুরু?

ইংরেজিতে ‘৭’ সংখ্যাটিকে ধরা হয় শুভ বা কল্যাণকর হিসেবে, অন্যদিকে ১৩ সংখ্যাটিকে বিবেচনা করা হয় অশুভ হিসেবে। এ চিন্তা থেকে ‘লাকি সেভেন’ এবং ‘আনলাকি থার্টিন’ শব্দগুচ্ছ দুটি সবার মুখে মুখে শোনা যায় প্রতিনিয়তই।

Advertisement

তেমনই এক ‘লাকি সেভেনে’র দোরগোড়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। তবে এই ‘শুভ সাত’ আসলেই টাইগারদের জন্য শুভ হবে কিনা তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে শুক্রবার ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল ম্যাচ শেষ হওয়া পর্যন্ত। কারণ ম্যাচের ফলের ওপরই ঠিক হবে সাত আসলেই লাকি নাকি বাংলাদেশ দলের জন্য আনলাকি হিসেবেই থেকে যাবে।

এখনো পর্যন্ত আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বহুজাতিক টুর্নামেন্ট বা সিরিজে ছয়টি ফাইনাল খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ দল। আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে আজ (শুক্রবার) নিজেদের সপ্তম ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি হবে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। লক্ষ্য থাকবে একটাই, প্রথমবারের মতো শিরোপা জিতে আগের ছয়বারের হতাশা দূর করা।

হ্যাঁ, অবাক হলেও সত্যি ২০০৯ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত সময়ে ভিন্ন ভিন্ন ৬টি টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেও শিরোপায় হাত রাখা হয়নি বাংলাদেশের। একটি ফাইনাল বাদে প্রতিবারই ফিরতে হয়েছে শিরোপা নিঃশ্বাস ছোঁয়া দূরত্ব থেকে। এবার ঘুচবে কি সেই আক্ষেপ? লাকি সেভেনকে আসলে লাকি করতে পারবে কি বাংলাদেশ? নাকি হতাশার কাঁটা গলায় বিঁধবে আরও একবার?

Advertisement

এতসব প্রশ্নের উত্তর জানা যাবে আগামী ১২ ঘণ্টার মধ্যেই। তার আগে ঘুরে আসা যাক আগের ছয় ফাইনালের স্মৃতির পাতা থেকে:

ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০০৯

স্বাগতিক বাংলাদেশ, জিম্বাবুয়ে ও শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে হয় এ ত্রিদেশীয় সিরিজ। রবিন লিগে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বোনাস পয়েন্টসহ দাপুটে এক জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। সবার আশা ছিলো আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান বাংলাদেশ হয়তো মাত করবে ফাইনালেও।

Advertisement

সে লক্ষ্যে বেশ ভালোভাবেই এগুচ্ছিলো টাইগাররা। নিজেরা আগে ব্যাট করে ১৫২ রানে অলআউট হলেও, বল হাতে ঠিকই লঙ্কানদের চেপে ধরেন মাশরাফি-নাজমুলরা। মাত্র ৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে তারা। সেখান থেকে কুমার সাঙ্গাকারা ৫৯ রানের ইনিংস খেললেও ১১৪ রানেই ৮ উইকেট হারিয়ে ফেলে লঙ্কানরা।

তখনো তাদের জয়ের জন্য প্রয়োজন ৩৫ রান। এই ৩৫ রানের মধ্যে একাই ৩৩ রান করে ফেলেন অফস্পিনার মুত্তিয়াহ মুরালিধরন। মাত্র ১৬ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কার মারে খেলা এ ইনিংসে বাংলাদেশকে হতাশার সাগরে ডোবান দশ নম্বরে ব্যাট করতে নামা এ স্পিন জাদুকর।

এশিয়া কাপ, ২০১২

শচিন টেন্ডুলকারের সেঞ্চুরির সেঞ্চুরি করার দিন শক্তিশালী ভারতকে এবং পরের ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দুর্দান্ত জয়ে প্রথমবারের মতো এশিয়া কাপের ফাইনালে ওঠে বাংলাদেশ। যেখানে তাদের প্রতিপক্ষ ছিলো পাকিস্তান।

ফাইনাল ম্যাচে মাশরাফি, সাকিব, রাজ্জাকদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে পাকিস্তানিদের ২৩৬ রানে বেঁধে রাখে বাংলাদেশ। লিগপর্বে ভারতের করা ২৮৯ কিংবা লঙ্কানদের বিপক্ষে ২১০ রানের তাড়ায় সহজ জয় পাওয়ায়, এ লক্ষ্য খুব একটা কঠিন ছিল না টাইগারদের জন্য।

তামিম ইকবালের টানা চতুর্থ সেঞ্চুরি এবং সাকিব আল হাসানের আসরে তৃতীয় ফিফটিতে লক্ষ্যে দিকেই ছুটছিলো বাংলাদেশ। কিন্তু শেষপর্যন্ত শেষ ওভারে গিয়ে মাত্র ২ রানের জন্য শিরোপা জিততে ব্যর্থ হয় বাংলাদেশ। ম্যাচশেষে সাকিব, মুশফিকদের কান্না এখনো স্মৃতির পাতায় অমলিন হয়ে রয়েছে টাইগার ভক্ত-সমর্থকদের মনে।

