খেলাধুলা

এবার সেই শিরোপা খরা কাটবে টাইগারদের?

হোক তা ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, ইতিহাস ও পরিসংখ্যান পরিষ্কার জানাচ্ছে- বাংলাদেশ কখনো আইসিসির পূর্নাঙ্গ সদস্য দেশ তথা টেস্ট খেলিয়ে দলগুলোর সঙ্গে খেলে কোন আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্টের শিরোপা জিততে পারেনি।

Advertisement

এশিয়া কাপ, অস্ট্রেলেশিয়া কাপ, বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আর বিশ্ব টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্ট তো অনেক দূরে, আজ অবধি আইসিসির পূর্নাঙ্গ সদস্যদের সঙ্গে কোন তিন জাতি টুর্নামেন্টেও চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি টাইগাররা।

ইতিহাস সাক্ষী দিচ্ছে ১৯৯৭ সালের এপ্রিলে মালয়েশিয়ার রাজধানী কুয়ালালামপুরে কেনিয়াকে ফাইনালে হারিয়ে আইসিসির চ্যাম্পিয়ন হবার পর বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যতগুলো তিন জাতি টুনামেন্ট খেলেছে, তার মাত্র একটিতে বিজয়ী হয়েছে।

তবে আগেই বলে রাখা ভাল, সেটা আন্তর্জাতিক স্বীকৃত কোন ত্রিদেশীয় সিরিজ নয়। সে সিরিজের রেকর্ড ও পরিসংখ্যান ধর্তব্য হলেও যেহেতু প্রতিপক্ষ ছিল আইসিসির সহযোগি সদস্য দেশ, তাই টুর্নামেন্টটি আন্তর্জাতিক ওয়ানডে আসর হিসেবে মর্যাদা পায়নি।

Advertisement

এবার যেমন বিশ্বকাপ মাঠে গড়ানোর ঠিক ১২ দিন আগে আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মুখোমুখি মাশরাফির দল, কাকতালীয়ভাবে ঠিক একযুগ আগে ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে বিশ্বকাপের ঠিক আগে আইসিসির দুই সহযোগি সদস্য কানাডা আর বারমুডার সঙ্গে তিন জাতি আসরের চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল হাবিবুল বাশারের দল।

সময়কাল ছিল ২০০৭ সালের ফেব্রয়ারী মাসে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে তিন জাতি আসরে আইসিসির দুই সহযোগি সদস্য বারমুডা আর কানাডার বিপক্ষে জিতেই বিশ্বকাপ খেলতে গিয়েছিল টাইগাররা। সে আসরে বারমুডাকে ৮ উইকেটে আর কানাডাকে ১৩ রানে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। তবে সেটা আন্তর্জাতিক আসরের ট্রফি জয় বলে গ্রহণযোগ্য হয়নি। কারণ বাকি দুই দল বারমুডা আর কানাডা আইসিসির সহযোগি সদস্য।

এছাড়া সেই ১৯৯৭ সাল থেকে তিন জাতি টুর্নামেন্ট খেলে আসছে বাংলাদেশ। প্রথম তিন জাতি টুর্নামেন্টে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ ছিল ১৯৯৭ সালের অক্টোবরে, জিম্বাবুয়ের মাটিতে। স্বাগতিক কেনিয়া আর জিম্বাবুয়ে ছিল বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ। ফাইনালে ওঠা বহু দূরে একটি ম্যাচও জিততে না পারা টাইগাররা দেশে ফেরত এসেছিল সব ম্যাচ হেরে।

এরপর ১৯৯৮ সালের জানুয়ারী মাসে ঘরের মাঠে স্বাধীনতার ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে ভারত, পাকিস্তানের সাথে ইন্ডিপেন্ডেন্টস কাপে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বাংলাদেশ। খুব স্বাভাবিকভাবেই দুই প্রবল প্রতিপক্ষের সঙ্গে পেরে ওঠেনি টাইগারররা। ভারত আর পাকিস্তানই ফাইনাল খেলে। সে আসরেও বাংলাদেশের জয় অধরাই ছিল।

