দেশজুড়ে

দুই সরকারি প্রতিষ্ঠানের বিরোধে আটকা উন্নয়নের ৪৬ লাখ টাকা

মৌলভীবাজারকে পর্যটন জেলা হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ পর্যটন বোর্ড। এই এলাকার পর্যটনের উন্নয়নের জন্য নানা কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আবেদনের প্রেক্ষিতে উপজেলার মাধবপুর লেকের উন্নয়নের জন্য সরকার সাড়ে ৪৬ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয় ২০১৮-১৯ অর্থ বছরে। কিন্তু সরকারি চা কোম্পানি ‘ন্যাশনাল টি কোম্পানি’র (এনটিসি) আপত্তির কারণে কাজ করা যাচ্ছে না। ফলে ফেরৎ যাওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে বরাদ্দের সাড়ে ৪৬ লাখ টাকা।

Advertisement

কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ন্যাশনাল টি কোম্পানির (এনটিসি) মালিকানাধীন মাধবপুর লেকের সৌন্দর্য উপভোগ করতে প্রতিদিন বহু পর্যটকের আগমন ঘটে এবং ছুটির দিনে যার সংখ্যা হাজার ছাড়িয়ে যায়। সরকারি চা বাগানের ভেতর লেকের অবস্থান হলেও মাধবপুর চা বাগান কর্তৃপক্ষ একটি টোকেনের মাধ্যমে পর্যটক বহনকারীদের যানবাহন প্রবেশকালে টাকা আদায় করেন।

কিন্তু পর্যটকদের জন্য কোনো সুযোগ সুবিধা নেই। চা বাগানের চারদিকের উঁচু টিলার মধ্যবর্তী প্রায় ১ বর্গ কিলোমিটার আঁকাবাঁকা অপরূপ সুন্দর মাধবপুর লেকে আসা পর্যটকদের জন্য একটি ছোট ছাউনী ও একটি ছোট টয়লেট ছাড়া আর কোনো ব্যবস্থা নেই। তাছাড়া সঠিকভাবে লেকটি পরিচর্চা ও আগত পর্যটকদের তদারকিরও কোনো ব্যবস্থা নেই।

তাই পর্যটকদের আরো আকৃষ্ট করে তাদের সেবা ও নিরাপত্তাদানে কমলগঞ্জ উপজেলা প্রশাসনের আবেদনে বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশন মাধবপুর লেক উন্নয়নে সাড়ে ৪৬ লাখ টাকার প্রকল্প গ্রহণ করে। গৃহীত প্রকল্পটির কাজ শুরুর উদ্যোগ নিলে মাধবপুর চা বাগান ব্যবস্থাপক সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বলেছিলেন এনটিসির বোর্ডের অনুমতি ছাড়া এ কাজ করা যাবে না। এ অবস্থায় কমলগঞ্জে নতুন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদানের ৩ মাস পর এনটিসি কর্তৃপক্ষ জানায় তাদের বোর্ড মাধবপুর লেক উন্নয়নে অনুমতি দেয়নি। তাই লেক উন্নয়নে পর্যটন কর্পোরেশন কোনো কাজ করতে পারবে না।

Advertisement

মাধবপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পুস্প কুমার কানু জানান, এনটিসিও সরকারি প্রতিষ্ঠান আর পর্যটন কর্পোরেশনও সরকারি প্রতিষ্ঠান। আর সরকারি জমি বন্দোবস্ত নিয়ে চা বাগান করা হয়েছে। এখানে মাধবপুর লেকের পর্যটন উন্নয়নে একটি প্রকল্প গ্রহণ করা হলেও কিভাবে এনটিসি আপত্তি জানায়? তিনি মনে করেন জেলা প্রশাসক চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে মাধবপুর লেকের উন্নয়নের কাজ করতে পারেন।

মাধবপুর চা বাগানের ব্যবস্থাপক মুরাদ চৌধুরী মুঠোফোনে বলেন, তিনি ছুটিতে আছেন। এ সম্পর্কে তিনি কিছু বলতে পারবেন না।

পরবর্তীতে মুঠোফোনে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনটিসির এক কর্মকর্তা বলেন, এলাকাটি চা বাগানভুক্ত বলে এনটিসির বোর্ডের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই স্থানীয়ভাবে মাধবপুর লেক উন্নয়ন প্রকল্পের কাজে তাদের আপত্তি রয়েছে।

কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক এনটিসির আপত্তির সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, এ আপত্তি প্রত্যাহার না করলে পর্যটন কর্পোরেশনের বরাদ্দকৃত সাড়ে ৪৬ লাখ টাকা ফেরত যাবে। লেকটিকে জেলা প্রশাসনভুক্ত করতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ে নতুন করে পত্র পাঠানো হয়েছে।

Advertisement

জমিটা সরকারের আর এনটিসি বন্দোবস্ত নিয়ে চা প্লান্টেশন করেছে মাত্র। এক সময় এনটিসিকে তাদের আপত্তি প্রত্যাহার করতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।

রিপন দে/এফএ/এমএস