এশিয়া কাপ টি-টোয়েন্টি, ২০১৬

সেবার ঘরের মাঠের এশিয়া কাপে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে এবং পাকিস্তানের বিপক্ষে রোমাঞ্চকর এক জয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে বাংলাদেশ। যেখানে প্রতিপক্ষ ছিলো ভারত। তবে বৃষ্টির কারণে ১৫ ওভারে নেমে আসা সে ম্যাচে খুব বেশি কিছু করার ছিলো না টাইগারদের।

তবু মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের ১৩ বলে ৩৩ রানের ঝড়ো ইনিংসে ১৫ ওভারে ১২০ রানের সংগ্রহ দাঁড় করায় বাংলাদেশ। বিরাট কোহলি এবং মহেন্দ্র সিং ধোনির ব্যাটে ভর ৭ বল আগেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় ভারত।

ত্রিদেশীয় সিরিজ, ২০১৮

২০০৯ সালের মতোই শ্রীলঙ্কা এবং জিম্বাবুয়েকে নিয়ে ঘরের মাঠে ত্রিদেশীয় সিরিজ আয়োজন করে বাংলাদেশ। এ সিরিজের শুরুর তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষকে পাত্তাই দেয়নি বাংলাদেশ। অথচ শেষের দুই ম্যাচে গুবলেট পাকিয়ে শিরোপা হাতছাড়া হয় মাশরাফির দলের।

লিগপর্বে লঙ্কানদের বিপক্ষে মাত্র ৮২ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। পরে ফাইনাল ম্যাচে ব্যর্থ হয় লঙ্কানদের করা মাত্র ২২১ রানের সংগ্রহ তাড়া করতে। নিজেরা ১৪২ রানে অলআউট হয়ে টানা চতুর্থ ফাইনাল হারের স্বাদগ্রহণ করে বাংলাদেশ।

নিদাহাস ট্রফি, ২০১৮

শ্রীলঙ্কার স্বাধীনতার সত্তর বছর উপলক্ষ্যে ভারত ও বাংলাদেশকে নিয়ে নিদাহাস ট্রফি টি-টোয়েন্টি সিরিজের আয়োজন করে তারা। সেখানে বাংলাদেশের কাছে পরপর দুই ম্যাচ হেরে ফাইনাল ম্যাচে দর্শকে পরিণত হয় স্বাগতিকরা। ভারতের সঙ্গে ফাইনালের লড়াইয়ে নামে বাংলাদেশ।

ম্যাচে আগে ব্যাট করে সাব্বির রহমানের ৫০ বলে ৭৭ রানের ইনিংসে ভর করে ১৬৬ রানের সংগ্রহ পায় বাংলাদেশ। যা তাড়া করতে নেমে কখনোই তেমন সুবিধা করতে পারেনি ভারত। সাকিব, মোস্তাফিজ, রুবেলদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে বেশ চাপেই পড়ে যায় তারা।

তবে ইনিংসের ১৯তম ওভারে সেই রুবেলের ওভারেই ২২ রান তুলে বাংলাদেশের মুঠোয় থাকা ম্যাচ নিজেদের দিকে নিয়ে নেয় ভারত। তবু শেষ ওভারে প্রয়োজন ছিল ১২ রান। শেষ ওভারের প্রথম ৫ বলে ৭ রান খরচ করেন সৌম্য সরকার। শেষ বলে বাকি থাকা ৫ রানের চাহিদায় এক্সট্রা কভারের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকিয়ে বাংলাদেশের স্বপ্ন চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দেন দীনেশ কার্তিক।

এশিয়া কাপ, ২০১৮

আবুধাবিতে হওয়া সবশেষ এশিয়া কাপের আসরে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার মতো দলকে পেছনে ফেলে ২০১৮ সালে তৃতীয়বারের মতো কোনো ফাইনালে পদার্পন করে টাইগাররা। যেখানে ফের তাদের প্রতিপক্ষ দাঁড়ায় ভারত।

এ ম্যাচেও দুর্দান্ত লড়াই হয় দুই দলের মাঝে। আগে ব্যাট করে লিটন কুমার দাসের সেঞ্চুরির পরেও বাকি ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় ২২২ রানের বেশি করতে পারেনি বাংলাদেশ।

তবে এত অল্প পুঁজি নিয়েও মোস্তাফিজ, রুবেল, মাশরাফিদের অসাধারণ বোলিংয়ে ভারতকে চাপে রাখে বাংলাদেশ। কিন্তু এবার টাইগারদের স্বপ্নের হন্তারক হিসেবে আবির্ভুত হন চোট পেয়ে মাঠে বাইরে গিয়ে, পুনরায় ব্যাট করতে নামা কেদার যাদভ। তিনি বল হাতে গুরুত্বপূর্ণ ২টি উইকেট নেয়ার পর ব্যাট হাতে ম্যাচের শেষ বলে জিতিয়ে দেন দলকে। ফলে এক বছরে তৃতীয় এবং সবমিলিয়ে ষষ্ঠ ফাইনাল হারের তীব্র যন্ত্রণা পায় বাংলাদেশ।

এসএএস/এমএস