ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্যপণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি তালিকা তৈরি ও জড়িতদের বিরুদ্ধে গৃহীত আইনি পদক্ষেপ প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে পুনরায় নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
Advertisement
আদালতের শুনানিতে বিএসটিআইয়ের আইনজীবী বলেন, আমরা দুধ এবং দই বাজারজাতের জন্য অনুমতি দিয়েছি। আমরা এ বিষয়টি তদারকি করি। তবে, পুরোপুরি প্রতিবেদন জমা দিতে সময় দরকার।
আদালত বলেন, কত সময় দরকার, কমপক্ষে এক মাস। আদালত বলেন, কোন কোন কোম্পানির তরল দুধে ভেজাল ও ক্ষতিকর পদার্থ আছে তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে জানতে চাই। এটা এলার্মিং ইস্যু বলেও মন্তব্য করেছেন হাইকোর্ট।
আদালত শুনানির সময় বিএসটিআইয়ের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে বলেন, বিএসটিআইয়ের বিবেকে কি দংশন করে না। কীভাবে ভেজাল দুধগুলো বাজারে সয়লাব করছে।
Advertisement
পরে কোন কোন কোম্পানির তরল দুধে ভেজাল ও ক্ষতিকর পদার্থ আছে সে বিষয়ে পরিপূর্ণ প্রতিবেদন চেয়েছেন হাইকোর্ট। এক মাস সময় চেয়েছে বিএসটিআই।
এ বিষয়ে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই’কে ২৩ জুন ওই প্রতিবেদন আদালতে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়াও ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির (এনএফএসএল) করা গবেষণার স্বপক্ষে ব্যাখ্যা দিতে ল্যাবটির প্রধান প্রফেসর ড. শাহনিলা ফেরদৌসীকে ২১ মে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।
মামলা সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলে সময় আবেদনের পর বুধবার বিচারপতি মো. নজরুল ইসলাম তালুকদার ও বিচারপতি কে এম হাফিজুল আলমের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন।
আদালতে আজ বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ ফরিদুল ইসলাম। বিএসটিআইয়ের পক্ষে ছিলেন ব্যারিস্টার সরকার এম আর হাসান (মামুন)। দুদকের পক্ষে আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক ও সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল হেলেনা বেগম চায়না।
Advertisement
এর আগে অ্যান্টিবায়োটিক, কীটনাশক ও সিসা দিয়ে দুধ ও দই প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নাম দাখিল করতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআইকে প্রতিবেদন ও তার ওপর শুনানির জন্য আজ দিন নির্ধারণ রেখেছিলেন হাইকোর্ট।
তবে এদিন (১৫ মে) প্রতিষ্ঠানগুলোর নামসহ প্রতিবেদন দাখিলের জন্য সময় চাওয়া হয়। এসময় দুদকের আইনজীবী সৈয়দ মামুন মাহবুব, নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই জড়িত কোম্পানির নাম না দেয়ায় দুদক কাজ শুরু করতে পারছে না বলে আদালতকে অবহিত করেন।
আদালত শুনানিকালে বলেন, মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেয়া হবে না। মানবস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকারক অনুজীবসহ দুধ-দই উৎপাদনকারীদের শাস্তি পেতে হবে। সাধারণ মানুষকেও এ বিষয়ে সচেতন করতে হবে। গবেষণা রিপোর্ট ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করতে হবে।
এরপর ন্যাশনাল ফুড সেফটি ল্যাবরেটরির প্রধান প্রফেসর ড. শাহনিলা ফেরদৌসীকে দুধ ও দইয়ের ওপর করা গবেষণা রিপোর্টটি ১৫ দিনের মধ্যে আদালতে জমা দেয়ার নির্দেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই’কে ক্ষতিকারক দুধ ও দইয়ের প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের নামসহ তাদের গৃহীত কার্যক্রম সম্পর্কে বিস্তারিত প্রতিবেদন ২৩ জুন আদালতে দাখিল করতে আদেশ দেন।
প্রসঙ্গত, এর আগে গত ১১ ফেব্রুয়ারি কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পত্রিকার ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, ‘দেশে পুষ্টির অন্যতম প্রধান জোগান হিসেবে বিবেচিত গরুর দুধ বা দুগ্ধজাত খাদ্যে এবার মিলেছে মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতিকর নানা উপাদান। ১০ ফেব্রুয়ারি এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে সরকারের জাতীয় নিরাপদ খাদ্য গবেষণাগারের প্রতিবেদনে। জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের সভাকক্ষে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীসহ অন্য কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে।’
জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়,‘গরুর খোলা দুধে অণুজীবের সহনীয় মাত্রা সর্বোচ্চ ৪ থাকার কথা থাকলেও পাওয়া গেছে ৭.৬৬ পর্যন্ত।’ এরপর সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আনেন আইনজীবী মামুন মাহবুব।
পরে আদালত দুধে সিসা মিশ্রণকারীদের শাস্তির আওতায় আনার ব্যর্থতা কেন বেআইনি হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত। এছাড়াও রুলে দুগ্ধজাত খাবারে ভেজাল প্রতিরোধে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন বেআইনি ও অবৈধ ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। পাশাপাশি খাদ্যে ভেজালের সঙ্গে জড়িতদের আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদণ্ড) কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়।
পাশাপাশি আদালত ঢাকাসহ সারা দেশের বাজারে কোন কোন কোম্পানির দুধ ও দুগ্ধজাত খাদ্য পণ্যে কী পরিমাণ ব্যাকটেরিয়া, কীটনাশক এবং সিসা মেশানো রয়েছে, তা নিরূপণ করে একটি জরিপ প্রতিবেদন তৈরির নির্দেশ দেন। জাতীয় নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টদের এ আদেশ বাস্তবায়ন করতে বলা হয়।
যার ধারাবাহিকতায় হাইকোর্টের নির্দেশের পর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের সদস্য মো. মাহবুব কবিরকে আহ্বায়ক করে ১৬ সদস্যের কমিটি গঠিত হয়। এরপর ওই কমিটিকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।
এফএইচ/জেএইচ/এমএস