Advertisement

একই বছর মানে ১৯৯৮ সালের মে মাসে ভারতের মাটিতে স্বাগতিক ভারত আর কেনিয়ার সাথে একটি ট্রাইনেশন খেলতে যায় বাংলাদেশ। সেখানেই ১৭ মে কেনিয়াকে ৬ উইকেটে হারিয়ে প্রথম ওয়ানডে জয়ের স্বাদ পায় বাংলাদেশ। তারপরও ফাইনাল খেলা সম্ভব হয়নি। ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ ছিল কেনিয়া।

সেটাই শেষ নয়। এরপর ১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলতে যাবার আগে ঘরের মাটিতে তিন জাতি আসরের আয়োজক হয়েও ফাইনালে দর্শকের আসনে ছিল বাংলাদেশ। সেটা ছিল ১৯৯৯ সালের মার্চে, বিশ্বকাপের আগে ঢাকায় মেরিল কাপে কেনিয়া ও জিম্বাবুয়ের মধ্যে তিন জাতি আসরে বাংলাদেশ সব ম্যাচে হার মানে।

ঐ আসরের ফিরতি পর্বে ২৫ মার্চ জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করেন মেহরাব হোসেন অপি (১১৬ বলে ১০১)। একই ম্যাচে অধর্শতক উপহার দিয়েছিলেন আরেক ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ (১১৭ বলে ৬৮) ও আকরাম খান খেলেন ৪৪ বলে ৫০ রানের ইনিংস।

এরপর ২০০৩ সালে ঘরের মাঠে আবার তিন জাতি আসর টিভিএস কাপে ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার সঙ্গে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। সেখানেও ফাইনাল ওঠা বহু দূরে জয়ের নাগালই পায়নি বাংলাদেশ। তার দুইবছর পর ২০০৫ সালের জুনে ইংল্যান্ডের মাটিতে ন্যাটওয়েস্ট তিন জাতি টুর্নামেন্টে স্বাগতিক ইংল্যান্ড আর অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি হয় টাইগাররা।

ফাইনাল খেলতে না পারলেও সে আসরে ১৮ জুন কার্ডিফে মোহাম্মদ আশরাফুলের অনবদ্য শতরানে অজিদের ৫ উইকেটে হারিয়ে হৈ চৈ ফেলে দেয়ার কাজটি করে টাইগাররা। তিন বছর পর ২০০৮ সালের জুন মাসে আবার দেশের মাটিতে কিটপ্লাই কাপে ভারত ও পাকিস্তানের সাথে তিন জাতি আসরে আবার সব ম্যাচ হেরে বসা। ভারত ও পাকিস্তান ফাইনাল খেলে।

২০০৯ সালের জানুয়ারী ঢাকার শেরে বাংলায় আরও একটি তিন জাতি আসর খেলে বাংলাদেশ। প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলঙ্কা আর জিম্বাবুয়ে। সেই আসরে প্রথম জিম্বাবুয়েকে পিছনে ফেলে ফাইনাল খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু রুদ্ধশ্বাস ফাইনালে সুবিধাজনক অবস্থায় থেকেও শেষ রক্ষা হয়নি টাইগারদের। শ্রীলঙ্কা জয়ী হয় ২ উইকেটে ।

২০১০ সালের জানুয়ারী দেশের মাটিতে আরও এক তিন জাতি আসরে ফাইনালে ওঠা বহু দূরে একটি ম্যাচও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। ফাইনাল খেলেছিল ভারত আর শ্রীলঙ্কা। এর পর ২০১৭ সালের মার্চে আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্টেও শিরোপা অধরা। চ্যাম্পিয়ন নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ অবশ্য ঐ আসরে একবার আইরিশদের (৮ উইকেটে) আর একবার নিউজিল্যান্ডকে (৫ উইকেটে) হারিয়েছিল।

