ভারতের লোকসভা নির্বাচনের ৭ম দফা অর্থাৎ শেষ দফা ভোটের ৭২ ঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশনের জোড়া নির্দেশনায় পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক উত্তাপ চরমে পৌঁছেছে।
Advertisement
একটি নির্দেশনায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগ সিআইডির প্রধান রাজীব কুমারকে তাদের পদ থেকে সরিয়ে দিতে বলেছে নির্বাচন কমিশন। অন্য নির্দেশনায় সপ্তম দফা ভোটে নয়টি কেন্দ্রের প্রচারণা শেষের সময়সীমা শুক্রবার বিকেল পাঁচটার পরিবর্তে বৃহস্পতিবার রাত দশটায় এগিয়ে আনা হয়েছে।
সংবিধানের ৩২৪ অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে প্রচারের সময় কমানোর নজির পশ্চিমবঙ্গেতো নয়ই পুরো ভারতের কোথাও এর আগে দেখা যায়নি। কমিশন সূত্রেও বলা হচ্ছে এমন পদক্ষেপ সম্ভবত এই প্রথম।
কমিশনের এই পদক্ষেপকে ‘রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র’ হিসেবে দেখছে রাজ্যের শাসক দল। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, বিজেপির সভাপতি অমিত শাহের নির্দেশেই নির্বাচন কমিশন এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছে তৃণমূল। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী এবং তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই সিদ্ধান্ত অগণতান্ত্রিক, অসাংবিধানিক এবং অনৈতিক।
Advertisement
কমিশনের সিদ্ধান্তের নিন্দা করেছে কংগ্রেসও। রণদীপ সিং সরজেওয়ালা এক টুইট বার্তায় বলেছেন, গণতন্ত্রের ইতিহাসে এটি একটি কালো দিন।
বুধবার কালীঘাটে নিজের বাড়িতে ডাকা সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে কমিশনের তীব্র সমালোচনা করেছেন মমতা। তিনি বলেন, সাহস থাকলে কমিশন আজ সন্ধ্যা থেকেই প্রচার বন্ধ করে দিতে পারত। করেনি, কারণ বৃহস্পতিবার বাংলায় নরেন্দ্র মোদির দু’টি সভা আছে। তার সভা শেষ হলে সকলের প্রচার শেষ করে দিতে হবে?
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাজ্যে মোদির প্রথম সভা বিকাল পৌনে ৫টায় মথুরাপুরে। দ্বিতীয় সভা দমদমে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। আর কমিশনের নির্দেশে প্রচারের সময় শেষ হচ্ছে রাত ১০টায়।
সংবিধানের ৩২৪ ধারা প্রয়োগ করে প্রচারের সময়সীমা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন রাজ্য সরকারের আইনজীবী বিশ্বজিৎ দেব। তিনি বলেন, ৩২৪ ধারায় নির্বাচনের সার্বিক দেখভালের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ১২৬ ধারায় মনোনয়ন পেশের পরে প্রচারের জন্য প্রার্থীদের নির্দিষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে। সেই অধিকার কিভাবে খর্ব করা সম্ভব? এটা পুরোপুরি বেআইনি এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সাংবিধানিক ক্ষমতা অপব্যবহারের নজির।
Advertisement
কমিশনের সচিব রাকেশ কুমারের সাক্ষর করা নির্দেশনায় এডিজি সিআইডি রাজীব কুমারকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে বৃহস্পতিবার সকাল দশটার মধ্যে দিল্লিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে রিপোর্ট করতে বলা হয়েছে। তবে এর পেছনে কোনও কারণ দেখানো হয়নি। অপরদিকে, স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্যকে অপসারণের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, তিনি রাজ্যের সিইও-কে চিঠি লিখে নির্দেশ দিয়ে নির্বাচনী ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করেছেন।
বুধবার সন্ধ্যায় নির্বাচন সদন থেকে বার্তা আসে মুখ্যসচিবের কাছে। তিনিই আপাতত স্বরাষ্ট্রসচিবের দায়িত্ব সামলাবেন। আর অত্রি কাজ করবেন পর্যটনমন্ত্রী হিসেবে। রাজীব এবং অত্রির অপসারণ কার্যকর করে বুধবার রাত দশটার মধ্যে কমিশনে রিপোর্ট পাঠানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে মুখ্যসচিবকে।
টিটিএন/জেআইএম