আইন-আদালত

রাজধানীর বায়ুদূষণ : দুই সিটির প্রধান নির্বাহীর হাজিরা আজ

ঢাকা মহানগরীর বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সকাল-বিকেল রাস্তায় সঠিকভাবে পানি ছিটানো হচ্ছে কি না তার ব্যাখ্যা দিতে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে হাইকোর্টে উপস্থিত হওয়ার নির্ধারিত দিন আজ।

Advertisement

বুধবার হাইকোর্টের বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান এবং বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চে উপস্থিত হয়ে এ বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দেয়ার কথা রয়েছে। বিষয়টি জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার।

এর আগে গত ৫মে ঢাকা মহানগরীর বায়ুদূষণ রোধে উচ্চ আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে সকাল-বিকেল পানি ছিটানোর সঠিক তথ্য প্রতিবেদনে ব্যাখ্যা না করায় ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহীকে তলব করে আদেশ দেন হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট বেঞ্চ। আজ নির্ধারিত দিন (১৫ মে) হাইকোর্টে হাজির হয়ে এ বিষয়ে তাদের ব্যাখ্যা দিতে হবে।

আদালতের আদেশ থাকার পরও রাজধানীজুড়ে বায়ুদূষণ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণের সঠিক তথ্য প্রতিবেদনে উঠে না আসায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন হাইকোর্ট। পরে তাদের তলব করে আদেশ দেন।

Advertisement

আদালতে ওই দিন রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল ব্যারিস্টার এবিএম আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার। সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী নুরুন্নাহার।

আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার সাংবাদিকদের বলেন, সিটি কর্পোরেশনের ওপর ডাইরেকশন ছিল দিনে ওনারা দুইবার করে পানি ছিটাবেন যেন ধুলাটা যেকোনো জায়গায় সংক্রমিত হতে না পারে। কিন্তু ওনারা যে কাগজপত্র দাখিল করেছেন সেখানে ওনাদের যে রুটিন ওয়ার্ক আছে, আদালত সন্তুষ্ট হতে পারেন নাই। যে রুটিন ওয়ার্ক অনুযায়ী, কাজগুলো সম্পাদন হয়েছে কি না- সে বিষয়ে সম্পাদন করা কাজগুলোর কাগজপত্র দাখিলে ওনারা ব্যর্থ হয়েছেন। এ কারণে আজ (১৫ মে) তাদের স্বশীররে হাজির হয়ে ব্যাখ্যা দিতে হবে।

প্রসঙ্গত, ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে গত ২১ জানুয়ারি গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে গত ২৭ জানুয়ারি হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় রিট করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোনসেদ। পরদিন রিটের শুনানি নিয়ে রাজধানীর বায়ুদূষণ বন্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। রুল জারির পাশাপাশি বায়ুদূষণ রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে অন্তর্বর্তীকালীন আদেশও দেন।

একইসঙ্গে যেসব এলাকায় উন্নয়ন ও সংস্কার কাজ চলছে এবং যেসব এলাকা ধুলাবালি প্রবণ, যেসব এলাকায় ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে দিনে দুইবার পানি ছিটাতে দুই সিটির মেয়র ও নির্বাহীকে নির্দেশ দেয়া হয়। ১৫ দিনের মধ্যে রাজধানীর যেসব এলাকায় উন্নয়ন কর্মকাণ্ড চলছে যেসব এলাকা ঘেরাও করে পরের দুই সপ্তাহের মধ্যে এ বিষয়ে আদালতকে অবহিত করতে নির্দেশ দেয়া হয়।

Advertisement

এ ছাড়াও পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালক ও ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী কর্মকর্তাকে এই আদেশ পালন করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে বলা হয়, যার ধারাবাহিকতায় মামলাটি পুনরায় শুনানিকালে আদালত রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ না নেয়ায় হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

এরপর গত ১৩ মার্চ ঢাকার বায়ুদূষণের মাত্রা পরিমাপ করে এবং দূষণ রোধে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, তা প্রতিবেদন আকারে দাখিল করতে পরিবেশ অধিদফতরের মহাপরিচালককে নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত।

গত ২৮ জানুয়ারি মনজিল মোরসেদ বলেন, পরিবেশ আইনের অধীনে ১৯৯৭ সালে যে বিধিমালা হয়েছে, সেখানে বায়ুতে ক্ষতিকর উপাদানের মাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। এ ছাড়াও চলমান বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজের ওয়ার্ক অর্ডারে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণের শর্ত উল্লেখ থাকলেও তারা তা মানছেন না। এ কারণে ভয়াবহ বায়ুদূষণের শিকার হচ্ছে ঢাকা মহানগরীর লাখ লাখ মানুষ।

এ আইনজীবী বলেন, সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বেঁচে থাকা মানুষের মৌলিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত। এভাবে বায়ুদূষণ ঘটিয়ে মানুষের বেঁচে থাকাকেই দুর্বিষহ করে তুলছে। সংবিধানের ৩২ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আইন ব্যতীত জীবন ও ব্যক্তি-স্বাধীনতা হইতে কোনো ব্যক্তিকে বঞ্চিত করা যাইবে না।

এফএইচ/জেডএ/জেআইএম