হাইকোর্ট ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) উদ্দেশ্য করে বলেছেন, ওয়াসার ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) বলেছেন শতকরা একশ ভাগ পিওর পানি উৎপাদন করেন। এটা যেমন সত্য কথা, তেমনি এটাও ঠিক যে আপনার দায়িত্ব বাসা পর্যন্ত পিওর ও নিরাপদ পানি পৌঁছানো। কারণ আপনার সংস্থার নাম ওয়াসা।
Advertisement
হাইকোর্ট ওয়াসার এমডিকে আরও বলেন, পানি খুবই স্পর্শকাতর। এর মাধ্যমে রোগ-জীবাণু ছড়ায় বেশি।
ওয়াসার এমডি স্বাক্ষরিত স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো প্রতিবেদন উপস্থাপনের পর বৃহস্পতিবার হাইকোর্টের বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি মো. খায়রুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন।
এর আগে ঢাকা ওয়াসার পানি কোন কোন এলাকায় দূষিত এবং পানির নমুনা পরীক্ষায় কত টাকা খরচ হবে- তা জানিয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় হাইকোর্টে প্রতিবেদন পাঠায়।
Advertisement
এই প্রতিবেদন বুধবার (১৫ মে) অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ে পৌঁছেছে। আজ বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদন হাইকোর্ট বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়। আদালতে আজ সংশ্লিষ্ট বেঞ্চের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোতাহার হোসেন সাজু তা উপস্থাপন করেন।
এদিকে ওয়াসার পানি পরীক্ষা সংক্রান্ত খরচ ও পরীক্ষা পদ্ধতি বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অনুজীব বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. সাবিতা রিজওয়ানা রহমানের বক্তব্য জানতে আগামী ২১ মে তাকে আদালতে উপস্থিত হতে অনুরোধ জানিয়েছেন হাইকোর্ট।
আজ আদালতে ওয়াসার পক্ষে আইনজীবী ছিলেন এম মাসুম এবং রিট আবেদনকারীপক্ষে আইনজীবী ছিলেন মো. তানভির আহমেদ।
প্রতিবেদন উপস্থাপন করে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আদালতকে বলেন, ১০টি জোনের ময়লাপানি প্রবণ এলাকা থেকে ৩৫৫টি নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এরপর তা তিনটি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করা হবে। ফলে মোট নমুনার সংখ্যা দাঁড়াবে ১০৬৫টি। এই ১০৬৫টি নমুনা থেকে রোগজীবাণু ও ভৌত রাসায়নিক সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে খরচ হবে ৭৫ লাখ ৬১ হাজার ৫শ টাকা।
Advertisement
এ সময় আদালত বলেন, এই বাজেট দেখে মনে হচ্ছে ওরা পানি বিশুদ্ধ করে আমাদের খাওয়াবে। আদালত বলেন, আমরা মনে করেছিলাম, ওয়াসার ১১টি জোন থেকে ২২টি নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করলেই হবে। আমরা তো মনে করি যে ২৯২টি অভিযোগের মধ্যে কয়েকটি পরীক্ষা করলেই প্রমাণিত হবে। আমরা সাধারণ জ্ঞান থেকে বিষয়টি চিন্তা করছি।
হাইকোর্ট বলেন, এই প্রতিবেদন দেখে বোঝা যাচ্ছে না যে একই নমুনা আলাদা ল্যাবে পরীক্ষা করা হবে কি না। তবে এটাও ঠিক যে আমরা টেকনিক্যাল বিষয়টি জানি না। তাই বিশেষজ্ঞদের মতামত জানা দরকার। এরপরই আদেশ দেয়া যথাযথ হবে।
রিট আবেদনকারী আইনজীবী তানভির আহমেদ বলেন, ওয়াসার এমডির স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনেই বলা হচ্ছে- ৫৯টি এলাকার পানি ময়লা। তাহলে উনি কীভাবে বলেন যে, ওয়াসার পানি শতভাগ পিওর।
আইনজীবী আদালতে আরও বলেন, যারা ওয়াসার পানি নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন তাদের হয়রানি করা হচ্ছে। তাই আশঙ্কা করছি, পানি পরীক্ষা কমিটির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারেন। এ কারণে হয়তো কমিটি সঠিক প্রতিবেদন দিতে পারবে না। তাই ওয়াসার এমডি যাতে কমিটির ওপর কোনো প্রভাব বিস্তার করতে না পারেন সে জন্য আদেশ চাচ্ছি।
এ সময় আদালত বলেন, এই মুহূর্তে আদেশ দিচ্ছি না। তাছাড়া আমরা মনে করি না যে কমিটির ওপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেন। কারণ কমিটির সদস্যরা সমাজের সম্মানিত ব্যক্তি।
গত বছর ৬ নভেম্বর হাইকোর্টের দেয়া এক নির্দেশে ঢাকা ওয়াসার পানি পরীক্ষার জন্য চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) এবং আইসিডিডিআরবির প্রতিনিধির সমন্বয়ে এ কমিটি গঠন করা হয়। এই কমিটির নামের তালিকা গত ১৮ এপ্রিল অ্যাটর্নি জেনারেল কার্যালয়ে পাঠায় মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মোহাম্মাদ সাঈদ-উদ-রহমান স্বাক্ষরিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নমুনা সংগ্রহ করে তার নির্দিষ্ট পরীক্ষার পর বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন তৈরি করতে একটি তহবিলের পাশাপাশি ল্যাবরেটরিসহ ঢাকা ওয়াসার সামগ্রিক প্রচেষ্টা দরকার। এসব কাজের জন্য যদি তহবিল গঠনও করা হয় এবং বিরতিহীনভাবে ওয়াসার তিনটি ল্যাবরেটরিতে একযোগে কাজ করলে এ প্রতিবেদন তৈরি করতে কমপক্ষে চার মাস সময় প্রয়োজন।
এই প্রতিবেদন উপস্থাপন করে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী আদালতকে জানান, কমিটি একটি কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করেছে।
এর আগে, ২০১৮ সালের ১১ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষ অনিরাপদ উৎসের পানি পান করে। ৪১ শতাংশ পানির নিরাপদ উৎসগুলোতে রয়েছে ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া। ১৩ শতাংশ পানিতে রয়েছে আর্সেনিক। পাইপের মাধ্যমে সরবরাহ করা পানিতে এই ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি সবচেয়ে বেশি, প্রায় ৮২ শতাংশ।
ওই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে পত্র-পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে সেই প্রতিবেদন যুক্ত করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন আইনজীবী তানভীর আহমেদ।
এফএইচ/বিএ