সর্বশেষ ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে দেশের মাটিতে তিন জাতি আসরে জিম্বাবুয়েকে দুই বার আর শ্রীলঙ্কাকে একবার হারিয়ে দাপটে ফাইনালে পৌঁছেও শেষ হাসি হাসতে পারেনি মাশরাফির দল। ট্রফি জিতে নেয় লঙ্কানরা, ফাইনালে টাইগারদের ৭৯ রানে হারিয়ে। মোদ্দা কথা ট্রফি জয়ের আকাল।

এবার আবার আয়ারল্যান্ডে তিন জাতি টুর্নামেন্টের ফাইনালে বাংলাদেশ। তাও যেনতেনভাবে নয় । একদম দৌর্দন্ড প্রতাপে খেলে। আয়ারল্যান্ডের সাথে রবিন লিগের প্রথম ম্যাচটি ধুয়ে মুছে গেছে বৃষ্টিতে। তারপর আইরিশদের একবার (৬ উইকেটে) আর ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার (৮ ও ৫ উইকেটে) হারিয়ে অপরাজিত অবস্থায় ফাইনালে মাশরাফির দল।

ব্যাটিং, বোলিং আর ফিল্ডিং ও ক্যাচিং- সব শাখায় টাইগাররা এ আসরে অন্য দুই প্রতিপক্ষর চেয়ে ভাল নৈপুণ্য উপহার দিয়েছে। টপ অর্ডারে তামিম, সৌম্য, সাকিব, লিটন আর মিডল অর্ডারে মুশফিক ও মাহমুদউল্লাহ নিয়মিত রান করেছেন। যখন প্রয়োজন, সে প্রয়োজন মিটিয়েছেন তারা। একই অবস্থা বোলিংয়েও। অধিনায়ক মাশরাফি, সাইফউদ্দীন আর আবু জায়েদ রাহীরা দরকারের সময় ভাইটাল ব্রেকথ্রু উপহার দিচ্ছেন।

এছাড়া গতকাল (বুধবার) আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে একজোড়া ক্যাচ হাতছাড়া হলেও আগের দুই ম্যাচে সাব্বির, সাকিব ও সৌম্যরা বেশ কঠিন ক্যাচ সহজ করে ধরেছেন। সব মিলে টিম বাংলাদেশ আছে ফর্মের চূড়োয়। বাড়তি কিছু করার দরকার নেই।

এ আসরে আগের তিন ম্যাচে মাশরাফির দল যে ক্রিকেটটা খেলেছে, তা খেলতে পারলেই ব্যস, হয়ত অধরা সাফল্য ধরা দেবে। কারণ আগের তিন ম্যাচের চালচিত্র ও ফল পরিষ্কার বলে দিয়েছে গেইল, আন্দ্রে রাসেলসহ বিশ্বকাপ স্কোয়াডের ছয় জন ক্রিকেটার ছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের এই দলে চেয়ে বাংলাদেশ ঢের এগিয়ে।

কাজেই নিজেরা খুব বেশী খারাপ না খেললে আর একটি খারাপ দিন না আসলে প্রথম কোন তিন জাতি টুর্নামেন্টের শিরোপা জেতার পরিষ্কার হাতছানি টাইগারদের সামনে।

সব ইতিবাচক অবস্থার মাঝে হয়ত একটি নেতিবাচক দিক থাকতে পারে। ইনজুরি খুব জটিল বা গুরুতর না হলেও সাইড স্ট্রেইনে আক্রান্ত সাকিব আল হাসানের আগামী কালকের ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।

যদিও কৌশলগত কারণে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানায়নি। তবে ভেতরের খবর হলো, এখন সাকিবের মত চ্যাম্পিয়ন পারফরমারের ইনজুরি নিয়ে কোনরকম ঝুঁকি নিতে নারাজ বাংলাদেশ ম্যানেজমেন্ট। সম্ভবত সাকিবকে এক সপ্তাহের পূর্নাঙ্গ বিশ্রাম দেয়া হবে।

এআরবি/এসএএস/এমকেএইচ